বর্তমানে পরিবেশ বিদ্যা পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ইউনিভার্সিটির একটি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। এখানে পরিবেশ বিদ্যা বড় প্রশ্ন উত্তর B.A. CVAC হিসেবে (Environmental Studies Important Questions and Answers) বিশেষ করে দু নম্বরের প্রশ্ন উত্তর আলোচিত হলো।
পরিবেশ বিদ্যা বড় প্রশ্ন ও উত্তর | 2 Marks | Environmental Studies Important Questions and Answers
বর্তমানে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষার্থীদের সচেতনতার জন্য পরিবেশ বিদ্যা (Environmental Studies) স্কুল স্তরের গণ্ডি পেরিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নব প্রবর্তিত পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে পরিবেশ বিদ্যা প্রশ্ন ও উত্তর (এক নম্বর) প্রশ্নের পাশাপাশি ২ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর কেমন হবে, তা আলোচনা করা হলো –
Chapter – 1
পরিবেশ বিদ্যা বলতে কী বোঝো
–> পরিবেশ বিদ্যা হল বিজ্ঞানের একটি শাখা যার মধ্যে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীবজ পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য, পারস্পরিক সম্পর্ক, পরিবেশ বিষয়ক সমস্যা সমাধান প্রকৃতি বিষয়ক গঠন-পাঠন করা হয়।
পরিবেশ বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা কি
পরিবেশ বিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা হল – i) পরিবেশের সঠিক ধারণা পাওয়া, ii) পরিবেশ রক্ষা কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন, iii) ভবিষ্যতে পরিবেশকে কিভাবে রক্ষা করা যাবে সে বিষয়ে সচেতনতা প্রভৃতি।
পরিবেশ বিদ্যার দুটি পরিধি লেখো
পরিবেশ বিদ্যা শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণভাবে পরিবেশবিদ্যার পরিধি বৃহৎ ও বিস্তৃত। তাই প্রথাগত ও প্রথাগত সকল শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবেশ বিদ্যার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যেমন – প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তর এবং বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি, স্থিতিশীল উন্নয়ন, ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।
সুস্থায়ী উন্নয়ন কাকে বলে
সুস্থায়ী উন্নয়ন বা উন্নতি হল সেই উন্নয়ন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে ঘাটতি না ঘটিয়ে বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন পূরণ করবে। তাই। পরিবেশ থেকে সম্পদ আহরণের উদ্দেশ্যে মানুষের সকল প্রকার কাজকর্মকেই পরিবেশে স্থায়ী ক্ষতি করার থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। মানুষের সম্পদ সংরক্ষণের এই উন্নয়নমূলক চেতনা হল সুস্থায়ী উন্নয়ন।
সুস্থায়ী উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য গুলি কি
সুস্থায়ী উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য গুলি হল – পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জনসংখ্যার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি।
সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধান বাধা গুলি কি কি
সুস্থায়ী উন্নয়নের লোককে প্রধান বাধা গুলি হল – অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পায়ন, মানুষের সচেতনতার অভাব বা শিক্ষার অভাব, অতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার, সরকারি উদাসীনতা প্রভৃতি।
এজেন্ডা ২১ কি
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরো শহরে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা সম্মেলন (Earth Summit)-এ গৃহীত কর্মসূচিকে এজেন্ডা ২১ বলে। স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে এজেন্ডা ২১ গৃহীত হয়েছিল। এর প্রধান কর্মসূচি গুলি হল – উন্নয়নের জন্য সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচি, প্রতিষ্ঠানগত কর্মসূচি এবং প্রয়োগমূলক কর্মসূচি।
Agenda 21 কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
