Share on WhatsApp Share on Telegram

শিক্ষার উপাদান গুলি কি কি | 4 Major Factors of Education

Join Our Channels

শিক্ষা হলো শিশুর জীবনব্যাপী ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদান পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষাকে কার্যকরী করার জন্য শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান (Factors of Education) বর্তমান।

আধুনিক প্রথাগত শিক্ষা বা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করলে শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান পরিলক্ষিত হয়। কারণ নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ের ফলে শিশুর শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়ে থাকে।

শিক্ষার সংজ্ঞা দাও | Define Education

শিক্ষা হল সতত পরিবর্তনশীল ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শিক্ষা মাধ্যমে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়ে থাকে। তাই যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুকে সমাজ উপযোগী করে বা জীবন উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় তাকে শিক্ষা বলে।

শিক্ষার সংজ্ঞা হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন – শিক্ষা হল শিশুর মধ্যে যে অন্তর্নিহিত সত্তা আগে থেকে বিদ্যমান তার বহিঃপ্রকাশ।

আবার, শিক্ষার সংজ্ঞা হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গান্ধীজী বলেছেন – শিক্ষা হল শিশুর দেহ, মন ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের প্রক্রিয়া।

শিক্ষার উপাদান | Factors of Education

শিক্ষা হল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের প্রক্রিয়া। শিক্ষা প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপাদান বর্তমান। অর্থাৎ যে সমস্ত উপাদান শিক্ষাকে প্রভাবিত করে, তাকে শিক্ষার উপাদান হিসাবে গণ্য করা হয়। শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদান বর্তমান।

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষার উপাদান গুলি বা শিক্ষার উপাদান গুলি (Factors of Education) নিম্নে আলোচনা করা হল –

1. শিশু বা শিক্ষার্থী | Learner: The Center of Education

শিক্ষার অন্যতম মৌলিক ও মানবিক উপাদান হল শিশু বা শিক্ষার্থী। কারণ শিক্ষার্থী ছাড়া কোনো শিক্ষা ব্যবস্থাকে কল্পনা করা যায় না। তাই আধুনিক শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষায় (Child / Learner-centered education) প্রথম ও প্রধান শিক্ষার উপাদান হলো শিশু বা শিক্ষার্থী।

আধুনিক শিক্ষা হলো শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুর চাহিদা, আগ্রহ ও প্রবণতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছে। তাই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুকে শিক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পরিগণিত করা হয়। অর্থাৎ শিশু হলো সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, আগ্রহ ও প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। এটি তাকে দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের সময় বিকাশের জন্য এবং সামাজিক অগ্রগতি বজায় রাখার জন্য শিক্ষার বিশেষ উপাদান হল শিশু বা শিক্ষার্থী। আধুনিক অর্থে শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে সহজাত গুণাবলীর বিকাশ সাধনে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। তাই শিক্ষার সমগ্র অংশ জুড়ে রয়েছে শিশু বা শিক্ষার্থী।

2. শিক্ষক | Teacher: The Facilitator of Learning

শিক্ষার উপাদান হিসাবে শিশু বা শিক্ষার্থী যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি শিক্ষার দ্বিতীয় ও অন্যতম উপাদান হলো শিক্ষক। কারণ শিক্ষক ছাড়া কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। অর্থাৎ শিক্ষক শুধু পাঠদানই করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা, অনুপ্রেরণা ও মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান করেন।

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা হল (Role of teacher in education) বন্ধু, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শক (Friend, Philosopher and Guider)-এর। শিক্ষকের সাহায্য ব্যতীত শিক্ষার্থীর পক্ষে জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থী যে পরিবেশ থেকে জ্ঞান অর্জন করুক না কেন সেই পরিবেশের একটি অংশ হল শিক্ষক।

শিক্ষক শব্দটি শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যেখান থেকে জ্ঞান অর্জন করে সেটি হলো তার শিক্ষক। সেখানে তার পিতা-মাতা, বা গৃহে শিক্ষক, বা গুরুজন, বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রকৃতি প্রভৃতি হল শিশুর শিক্ষক বা জ্ঞানার্জনের মাধ্যম।

প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত যে কোন শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষকের হস্তক্ষেপে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভবপর হয়েছে। তাই শিক্ষককে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কারন শিক্ষকই পারেন সমস্ত জাতিকে সুশিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসা।

প্রাচীনকালে শিক্ষক মহাশয় গুরু হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আধুনিককালে সেটি পরিমার্জিত হয়ে শিক্ষক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

