শিশুদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতির জন্ম হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি। এই শিক্ষা পদ্ধতি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Kindergarten Method) যুক্ত পদ্ধতি। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি যেমন – মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতি, প্রকল্প পদ্ধতি, খেলাভিত্তিক শিক্ষার প্রবর্তনের সাথে সাথে শিশুর স্বাধীনতার উপর এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এখানে কিন্ডার গার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি কি এবং কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি কি তা উল্লেখ করা হলো।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি
শিক্ষাক্ষেত্রে শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে অর্থাৎ শিশুর চাহিদা, আগ্রহ, প্রবণতা প্রভৃতি অনুযায়ী শিক্ষাদান করার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য যে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং যে শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করেন তাকে কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি বলেন।
বিশিষ্টজার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ১৮৩৭ সালে ব্ল্যাংকেনবুর্গ (Blankenberg) গ্রামে শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য কিন্ডারগার্ডেন বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
কিন্ডারগার্টেন শব্দটি জার্মান শব্দ। যার অর্থ হল – ‘শিশু উদ্যান’ বা শিশুদের জন্য বাগান।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Kindergarten Method
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নের উল্লেখ করা হল –
1. শিশু কেন্দ্রিকতা
শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশুকেন্দ্রিকতা বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমান শিক্ষা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে এই শিশু কেন্দ্রিকতার নীতি অনুসৃত হয়ে থাকে।
অর্থাৎ শিশুর আগ্রহ, প্রবণতা ও চাহিদা অনুযায়ী শিখন শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল শিশু কেন্দ্রিকতা।
2. আত্ম সক্রিয়তা মূলক
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি আত্ম সক্রিয়তা মূলক শিক্ষা পদ্ধতি। এখানে শিশু আত্ম সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে। যেমন – বিভিন্ন খেলা ও কাজ, গান, ছড়া আবৃত্তি প্রভৃতি।
3. ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিশুদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বাইরের জগতের বা প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে। তাই ফ্রয়েবেল শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
4. কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা পদ্ধতি
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি কর্মকেন্দ্রিকতা বা কর্মকেন্দ্রিক প্রকৃতির শিক্ষা পদ্ধতি। এই শিক্ষায় শিশুদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেমন – খেলা, অংকন, হাতের কাজ, বাক্স তৈরি প্রভৃতি।
5. সৃজন ধর্মী
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল এটি সৃজন ধর্মী প্রকৃতির। অর্থাৎ এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন হয়ে থাকে।
তাই ফ্রয়েবেল বলেছেন – শিশুকে যদি বিভিন্ন বস্তু সামগ্রী দেওয়া হয়, তবে সে নতুন কিছু রূপ দেয়ার চেষ্টা করে।
তাছাড়া ফ্রয়েবেল শিশুদের সৃজনশীলতার বিকাশের ক্ষেত্রে কাদা, বালি, কাঠের গুঁড়ো, কাগজ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরির করতে শেখানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
6. স্বাধীনতা ও আনন্দ
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে স্বাধীনতা ও আনন্দের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা পদ্ধতিতে স্বাধীনতা ও আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে।
7. সমাজ ধর্মী
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল এটি সমাজ ধর্মী শিক্ষা পদ্ধতি। অর্থাৎ এই শিক্ষায় শিশুদের দলগত বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সহযোগিতার মনোভাব, সহানুভূতির মনোভাব প্রভৃতি সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন সম্ভবপর হয়।
8. আত্ম বিকাশের উপযোগী
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিকাশের উপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি। এই শিক্ষায় বিভিন্ন খেলা ও কাজের মধ্য দিয়ে শিশুরা আত্ম বিকাশের পথের সন্ধান পায়।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেলের অনবদ্য সৃষ্টি। যেটি আধুনিক কালে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পদ্ধতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয়। তা সত্ত্বেও আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি সারা পৃথিবী জুড়ে বিশেষভাবে সমাদৃত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র (References)
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
- Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
- Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
- Internet Sources
প্রশ্ন – কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির দুটি বৈশিষ্ট্য
উত্তর – কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির দুটি বৈশিষ্ট্য হল – i) এই শিক্ষা আত্ম সক্রিয়তা মূলক এবং ii) এই শিক্ষা পদ্ধতি কর্মকেন্দ্রিক ও শিশু কেন্দ্রিক প্রকৃতির।
প্রশ্ন – কিন্ডারগার্টেন শব্দের অর্থ কী
উত্তর – কিন্ডারগার্টেন শব্দটি জার্মান শব্দ। যার অর্থ হল – ‘শিশু উদ্যান’ বা শিশুদের জন্য বাগান।
আরোও পড়ুন
- পেস্তালৎসী শিক্ষা দর্শন | Pestalozzi Contribution to Education
- ইভান ইলিচের শিক্ষাদর্শন ও শিক্ষাচিন্তা | Ivan Illich Educational Philosophy
- ভগিনী নিবেদিতার শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা সংস্কার | Role of Sister Nivedita in Educational Reforms
- সমাজ সংস্কারক হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদান | Contribution of Begum Rokeya as a Social Reformer
- নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান | Contribution of Begum Rokeya on Women Education
- স্বামী বিবেকানন্দের মানুষ গড়ার শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাটি ব্যাখ্যা করো | Man Making Education