Agenda 21 ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ বিদ্যা ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
Chapter – 2
ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা কাকে বলে
ইংরেজি Ecology শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। যথা – Oikos যার অর্থ হল বাসস্থান এবং Logos যার অর্থ হল জ্ঞান। তাই ইকোলজি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো জীবের বাসস্থান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন। সুতরাং যে বিজ্ঞানের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হয় তাকে ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা বলে।
ইকোলজি শব্দের জনক কে
ইকোলজি শব্দের জনক হলেন বিশিষ্ট জার্মান বিজ্ঞানী হেকেল (Haeckel)। তিনি ১৮৮৬ সালে প্রথম ইকোলজির বা বাস্তুবিদ্যার জার্মান শব্দ হিসেবে Oekologie শব্দটি ব্যবহার করেন। হেকেল বলেন – পরিবেশের সঙ্গে জীবের সম্পর্কই হল বাস্তুবিদ্যার প্রধান বিষয়বস্তু।
ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে
ইংরেজি Ecosystem শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। যথা – Eco থেকে যার অর্থ হল পৃথিবীর একটি অংশের পরিবেশ এবং System থেকে যার অর্থ হল প্রণালী বা তন্ত্র। অর্থাৎ পৃথিবীর কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশে সংবদ্ধভাবে গড়ে ওঠা জীবগোষ্ঠী ও জড় উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক একটি জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে যে নির্দিষ্ট প্রণালী বা সিস্টেম গঠিত হয় তাকে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র বলে।
ইকোলজি ও ইকোসিস্টেম এর পার্থক্য (যেকোনো দুটি)
ইকোলজি এবং ইকো সিস্টেম এর মধ্যে পার্থক্য হল –
i) ইকোলজি হলো বাস্তুবিদ্যার প্রধান বিষয়বস্তু। অর্থাৎ ইকোলজি হল বাস্তুবিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা। আর অপরদিকে ইকোসিস্টেম হল বাস্তুতন্ত্রের বিষয়বস্তু। অর্থাৎ পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র কেমন তাই ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়।
ii) এটি বিজ্ঞানসম্মত। অর্থাৎ ইকোলজিতে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হয়। আর অপরদিকে কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জীবগোষ্ঠী ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পারস্পরিক কিভাবে সম্পর্কিত ও শক্তি প্রবাহ কিভাবে গড়ে ওঠে তা বাস্তুতন্ত্রের আলোচ্য বিষয়।
বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লেখো
বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
i) বাস্তুতন্ত্র শক্তির প্রধান উৎস হল সূর্য
ii) বাস্তুতন্ত্র তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। যথা – শক্তি প্রবাহ, বায়োম এবং বাসস্থান।
iii) বাস্তুতন্ত্রের জড়ো ও সজীব উপাদান গুলির মধ্যে অনবরত পরিবর্তন ঘটে।
বাস্তুতন্ত্রের প্রকারভেদ গুলি লেখো
বাস্তুতন্ত্রের প্রকারভেদ গুলি হল –
ক) প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র – প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা –
i) স্থলজ বাস্তুতন্ত্র (Terrestrial Ecosystem) – পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর যে বাস্তুতন্ত্র প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয়, তাকে স্থলজ বাস্তুতন্ত্র বলে। যেমন – তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র, বনভূমির বাস্তুতন্ত্র, মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র, তুন্দ্রা বাস্তুতন্ত্র প্রভৃতি।
ii) জলজ বাস্তুতন্ত্র (Aquatic Ecosystem) – পৃথিবীর বিভিন্ন জলভাগে প্রাকৃতিক উপায় যে বাস্তুতন্ত্র সৃষ্টি হয়, তাকে জলজ বাস্তুতন্ত্র বলে। যেমন – স্বাদু জলের বাস্তুতন্ত্র এবং লবণাক্ত বাস্তুতন্ত্র।
