আধুনিক পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবেশের বিভিন্ন নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্যতম জলন্ত সমস্যা হল বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)।
বিশ্ব উষ্ণায়ন | Global Warming
বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) বলতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। সাধারণত মানুষের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের কারণে মানুষ বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপ করে থাকে, যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে থাকে। যেমন – শহরায়ন, নগরায়ন, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, গাড়ি থেকে নিঃসৃত দূষিত পদার্থ ও বিষাক্ত ধোঁয়া প্রকৃতি।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে গত এক দশকে তাপমাত্রা 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতিসহ পরিবেশের ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে।
Causes of Global Warming
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ | causes of global warming
সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা বিশ্ব উষ্ণায়নের কোনো একটি সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বিশ্ব উষ্ণায়ন সংঘটিত হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ গুলি এখানে আলোচনা করা হলো।
শিল্পায়ন
শিল্প বিপ্লবের ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে শিল্পায়নের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন কলকারখানা ও বিভিন্ন এলাকায় শিল্পাঞ্চল তৈরি করা হয়েছে। যা বিশ্ব উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে। বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, যেমন – CO2, NO2, SOx প্রভৃতি বিশ্ব উষ্ণায়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করছে।
নগরায়ন
শিল্পায়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি সাধনে নগরায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গ্রামীণ পরিবেশ বিলুপ্ত হয়ে ক্রমশহরের পরিবেশে রূপান্তর হচ্ছে। বহুতল অট্টালিকা, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, যানবাহনের থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া প্রভৃতি বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রাকে দিন দিন বৃদ্ধি করছে।
অরণ্য ধ্বংস বা অতিরিক্ত বৃক্ষছেদন
দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এবং নগরায়নের ফলে যথেষ্ট ভাবে অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। এমনকি বনাঞ্চল ধ্বংস করেও মানুষের বসতি স্থাপন বা অন্যান্য কার্যকলাপের জন্য নগরায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে পরিবেশে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটছে এবং বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বিশ্ব উষ্ণায়নকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করছে।
দাবানল
অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণে বনে বা জঙ্গলের বিশাল এলাকা জুড়ে আগুন জ্বলে যায়। এই ঘটনাকে দাবানল বলে। এই দাবানলের ফলে বায়ুতে অধিক পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস এবং ছাই মিশে যায়। যা সেখানকার আবহাওয়াকে উত্তপ্ত করে তোলে। যা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
অগ্নুৎপাত
অগ্নুৎপাত বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রাকৃতিক কারণ। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেঘলায় একাধিক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। অনেক সময় আগ্নেয়গিরি গুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্যাস, ধূলিকণা এবং উষ্ণতা পরিবেশের ক্ষতি করে এবং Aerosol -এর মাত্রা বৃদ্ধি করে যা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল
আধুনিক বিশ্বে একটি জ্বলন্ত সমস্যা হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। এই বিশ্ব উষ্ণায়ন যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী ভবিষ্যতে পৃথিবীর প্রাণীকুলের উপর ও বাস্তুতন্ত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। অর্থাৎ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মানুষের অস্তিত্ব সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল যে সমস্ত দিক থেকে, পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল –
জলবায়ুর পরিবর্তন
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যার ফলে ঋতু বৈচিত্র্য, বৃষ্টিপাতের বন্টনের প্রভাব বা অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি, খরা, তুষারপাত প্রভৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মানুষ সহ প্রাণীকুলের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ অধিক উষ্ণতার কারণে মানুষের অসুস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের শারীরিক সক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।
মেরু অঞ্চলে বরফের গলন
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বায়ুমন্ডলের গড় তাপমাত্রা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মেরু অঞ্চলে বরফ গলতে শুরু করেছে। এই বিষয়টি বর্তমানে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি তত্ত্ব অনুসারে বিগত ১০০ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় 10cm বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে 2050 সালের মধ্যে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে পৃথিবীর অনেক উপকূলবর্তী অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এর মধ্যে – ভারত, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্ব উষ্ণায়ন বর্তমানে সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। যার ফলে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেছে। কারণ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং সারা পৃথিবীর মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
তথ্যসূত্র (Reference)
- Essentials of Examinations System: Evaluation, Test and Measurement – J.C. Aggarwal – Vikash Publishing House Pvt. Ltd.
- Environment Education
- Global Warming
- Internet Sources
প্রশ্ন – বিশ্ব উষ্ণায়ন কী
উত্তর – বিশ্ব উষ্ণায়ন হল পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি। অর্থাৎ শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে সারা পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ যেমন – নগরায়ন, শহরায়ন, কলকারখানা স্থাপন, অতিরিক্ত যানবাহন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো প্রভৃতির ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন – বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীন হাউস গ্যাসসমূহ কি কি
উত্তর – বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রীন হাউসগ্যাস সমূহ হল কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি।
আরোও পড়ুন
- পরিবেশ বিদ্যা প্রশ্ন ও উত্তর pdf 1st Semester | CVAC | Environmental Studies
- পরিবেশ বিদ্যার প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো | Multidisciplinary Nature of Environmental Studies
- জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ও ফলাফল | Causes of Population Explosion
- পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ | Causes of Environmental Pollution
- বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে | বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও ফলাফল | Global Warming
- ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ | Causes of Ozone Layer Depletion