সুতরাং সমাজের ভিত্তি স্থাপন করতে এবং শিশুকে উপযুক্ত শিক্ষায় মাধ্যমে শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার উপাদান হিসেবে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

3. পাঠক্রম | Curriculum: Blueprint of the Educational Journey

পাঠক্রম হল শিক্ষার তৃতীয় এবং অন্যতম উপাদান। পাঠক্রম শিক্ষার্থীকে শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তাই আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠক্রম শিক্ষার (Curriculum in school education) অন্যতম উপাদান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। পাঠক্রমকে বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সংঘটিত হতে পারে না।

তাই বর্তমানকালে শিক্ষাবিদগণ পাঠক্রমকে শিক্ষার একটি প্রয়োজনীয় এবং আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করেছেন। আবার অনেক শিক্ষাবিদ পাঠক্রমকে আধুনিক শিক্ষার হৃদপিণ্ড হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

তাই শিক্ষাবিদ কানিংহাম পাঠক্রম সম্পর্কে বলেছেন – পাঠক্রম হল শিক্ষকের হাতিয়ার যা দিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের আদর্শ অনুযায়ী শিশুকে গঠন করেন।

তাই শিক্ষার লক্ষ্যে শিশুকে সঠিক সময়ে পৌঁছে দিতে পাঠক্রম একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাঠক্রম ব্যতীত শিক্ষার যাবতীয় কর্মকাণ্ড সফলভাবে ও যথার্থভাবে পরিচালিত করা সম্ভবপর নয়।

সুতরাং শিক্ষার যে সমস্ত উপাদানের প্রভাবে শিক্ষাদান কার্য যথাযথভাবে কার্যকর হয় সেই সমস্ত উপাদানের মধ্যে অন্যতম উপাদান হিসেবে পাঠক্রম বিশেষ পরিচিত। তাই পাঠক্রম শিক্ষার কাঠামো নির্ধারণ করে এবং শিক্ষার্থীর মানসিক ও সামাজিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

4. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | Educational Institution or Environment: Enabler of Effective Learning

শিক্ষার সর্বশেষ এবং চতুর্থ উপাদান টি হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে বিদ্যালয়, কলেজ বা মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতিকে বোঝায়। শিক্ষার কাজকে সফল ও সার্থক করে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ (learning environment in classroom) ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত শিক্ষাদান কার্য পরিচালিত করা সম্ভব নয়। কারণ শূন্যস্থানে শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করা যায় না। তাই আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রধান উপাদান হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

তাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জন ডিউই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেছেন – বিদ্যালয় হল সরল, আদর্শ ও বিশুদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যম।

সুতরাং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য বা শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি মাধ্যম প্রয়োজন। আর শিক্ষার এই মাধ্যমটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামে অধিক পরিচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার অন্যান্য উপাদানগুলিকে সক্রিয় করে তোলে।

তাই আদর্শ শিক্ষামূলক পরিবেশ শিক্ষাকে বা শিক্ষা প্রক্রিয়াকে সফল করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের পরিবেশের বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবেশের উৎকর্ষতার সঙ্গে শিক্ষার কার্যকারিতা বিশেষভাবে নির্ভর করে থাকে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার চারটি উপাদান বা শিক্ষার উপাদানগুলি একে অপরের মধ্যে পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। কোনো শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুকে ছাড়া যেমন শিক্ষাকে কল্পনা করা যায় না তেমনি ভাবে শিক্ষক পাঠক্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপূর্ণতা আশা করা যায় না।

তাই শিক্ষার উপাদানগুলি যে-কোনো শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ করে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বাস্তবায়ন ও শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

গ্রন্থপঞ্জি

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিক্ষার প্রধান উপাদান কোনটি

উত্তর – শিক্ষার প্রধান উপাদান হল শিশু বা শিক্ষার্থী (Child / Learner)

প্রশ্ন – শিক্ষার কয়টি উপাদান ও কি কি

উত্তর – শিক্ষার প্রধান চারটি উপাদান বর্তমান। শিক্ষার এই চারটি উপাদান গুলি হল – শিশু বার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠক্রম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্ন – শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষার উপাদান গুলি লেখো

উত্তর – যে শিক্ষায় শিশুর আগ্রহ, প্রবণতা, সামর্থ প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়, তাকে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বলে। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষার উপাদান গুলি হল চারটি। যথা – শিশু বা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠক্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলো উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আরোও পড়ুন

3.9/5 - (20 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

2 thoughts on “শিক্ষার উপাদান গুলি কি কি | 4 Major Factors of Education”

Leave a Comment

close