সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা | Difference Between Civilization and Culture

মানব সমাজে সভ্যতা ও সংস্কৃতি দুটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়। এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকলেও সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Civilization and Culture) বিভিন্ন দিক থেকে বিদ্যমান।

সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা | Difference Between Civilization and Culture

মানব সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। আর পরবর্তীকালে সংস্কৃতির মাধ্যমে ধীরে ধীরে জন্ম হয়েছে সভ্যতার। অর্থাৎ সংস্কৃতি ও সভ্যতা একে অপরের পরিপূরক। তবে সভ্যতার সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও বিভিন্ন বিষয়ের সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সেগুলি এখানে আলোচনা করা হল –

ধারণাগত পার্থক্য

মানবজাতির জীবনধারণের সম্মিলিত সমন্বয় হল সভ্যতা। ইংরেজি Civilization শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Civilis থেকে এসেছে, যার অর্থ হল – নাগরিক। তাই সভ্যতা বা Civilization শব্দটির অর্থ হল সুসভ্য নাগরিক সমাজ। অধ্যাপক ম্যাকাইভার বলেছেন – আমাদের সভ্যতা হলো আমরা যা ব্যবহার করি।

অপরদিকে ইংরেজি Culture শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Colere থেকে এসেছে, যার অর্থ হল কর্ষণ করা বা সংস্কার করা। অধ্যাপক ম্যাকাইভার বলেছেন – আমাদের সংস্কৃতি হল আমরা যা তাই। তাই সংস্কৃতি হল মানুষের আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, কেননা মানুষের পূর্ণতা সংস্কৃতিতে নিহিত আছে। ষষ্ঠদশ শতকের শেষ দিকে ফ্রান্সিস বেকন সর্বপ্রথম ইংরেজি সাহিত্যে Culture শব্দটি ব্যবহার করেন।

পরিমাপগত পার্থক্য

সভ্যতাকে সহজে পরিমাপ করা যায়। যেমন – গরুর গাড়ির তুলনায় মোটর গাড়ির দ্রুততা বেশি। কিন্তু সংস্কৃতিকে সহজে পরিমাপ করা যায় না। কারণ এটি পরিমাপ করতে বিভিন্ন কৌশলের প্রয়োজন হয়।

স্থায়িত্বগত পার্থক্য

সভ্যতার স্থায়িত্ব সংস্কৃতির তুলনায় অনেক কম। অর্থাৎ সভ্যতা একটি নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে গড়ে ওঠে। আবার সহজেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে। যেমন – সিন্ধু সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা প্রভৃতি। আবার সংস্কৃতি সহজে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। এটি ধারাবাহিকভাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রবাহিত হয়।

লক্ষ্যগত পার্থক্য

সভ্যতা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলে। সে কারণে সভ্যতার মধ্যে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে সংস্কৃতির নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে না। তাই এর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও অনুপস্থিত।

বস্তুগত ও অবস্তুগত পার্থক্য

সভ্যতা হলো মানুষের বস্তুগত সৃষ্টি। অর্থাৎ সভ্যতার মধ্যে বস্তুগত উপাদান পরিলক্ষিত হয়। আর অপরদিকে সংস্কৃতি হল অবস্তুগত। আরো অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃতি বস্তুগতও হয়ে থাকে।

গতি

সভ্যতার গতি দ্রুত এবং কমপুঞ্জীভূত। প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে সভ্যতার অগ্রগতি দ্রুত গতিতে ঘটে থাকে। অন্যদিকে সভ্যতার তুলনায় সংস্কৃতির গতি অনেকটাই কম বা সংস্কৃতি ধীর গতি সম্পন্ন। তাই সমাজবিদ ম্যাকাইভার ও পেজ বলেছেন – “Civilization is always advancing, but not culture”. অর্থাৎ সভ্যতা সর্বদা এগিয়ে চলেছে, কিন্তু সংস্কৃতি নয়।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, সভ্যতা ও সংস্কৃতি সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুটি বিষয় সমাজের মধ্যে বিশেষভাবে বিদ্যমান বা পরিলক্ষিত হয়। কোন অগ্রসর মান জটিল সংস্কৃতি সভ্যতার পরিচয়কে পরিস্ফুটিত করে। তাই বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিকবিদগণ সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে দুটি পৃথক বিষয় হিসেবে গণ্য করে থাকেন।

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্যসামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকাশিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
  • Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
  • Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
  • Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
    Publications
  • Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,
  • Difference Between Civilization and Culture

প্রশ্ন – সংস্কৃতি ও সভ্যতা কাকে বলে

উত্তর – সাধারণভাবে সংস্কৃতি হল মানুষের তৈরি বস্তু ও একটি উপায় যার মাধ্যমে সে তার উদ্দেশ্য সাধন করে। সংস্কৃতি হল কর্ষণ করা বা সংস্কার করা বা পরিমার্জনা করা।
আর অপরদিকে সভ্যতা হল সুসভ্য নাগরিক সমাজ যেখানে নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। তাই নির্দিষ্ট কতগুলো সমাজের মুখ্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সমূহ একত্রিত হয়ে সভ্যতা গঠন করে। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার সর্বপ্রথম সভ্যতার শব্দটির ব্যবহার করেন।

প্রশ্ন – সভ্যতা বলতে কী বোঝ?

উত্তর – সভ্যতা হল মানুষের জীবনধারা সম্মিলিত রূপ। সংস্কৃতির হাত ধরে ধীরে ধীরে যে সভ্যতার জন্ম হয়েছে। সমাজবিদ বটমর বলেছেন – নির্দিষ্ট কতগুলো সমাজের মুখ্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সমূহ একত্রিত হয়ে সভ্যতা গঠন করে।

প্রশ্ন – সভ্যতা কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর – সভ্যতা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সেগুলি হল – সিন্ধু সভ্যতা, মিসরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা,রোমান সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা | Difference Between Civilization and Culture সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

close