বর্তমান পৃথিবীতে পরিবেশ দূষণের কুফল হিসাবে ওজোন স্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাই ওজোন স্তরের ধ্বংসের কারণ (Causes of Ozone Layer Depletion) হিসেবে বিভিন্ন দিকগুলিকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
ওজোন স্তর কাকে বলে
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্ট্র্যাটোস্পিয়ারে ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে যে গ্যাসের সর্বাধিক কেন্দ্রীভবন লক্ষ্য করা যায়, তাকে ওজোন স্তর বলে। ডবসন এককে ওজোন স্তরের ঘনত্বকে প্রকাশ করা হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এর ঘনত্ব 250Du, এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলে ওজোন স্তরের ঘনত্ব 350Du, আবার উপমেরু অঞ্চলে ওজোন স্তরের ঘনত্ব 450Du হয়ে থাকে।
ইংরেজি Ozone শব্দটি গ্রিক শব্দ ওজো (Ozo) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল বিশিষ্ট গন্ধ (to smell)। ওজন হল নীল রঙের আঁসটে গন্ধযুক্ত গ্যাসীয় পদার্থ।
আবিষ্কার ও গঠন
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্কোনবি (Schonbein) প্রথম ওজোন গ্যাসের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। একটি ওজন অনুর মধ্যে তিনটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে অক্সিজেন পরমাণুতে O ভেঙে যায় এবং অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেন অনু (O2) -র রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজন উৎপন্ন হয়।
ওজন উৎপন্ন প্রক্রিয়া সমীকরণটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
3O2 (অক্সিজেন) + UV (অতিবেগুনি রশ্মি) = ওজোন (2O3)
ওজোন স্তরের বিনাশের মাত্রা ও সময়
বিজ্ঞানীগণ দীর্ঘদিন গবেষণা করে পর্যবেক্ষণ করেন যে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত যখন দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল চলে তখন আন্টার্কটিকা মহাদেশের উপর ওজন স্তর পাতলা হয়। ওজোন স্তরে গ্যাসের ঘনত্ব 200Du -এর নিচে নেমে গেলে ওজন গহবর সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরা হয়। ১৯৯৩ সালে আন্টার্টিকায় ওজন গ্যাসের ঘনত্ব নেমে আসে 90Du এককে।
ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ | Causes of Ozone Layer Depletion
ওজোন স্তরের ফলে পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি আসতে পারে না। ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে ওজোন স্তর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন। যা মানবজাতির তথা সমস্ত প্রাণীগুলোর কাছে নতুন সমস্যার মুখোমুখি করে তুলেছে।
ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ হিসেবে বিভিন্ন কারণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওজোন স্তর ধ্বংসের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি এখানে উল্লেখ করা হল –
1. ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) গ্যাস
বর্তমানে বিভিন্ন উৎস থেকে বা মানুষের ব্যবহৃত প্লাস্টিক, ফোম, রেফ্রিজারেটর বা এসি ও ফ্রিজ প্রভৃতি থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) গ্যাস এবং অন্যান্য গ্যাস যেমন হ্যালন গ্যাস ওজোন স্তরকে ধ্বংস করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে একটি ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) গ্যাসের কণা লক্ষ্য ওজন কণা বিনষ্ট করতে পারে।
2. নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি
পরিবেশে নাইট্রাস অক্সাইড এর প্রভাব ওজোন স্তরকে ধ্বংস করছে। যেমন – সুপারসনিক বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটায়। তাছাড়া পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলেও ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা অনুযায়ী জানা যায় যে – প্রতি ১১ বছর অন্তর নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ ৩০ থেকে ৬০% বৃদ্ধি পায়। ফলে মেরু অঞ্চলে শীতকালে নাইট্রাস অক্সাইড এর প্রবাহের মাধ্যমে চালক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ওজন স্তরের ঘনত্ব কমে যায়।
3. সালফেটের বৃদ্ধি
বিভিন্ন কারণে সালফেটের বৃদ্ধির ফলে ওজন গ্যাস ধ্বংস হয়। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, কলকারখানা চিমনি থেকে নির্গত সালফেট কণা অধিক পরিমাণে বায়ুমন্ডলের মেশার মধ্য দিয়ে ওজোন স্তরকে ধ্বংস করতে পারে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে – পৃথিবীর জনবহুল অঞ্চলের সালফেটের ঘনত্ব অধিক পরিলক্ষিত হয়। এই সালফেট ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে বা ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।
4. প্রাকৃতিক কারণ
প্রাকৃতিক কারণে ওজোন গ্যাস ধ্বংস হয়। অতিবেগুনি রোজ নিজ প্রভাবে যেমন ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি হয় তেমনি সেই অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ওজন ধ্বংস হয়ে থাকে। তাছাড়া বায়ুমণ্ডলে সৌর কলঙ্কের চক্রের প্রভাবে ওজন গ্যাসের বিনাশ হয়।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, ওজোন স্তরকে পৃথিবীর রক্ষাকারী স্তর বা পৃথিবীর ছাতা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কারণ ওজোন স্তর না থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যকে বিশেষভাবে ক্ষতি সাধন ও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই ওজোন স্তর রক্ষা করা মানবজাতির আশু কর্তব্য। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে ওজোন স্তর ক্ষয় হ্রাস (Causes of Ozone Layer Depletion) করা সম্ভবপর হবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
তথ্যসূত্র (Reference)
- Environmental Studies – Shachi Gupta – Sahitya Bhawan Publications
- Perspectives in Environmental Studies By Anubha Kaushik, C.P. Kaushik – NAP
- Environmental Studies – Dr. Jayakara Bhandary M.
- Causes of Ozone Layer Depletion
- Internet Sources
প্রশ্ন – ওজোন স্তর ধ্বংসের দুটি কারণ
উত্তর – ওজন স্তর ধ্বংসের দুটি কারণ হল ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) গ্যাস এবং অত্যাধিক হারে পরিবেশ দূষণ বা বায়ু দূষণ।
প্রশ্ন – ওজোন স্তরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে কোন গ্যাস
উত্তর – ওজোন স্তরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) গ্যাস। অর্থাৎ এই গ্যাস ওজোন স্তর বিনাশের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
প্রশ্ন – ওজন স্তর কোথায় থাকে?
উত্তর – পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্ট্র্যাটোস্পিয়ারে ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে ওজোন স্তর থাকে।
প্রশ্ন – ওজোন স্তর কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর – ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্কোনবি (Schonbein) প্রথম ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন।
প্রশ্ন – কোন স্তর কে পৃথিবীর ছাতা বলা হয়?
উত্তর – ওজন স্তরকে পৃথিবীর ছাতা বলা হয়। কারণ ওজোন স্তর সূর্যের আলোর গতিবেগুনি রশ্মি বাধা দিয়ে পৃথিবীকে রক্ষা করে। অর্থাৎ পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে ওজোন স্তরের ভূমিকা অনবদ্য।
প্রশ্ন – ওজোন গ্যাসের গন্ধ কি?
উত্তর – ওজন গ্যাস হল নীল রঙের আঁসটে গন্ধযুক্ত গ্যাসীয় পদার্থ।
আরোও পড়ুন
- পরিবেশ বিদ্যা প্রশ্ন ও উত্তর pdf 1st Semester | CVAC | Environmental Studies
- পরিবেশ বিদ্যার প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো | Multidisciplinary Nature of Environmental Studies
- জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ও ফলাফল | Causes of Population Explosion
- পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ | Causes of Environmental Pollution
- বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে | বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও ফলাফল | Global Warming
- ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ | Causes of Ozone Layer Depletion
ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ | Causes of Ozone Layer Depletion সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।