সামাজিক সচলতা হল কোন সমাজের ব্যক্তির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পদমর্যাদা কত পরিবর্তন। আর এই পদমর্যাদাগত পরিবর্তন বা সামাজিক সচলতার উপাদান (Factors of Social Mobility) বহুবিধ ভাবে পরিলক্ষিত হয়।
সামাজিক সচলতা বা সামাজিক গতিশীলতা হল সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রতিটি পরিবর্তনশীল সমাজের ব্যক্তির মধ্যে এই গতিশীলতা বা সচলতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এর ফলে ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা সর্বোপরি সমাজের উন্নয়ন সংঘটিত হয়ে থাকে। এখানে সামাজিক সচলতার উপাদান (Factors of Social Mobility) সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
সামাজিক সচলতা বা সামাজিক গতিশীলতা (Social Mobility)
সামাজিক সচলতা বা সামাজিক গতিশীলতা ব্যক্তিজীবনের একটি অপরিহার্য বিষয়। সামাজিক সচলতা হল ব্যক্তির পদমর্যাদাগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সামাজিক সচলতার ফলে ব্যক্তি সমাজে প্রতিষ্ঠিত লাভ করে ও মান সম্মান বা প্রতিপত্তি লাভ করে থাকে। তাই সামাজিক সচলতা ব্যক্তিকে ও সমাজকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম করে তোলে।
যে সমাজে পেশাগত দিক থেকে সচলতা যত বেশি পরিলক্ষিত হয় সেই সমাজ ততো বেশি উন্নতির দিকে এগিয়ে থাকে। উদাহরণস্বর বলা যায় – কোনো সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পেশাগত সুযোগ সুবিধা বা চাকুরীর সুযোগ সুবিধা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
সামাজিক সচলতার উপাদান বা সামাজিক সচলতার নির্ধারক (Factors of Social Mobility)
সামাজিক সচলতা বা গতিশীলতা পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সামাজিক সচলতার উপাদান বা সামাজিক সচলতার নির্ধারক বা সামাজিক গতিশীলতার উপাদান বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. সামাজিক কাঠামো
সামাজিক সচলতার উপাদান হিসেবে সামাজিক কাঠামোকে গণ্য করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন কাঠামো পরিলক্ষিত হয়। এর উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকে। তাই সামাজিক কাঠামো সামাজিক সচলতা অন্যতম উপাদান।
2. অর্থনৈতিক উপাদান
অর্থনীতি বা টাকাকে বিশ্বের রাজা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। যে সমাজ অর্থনৈতিক দিক থেকে যত বেশি উন্নত সেই সমাজে সামাজিক সচলতা তত বেশি ভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই অর্থনৈতিক উপাদান সামাজিক সচলতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। কারণ অর্থনীতি ছাড়া সভ্যতার চাকা কোনদিন এগিয়ে যাবে না।
3. শিক্ষাগত উপাদান
শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ সমাজ উন্নতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত উপাদান। শিক্ষা ছাড়া কোনো সমাজের কোনো উন্নতি কোনদিনই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাগত উপাদান সামাজিক সচলতা উপাদান হিসেবে বিশেষভাবে পরিগণিত হয়।
4. রাজনৈতিক উপাদান
রাজনৈতিক উপাদান সমাজকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব সমাজকে পরিবর্তন করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাই রাজনৈতিক উপাদান সামাজিক সচলতার একটি অন্যতম উপাদান।
5. পেশাগত বা বৃত্তিগত উপাদান
পেশা বা ব্যক্তিগত উপাদান ব্যক্তিকে সমাজে পরিচিতি হতে সহায়তা করে। অর্থাৎ সমাজে বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি পরিলক্ষিত হয়। আবার পেশা অনুযায়ী ব্যক্তির পদমর্যাদা বিচার হয়ে থাকে। যেমন – কৃষকের সন্তান যদি স্কুলের শিক্ষক হয় সেক্ষেত্রে বৃত্তিগত বা পেশাগত উপাদানটি সমাজে ব্যক্তির সামাজিক সচলতার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই সামাজিক সচলতার উপাদান হিসেবে পেশাগত বা ব্যক্তিগত উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
6. সংস্কৃতায়ন
সংস্কৃতায়ন সামাজিক সচলতার উপাদান হিসেবে পরিগণিত হয়। কারণ সংস্কৃতায়ন হল নিচু জাত থেকে উচ্চ jজাতে স্থান পরিবর্তন। অধ্যাপক শ্রীনিবাস সর্বপ্রথম সংস্কৃতায়ন শব্দটি উল্লেখ করেন।
7. আধুনিকীকরণ
আধুনিককরণ সামাজিক সচলতা উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারণ আধুনিকীকরণ এর সাথে সাথে সভ্যতার তথা সমাজব্যবস্থার উন্নতি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সমাজের ব্যক্তিবর্গ যত বেশি কুসংস্কার মুক্ত ও আধুনিক হতে পারবে সমাজে ততো বেশি উন্নতি পরিলক্ষিত হবে।
8. বিশ্বায়ন
বিশ্বায়ন আধুনিক সমাজের একটি অন্যতম দিক। বিশ্বায়নের ফলে সভ্য সমাজের মানুষ সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র বা যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ মানুষের বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ যত বেশি সংঘটিত হবে সামাজিক সচলতা তত বেশি পরিলক্ষিত হবে।
9. পরিব্রাজন
পরিব্রাজন সামাজিক সচলতার বিশেষ উপাদান। প্রাকৃতিক নানা সুযোগ সুবিধা বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। তাছাড়া পেশাগত কারণে এই স্থান পরিবর্তন সূচিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ভারতীয় কোন শিক্ষিত ব্যক্তি যখন কাজের সূত্রে বিদেশে পাড়ি দেয় তখন সেক্ষেত্রে পরিব্রাজনের ফলে সামাজিক সচলতা পরিলক্ষিত হয়।
10. শিল্পায়ন
শিল্পায়ন সামাজিক সচলতার অন্যতম নির্ধারক বা উপাদান। কারণ সামাজিক সচলতা শহরতলিতে বা শিল্প অঞ্চল এলাকাগুলোতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। কারণ এখানে বিভিন্ন পেশার সুযোগ থাকে বা অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগ থাকে। তাই শিল্পায়ন সামাজিক সচলতার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, উপরের উল্লেখিত উপাদানগুলি এককভাবে বা সংঘটিতভাবে সামাজিক সচলতা বা সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তবে সামাজিক সচলতার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা প্রচেষ্টা অনেকাংশে নির্ভরশীল।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্য | সামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ |
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা | শিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা |
তথ্যসূত্র (Reference)
- Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
- Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
- Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
- Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
Publications - Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,
প্রশ্ন – সামাজিক সচলতার নির্ধারক গুলি লেখো।
উত্তর – সামাজিক সচলতা নির্ধারক গুলি হল – অর্থনীতি, শিক্ষা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, ব্যক্তির প্রচেষ্টা, বৃত্তি বা পেশা প্রভৃতি।
আরোও পড়ুন
- যোগাযোগ কাকে বলে | যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য | What is Definition of Communication
- যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান | 8 Essential Components of Communication
- শিক্ষার সমাজতত্ত্বের পরিধি | Scope of Sociology of Education
- সামাজিক স্তরবিন্যাস কি | সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন | Types of Social Stratification
- Social Mobility: সামাজিক সচলতা কাকে বলে | সামাজিক সচলতার বৈশিষ্ট্য
- Types of Social Mobility: সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