পাঠক্রমের প্রকারভেদ | Various Types of Curriculum

শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হলো পাঠক্রম। সমাজের ব্যক্তির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক্রমের প্রকারভেদ (Types of Curriculum) বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়।

যে-কোনো শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পাঠক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উপাদান। পাঠক্রম ছাড়া সম্পূর্ণ শিক্ষাদান কার্য ব্যাহত হয়। তাই শিক্ষায় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রথমে পাঠক্রম প্রণয়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে।

পাঠক্রমের প্রকারভেদ | Types of Curriculum

শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠক্রমের প্রয়োগ, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাঠক্রমের প্রকারভেদ বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম

যে পাঠক্রমের মধ্য শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের উপযোগী বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাকে বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম বলে। এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কতগুলি তাত্ত্বিক জ্ঞান আহরণ করে থাকে।

এই ধরনের পাঠক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চাহিদা, আগ্রহ, প্রবণতা প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। আর এই পাঠক্রম শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার নীতি অনুসরণ করে না। এখানে কিছু বিষয় বা বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বিষয়কেন্দ্রিক বা বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক পাঠক্রমের উদাহরণ হল – ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান,গণিত, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি।

2. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সক্রিয়তা মূলক কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে বা বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই প্রকার পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের চাহিদা, আগ্রহ, প্রবণতা প্রভৃতির গুরুত্ব আরোপ করে রচনা করা হয়।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল তার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়ার কমিশন (১৯৫২-৫৩) বলেছেন – কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম কেবলমাত্র শিশুর মানসিক বিকাশ সাধন করে না, বরং এটি শিশুর সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে।

3. জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম

আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ পাঠক্রম হল জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে এই পাঠক্রম বিশেষভাবে উপযোগী। তাই যে পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত তাকে জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলে।

জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উদ্দেশ্য হল – শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশ সাধন, দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক অভিযোজন এর সহায়তা, সৃজনশীলতার বিকাশ প্রভৃতি।

4. অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম

পাঠক্রমের প্রকারভেদ গুলির মধ্যে অন্যতম হল অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম। এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে রচনা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাঠক্রমের বিষয়বস্তুর মধ্যে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা সঞ্চালন করাকে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম বলে।

তাই শিক্ষাবিদগণ বলেন – শিক্ষার পাঠক্রমের উপাদান হবে কতগুলি অভিজ্ঞতা সমন্বয় যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ জীবনে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সমর্থ হবে।

অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রমের উদ্দেশ্য হল – শিক্ষার্থীদের সামাজিক উন্নয়ন, অভিজ্ঞতা ধারাবাহিক পুনর্গঠন, অভিজ্ঞতার সমন্বয় সাধন, শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতি আগ্রহের সঞ্চার ঘটানো প্রভৃতি।

5. অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম

আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পাঠক্রমের একটি অন্যতম প্রকার হল অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম বা সমন্বিত পাঠক্রম। এই পাঠক্রমে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে এমনভাবে সংগঠিত করা হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভ্যাস, কর্ম দক্ষতা এবং জীবনদর্শ গঠন করা যায়।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বসিং বলেছেন – অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম বা সমন্বয়ী পাঠক্রম হলো এমন কতকগুলি প্রতিনিধিত্ব কারী নির্বাচিত অভিজ্ঞতার সমন্বয় যেগুলি শিক্ষার্থীকে বিস্তৃত জ্ঞানের প্রাথমিক ধারণা গঠনে সহায়তা করে থাকে।

তাই বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন বা অনুবন্ধ স্থাপনের মাধ্যমে এই জাতীয় পাঠক্রম রচনার কথা বলেছেন।

অবিচ্ছিন্ন বা সমন্বইয়ী পাঠক্রম কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –

i) মানবিক বিদ্যা – ভাষা ও সাহিত্য,

ii) কলা বিভাগ – নাটক, চারুকলা, নৃত্য, সংগীত,

iii) সমাজ বিজ্ঞান – অর্থনীতি, শিক্ষা বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস প্রভৃতি,

iv) বিজ্ঞান বিভাগ – জীবন বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, উপরে উল্লেখিত পাঠক্রমের প্রকারভেদ গুলি শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। প্রতিটি পাঠক্রমের উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র প্রকৃতির। অর্থাৎ প্রতিটি পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোন না কোন দিকের বিকাশ সাধারন সম্ভবপর হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি পাঠক্রম শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – ভারতের বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম কে তৈরি করেন

উত্তর – ভারতের বিদ্যালয়ের পাঠক্রম এনসিইআরটি (NCERT) সংস্থাটি তৈরি করে থাকেন। এই NCERT এর পুরো নাম হল – National Council of Educational Research and Training.

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close