iii) মিশ্র বাস্তুতন্ত্র – বর্তমানে বিজ্ঞানীগণ মনে করেন স্থলজ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের মিশ্রণের ফলে তাই নতুন স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। যেটি মিশ্র বাস্তুতন্ত্র হিসেবে পরিচিত। যেমন – সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র, নদী মোহনার বাস্তুতন্ত্র প্রভৃতি।
খ) কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্র – পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিতভাবে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট বাস্তুতন্ত্রকে কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্র বলে। এর উদাহরণ হল – শস্য ক্ষেত, অ্যাকোরিয়াম, শহরের বাস্তুতন্ত্র প্রভৃতি।
বাস্তুতন্ত্রের উপাদান গুলি লেখো
বাস্তুতন্ত্রের উপাদান গুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – অজৈব উপাদান এবং জৈব বা সজীব উপাদান।
i) অজৈব উপাদান – বাস্তুতন্ত্রের প্রাণহীন সকল পরিবেশগত উপাদানই হল অজৈব উপাদান। এ অজৈব উপাদানের উদাহরণ হল – ভৌত উপাদান (জল, বাতাস, সূর্যালোক), নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, খনিজ লবণ, প্রোটিন, ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি।
ii) জৈব বা সজীব উপাদান – বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত প্রকার উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব হল বাস্তুতন্ত্রের জৈব বা সজীব উপাদান। জৈব বা সজীব উপাদানের উদাহরণ হল – স্বভোজী বা উৎপাদক এবং পরভোজী।
স্বভোজী বা উৎপাদক কাকে বলে
যেসব জীব নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপন্ন করে থাকে, তাদেরকে স্বভোজী বা উৎপাদক বলে। যেমন – সবুজ উদ্ভিদ, সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি।
পরভোজী কাকে বলে
যেসব জীব নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপন্ন করতে পারে না, সাধারণত খাদ্যের জন্য উৎপাদকের উপর নির্ভরশীল হয়, তাদের পরভোজী বা হেটেরোট্রফিক বলে। যেমন – মানুষ, হরিণ, ছাগল, বাঘ প্রভৃতি।
খাদক কাকে বলে
যেসব জীব নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদকের উপর নির্ভরশীল তাদের খাদক বলে। খাদক সাধারণত শাকাাহারি ও মাংসাশী এই দুই শ্রেণীর হয়ে থাকে। খাদককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল –
i) প্রাথমিক খাদক বা প্রথম শ্রেণীর খাদক – যেসব খাদক খাদ্যের জন্য সরাসরি উৎপাদকের উপর নির্ভরশীল বা উৎপাদকে খাদ্য রূপে গ্রহণ করে জীবন যাপন করে, তাদের প্রথম শ্রেণীর খাদক বলে। যেমন – হরিণ, ফড়িং, ছাগল, জলজ কীটপতঙ্গ প্রভৃতি।
ii) গৌণ খাদক বা দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদক – যে সমস্ত খাদক জীবনধারণের জন্য প্রথম শ্রেণীর খাদককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর বা গৌণ খাদক বলে। যেমন – ব্যাঙ, সাপ, মাছ, টিকটিকি, ছোট পাখি প্রভৃতি।
iii) প্রগৌণ বা তৃতীয় শ্রেণীর খাদক – বাস্তুতন্ত্রের যে সমস্ত খাদক দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদকের উপর নির্ভরশীল বা দ্বিতীয় শ্রেণীর খাদককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর খাদক বলে। যেমন – বাঘ, সিংহ, মানুষ, কুমির, শিয়াল প্রভৃতি।
বিয়োজক কাকে বলে
বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি আণুবীক্ষণিক মৃতজীবী সম্প্রদায়কে মাইক্রো কনজিউমার বলে। এরা উদ্ভিদ ও প্রাণীদের প্রটোপ্লাজোমের জটিল যৌগ ভেঙে দেয় বা বিয়োজিত করতে পারে, তাই এদেরকে বিয়োজক বা ডিকম্পোজার বলে।
বনভূমির বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে
FAO -এর মতানুসারে – স্বাভাবিক উদ্ভিদের সমাবেশকেই অরণ্য বা বনভূমি নামে অভিহিত করা যায়, যা স্থানীয় জলবায়ু এবং তার বন্টনের উপর প্রভাব বিস্তার করে, জীবজন্তুকে আশ্রয় দেয় এমন ভাবে যাতে তাদের পরস্পরের মধ্যে গঠনকারী ক্রিয়া মুলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সেই সম্পর্ককে বনভূমির বাস্তুতন্ত্র বা অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র বলে। এর উদাহরণ হল – চিরহরিৎ অরণ্য, পর্ণমচি অরণ্য এবং সরলবর্গীয় অরণ্য।
মৃতজীবী কাকে বলে
যে সমস্ত খাদকেরা বা জীবেরা মৃত জৈব পদার্থকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং পুষ্টি সংগ্রহ করে তাদেরকে মৃতজীবী বলা হয়। যেমন – ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি আণুবীক্ষণিক জীব।
বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা লেখো
বাস্তুতন্ত্রের জৈব ও অজৈব উপাদান গুলি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। কারণ একে অপরের সাহায্য ছাড়া বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে গড়ে উঠতে পারে না। বাস্তুতন্ত্রের সকল শক্তির উৎস হলো সূর্য। তাছাড়া সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের সাহায্যে পরিবেশ থেকে জল, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে জৈব উপাদান বা খাদ্য তৈরি করে। সেই খাদ্য আবার বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য অন্যান্য খাদকেরা গ্রহণ করে শক্তি সঞ্চার করে। এইভাবে ধাপে ধাপে বিয়োজক পর্যন্ত বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়।
খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্যজাল কাকে বলে
i) খাদ্য শৃঙ্খল – খাদ্য খাদক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে যে নির্দিষ্ট প্রণালীতে খাদ্য শক্তি উৎপাদক থেকে ক্রমপর্যায়ে আরোও উন্নততর জীবগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবাহিত হয়, তাকে খাদ্য শৃঙ্খল বা Food Chain বলে। যেমন – গ্রেজিং খাদ্য শৃঙ্খল (ঘাস –> হরিণ –> বাঘ)
ii) খাদ্যজাল – একটি বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্প্রদায় অর্থাৎ উভয়ের খাদ্য ও খাদকের সম্পর্কের ভিত্তিতে একাধিক জটিল খাদ্যশৃঙ্খল গড়ে ওঠে। এই একাধিক খাদ্যশৃঙ্খলকে খাদ্যজাল বা Food Web বলে।
বাস্তুতন্ত্রের শক্তি প্রবাহ কাকে বলে
বাস্তুতন্ত্রে সূর্য হল সকল শক্তির উৎস। আর বাস্তুতন্ত্রে রূপান্তরিত সৌরশক্তি উৎপাদক থেকে বিভিন্ন খাদকের দেহে স্থানান্তরিত হওয়াকে শক্তি প্রবাহ বলে। এই শক্তি প্রবাহ তিনটি পর্যায়ে হয়ে থাকে। যথা – শক্তির অর্জন, শক্তির ব্যবহার এবং শক্তি স্থানান্তর। তাই বাস্তুতন্ত্র শক্তি প্রবাহ সাধারণত একমুখী প্রকৃতির।
বাস্তুতন্ত্রের পিরামিড কাকে বলে
কোনো বাস্তুতন্ত্রের পুষ্টি গঠন প্রক্রিয়াকে ক্রমিক পর্যায়ে সাজালে যে পিরামিড গঠিত হয়, তাকে বাস্তুতন্ত্রের পিরামিড বলে।
জৈব অক্সিজেন চাহিদা (BOD) কাকে বলে
জলে বসবাসকারী প্রাণীদের দ্রবীভূত অক্সিজেনের চাহিদার মাত্রাকে জৈব অক্সিজেন চাহিদা (Biological Oxygen Demand or BOD) বলে। যখন জল দূষণ ঘটে তখন বিভিন্ন জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরা জলে বিয়োজন ঘটায় এবং এদের কাছে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার বাড়তে থাকে। ফলে অন্যান্য প্রাণীদের কাছে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা যায় এবং তাদের অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই BOD বা জৈব অক্সিজেন চাহিদাকে জলের উৎকর্ষতার সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। BOD-1 খুব ভালো জল এবং BOD-2 হল দূষিত জল।
উত্তরণ কাকে বলে
বাস্তুতন্ত্র যত পরিণত প্রাপ্তির দিকে অগ্রসর হয়, ততই এটি জটিল অবস্থা থেকে অধিক জটিল অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। এই দিক বা লক্ষ্য পরিবর্তনকে উত্তরণ (Succession) বলে।
পরিবেশ বিদ্যা ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
Chapter – 3
সম্পদ কাকে বলে
সম্পদ কোনো বস্তু বা পদার্থকে বোঝায় না, কোনো বস্তু বা পদার্থ যখন কোনো কাজে অংশগ্রহণ করে, তখন তার কার্যকরী ক্ষমতাই হলো সম্পদ। সম্পদ মানুষের অভাব মোচন করে, মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের সাহায্য করে এবং চাহিদা মেটায়। তাই সম্পদ হলো কোনো বস্তু বা পদার্থের কার্যকারিতা। যা মানুষের ব্যক্তিগত সামাজিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।
চিরাচরিত শক্তি কাকে বলে উদাহরণ দাও
যে শক্তি সহজে নিঃশেষ হয়ে যায় বা সময়ের সাথে সাথে ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাকে চিরাচরিত শক্তি (Non-renewable Resources) বলে। এই শক্তি প্রাকৃতিকভাবে হলেও এটি সীমিত আকারের হয়ে থাকে। এই শক্তি পুনরায় তৈরি হতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে। চিরাচরিত শক্তির উদাহরণ হল – কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস অপরিশোধিত তেল বা অন্যান্য খনিজ পদার্থ প্রভৃতি।
অচিরাচরিত শক্তি কাকে বলে উদাহরণ দাও
প্রাকৃতিকভাবে যে শক্তি পাওয়া যায়, তাকে অচিরাচরিত শক্তি বলে। অর্থাৎ যে শক্তি অফুরন্ত বা কোনদিন শেষ হয় না এবং পুনরায় উৎপাদন করা যায় তাকে অচিরাচরিত শক্তি বলে। এটিই কি আবার নবায়নযোগ্য শক্তি বা সম্পদও (Renewable Resources) বলা হয়ে থাকে। অচিরাচরিত শক্তির উদাহরণ হল – বায়ু শক্তি, সৌর শক্তি, জলশক্তি, জৈব শক্তি, জোয়ার ভাটা শক্তি প্রভৃতি।
মরুকরণ কাকে বলে
মরুকরণ হলো পরিবেশগত একটি সমস্যা, যা ভূমিভাগের অবক্ষয়কে অবসম্ভাবী করে তোলে। জলবায়ুগত পরিবর্তন, বনভূমি ধ্বংস প্রভৃতি কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়, একে মরুকরণ (Desertification) বলা হয়। মরুকরণের উদাহরণ হল – সাহারা মরুভূমি, থর মরুভূমি, আরব মরুভূমি প্রভৃতি।
মরুকরণের কারণ গুলি কি কি
মরুকরণের প্রধান কারণগুলি হল – দাবানল, অতিরিক্ত হারে বৃক্ষ ছেদন, ঝুম চাষ, নগরায়ন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, খরা প্রবণতা প্রকৃতি।
মৃত্তিকা ক্ষয় কি
মৃত্তিকা ক্ষয় হল ভূমির উপরের অংশের মাটি বিভিন্ন কারণে ক্ষয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়াকে বোঝায়। এর ফলে ভূমির বা মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি হ্রাস পায়। অতিরিক্তভাবে বনভূমি ধ্বংস, গবাদি পশু পালন ও বন্যার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় দেখা দেয়।
অরণ্য ছেদন বা বৃক্ষছেদন কাকে বলে
মানুষের বসতি স্থাপনের জন্য বা নগরায়ন ও শিল্পায়নের জন্য যখন মানুষ যথেষ্ট হারে গাছপালা ধ্বংস করে। আবার অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণে (যেমন – দাবানল, বিধ্বংসী ঝড় প্রভৃতি) গাছপালা ধ্বংস হয়ে যায় তখন তাকে অরণ্য ছেদন বৃক্ষছেদন বলে।
সামাজিক বনসৃজন কি
যখন কোনো অঞ্চলে জনগণের সহায়তায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নতির উদ্দেশ্যে পরিবেশের অব্যবহিত ফাঁকা অঞ্চলে বনভূমি স্থাপন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা হয়, তখন তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে। এর মূল উদ্দেশ্য হল – বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
পরিবেশ বিদ্যা ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
Chapter – 4
জীববৈচিত্র্য বলতে কী বোঝায়
একটি নির্দিষ্ট পরিবেশগত অবস্থায় এবং একটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সমন্বয়ে বা উদ্ভিদ ও প্রাণী গোষ্ঠীর উপস্থিতিকে জীববৈচিত্র বলে। বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী ওয়াল্টার জি রোসেন 1968 সালে জীববৈচিত্র্য বা Biodiversity শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।
UNEP – এর সংজ্ঞা অনুযায়ী – জীববৈচিত্র্য হলো কোনো অঞ্চলের সমগ্র জিন প্রজাতি বা বাস্তুতন্ত্র।
জীববৈচিত্র্যের স্তর গুলি কি কি
জীববৈচিত্র্যের তিনটি স্তর পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল – জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য এবং বাস্তুতান্ত্রিক বা বাসস্থানগত বৈচিত্র্য।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গুলি কি কি
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বর্তমানে অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা গুলি হল – i) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, ii) বাস্তুতন্ত্র রক্ষা, iii) পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, iv) প্রাণী জগতকে সংরক্ষণ প্রভৃতি।
জীববৈচিত্র্যের সংকটের কারণ গুলি কি কি
বর্তমানে সারা বিশ্বে বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর জীব কূল বা জীববৈচিত্র্য সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ গুলি হল – পরিবেশ দূষণ, নগরায়ন ও শহরায়ন, বাসস্থান ধ্বংস, রাসায়নিক কীটনাশকের অত্যাধিক ব্যবহার, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, চোরা শিকারির প্রভাব, রোগপ্রকার আক্রমণ প্রভৃতি।
জীববৈচিত্র্য হটস্পট কি
জীববৈচিত্র্য হটস্পট হলো যে সকল প্রাকৃতিক বাসস্থানে সর্বাধিক প্রজাতির অবলুপ্তি প্রাণী রয়েছে এবং বর্তমানে সেই অঞ্চলের আদি উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি অতি সংকটাপন্ন এবং বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে সেই সকল বাসস্থানকে বোঝায়। বিখ্যাত ব্রিটিশ বাস্তবিক নরম্যান মেয়ার জীববৈচিত্র্য হটস্পট কথাটি ব্যবহার করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে সারা পৃথিবীতে ৩৪ টি জীববৈচিত্র হটস্পট সনাক্ত করেছিলেন।
ভারতের কয়েকটি জীববৈচিত্র্য হটস্পট এর নাম উল্লেখ করো
সারা পৃথিবীতে বর্তমানে ৩৫টি জীববৈচিত্র্য হটস্পট রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় মহাদেশে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য হটস্পট পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল – i) হিমালয় অঞ্চল, ii) ইন্দো বর্মা অঞ্চল, iii) পশ্চিমঘাট পর্বত এবং শ্রীলংকা ও iv) সুন্দাল্যান্ড।
ইন সিটু সংরক্ষণ কি
বিলুপ্তপ্রায় জীবকে বা প্রাণীকে তার প্রাকৃতিক বাসস্থানে সংরক্ষণ অর্থ নিজস্ব প্রাকৃতিক বাসস্থানে যখন বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা হয় এবং জীববৈচিত্র কে রক্ষা করা হয়, তখন তাকে ইন সিটু সংরক্ষণ বলে। যেমন – ভারতের বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের অরণ্য অঞ্চলে সংরক্ষণ।
এক্স সিটু সংরক্ষণ কি
যখন বিলুপ্তপ্রায় বা বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলকে প্রাকৃতিক আবাসস্থলের বাইরে বা নিজস্ব বাসস্থানের বাইরের অঞ্চলে যখন সংরক্ষণ করা হয় তখন সেই পদ্ধতিকে এক্স সিটু সংরক্ষণ বলে। যেমন – তুষার চিতা নামক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটিকে দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় রেখে অস্তিত্ব রক্ষা করা।
এখানে প্রশ্নগুলি আপডেট হচ্ছে তাই আরোও প্রশ্ন উত্তরের আপডেট পেতে কিছুদিন পর এই পোস্টটি আবার ওপেন করুন।
তথ্যসূত্র (Reference)
- Environmental Studies – Shachi Gupta – Sahitya Bhawan Publications
- Perspectives in Environmental Studies By Anubha Kaushik, C.P. Kaushik – NAP
- Environmental Studies – Dr. Jayakara Bhandary M.
- Environmental Studies Important Questions and Answers
- Internet Sources
প্রশ্ন – পরিবেশ কাকে বলে
বিশিষ্ট পরিবেশবিদ আর্মস বলেছেন – পরিবেশ হল জীব সম্প্রদায়ের পারস্পরিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থা। আবার বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সি সি পার্ক বলেছেন – কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ও কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের চারপাশে বিরাজমান অবস্থান সমূহের সামগ্রিক রূপ হলো পরিবেশ।
আরোও পড়ুন
- পরিবেশ বিদ্যা প্রশ্ন ও উত্তর pdf 1st Semester | CVAC | Environmental Studies
- পরিবেশ বিদ্যার প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো | Multidisciplinary Nature of Environmental Studies
- জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ও ফলাফল | Causes of Population Explosion
- পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ | Causes of Environmental Pollution
- বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে | বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও ফলাফল | Global Warming
- ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ | Causes of Ozone Layer Depletion
পরিবেশ বিদ্যা বড় প্রশ্ন ও উত্তর pdf | Environmental Studies Important Questions and Answers সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।