পরিবেশ দূষণের ১০টি কারণ | Causes of Environmental Pollution

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে একটি জ্বলন্ত সমস্যা হল পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণের কারণ (Causes of Environmental Pollution) বিভিন্ন দিক থেকে ঘটে থাকে। পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে মানুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

পরিবেশে বিভিন্ন প্রকারের অবাঞ্ছিত পদার্থের অনুপ্রবেশের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। যা পরিবেশ এবং মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, একে সাধারণত পরিবেশ দূষণ বলে।

পরিবেশ দূষণের কারণ | Causes of Environmental Pollution

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উপর বিশেষ প্রভাব পড়ছে। শুধু মানুষ নয়, পরিবেশ দূষণ পরিবেশ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর কুপ্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই বর্তমানে এটি একটি বিশেষ সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের ফলে জল দূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দ দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ ছাড়া বিভিন্ন দূষণ সংঘটিত হয়। পরিবেশ দূষণ সাধারণত বিভিন্ন কারণে সংঘটিত হয়। পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ অনেকাংশে দায়ী। এখানে পরিবেশ দূষণের কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি আলোচনা করা হলো।

পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ

প্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। অর্থাৎ পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে যে সমস্ত কারণগুলি পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

অগ্নুৎপাত

অগ্নুৎপাত এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অগ্নুৎপাতের লাভা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া অগ্নুৎপাতের সময় গরম লাভা ও তার সাথে যে ছাই উৎপন্ন হয় তা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে অগ্ন্যুৎপাত অন্যতম।

দাবানল

গ্রীষ্মকালের সময় সারা বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গলে হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়, এর ফলে দাবানল সৃষ্টি হয়। এই দাবানলের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বনাঞ্চল শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না আগুনের ধোঁয়া ও উষ্ণতা পরিবেশ দূষণ করে থাকে।

জৈব ও অজৈব পদার্থের পচন

বন্যা বা অতিবৃষ্টির ফলে অনেক সময় পরিবেশের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের পচন দেখা দেয়। তাছাড়া সমুদ্রে বড় বড় মাছের মৃত্যু ঘটলে যেমন – তিমি মাছ তার পচনের ফলে সমুদ্রের জল দূষিত হয়। তাই পরিবেশের বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের পচনের ফলে পরিবেশের মাটি, বায়ু ও জল দূষিত হতে পারে

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

পরিবেশ দূষণের মনুষ্য সৃষ্ট কারণ

পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ অনেকাংশে প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ পরিবেশের শ্রেষ্ঠ জীব হলো মানুষ। মানুষের বিভিন্ন জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন ও কর্মকান্ডের ফলে পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের মনুষ্যসৃষ্ট কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ গুলি হল –

শিল্পায়ন বা কলকারখানা তৈরি

মানুষের জীবন যাত্রার মানের পরিবর্তন সাধনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দ্রুত শিল্পায়নের ফলে পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ শিল্পায়নের ফলে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে উদ্ভূত বর্জ্য পদার্থ ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এবং উৎপন্ন দূষিত গ্যাস পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। তাই শিল্পায়ন পরিবেশ দূষণের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ।

নগরায়ন

শিল্পায়নের পাশাপাশি জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণের জন্য মানুষ নগরায়ন করছে। ফলে পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। তাই নগরায়ন পরিবেশ দূষণে অন্যতম কারণ।

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো

প্রাকৃতিকভাবে যে জীবাশ্ম জ্বালানি পাওয়া যায় যেমন – কয়লা, তা পোড়ানোর ফলে পরিবেশের বায়ু দূষণ হচ্ছে।

মানুষের সচেতনতার অভাব

মানুষের সচেতনতার অভাবের ফলে পরিবেশ আজ বায়ু, জল, মাটি সহ সর্বত্র দূষিত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ মানুষের অসচেতনামূলক কর্মসূচি পরিবেশকে দূষিত করছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – মানুষের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে ফেলার ফলে পরিবেশের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অরণ্যছেদন বা অতিরিক্ত গাছ কাটা

পৃথিবীতে দশ বছর আগে যা অরণ্য ছিল বর্তমানে তার অর্ধেক হয়ে গেছে। কারণ জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে ও মানুষের অন্যান্য কার্যকলাপের জন্য যেমন – শিল্পায়ন, নগরায়ন ব্যাপকভাবে অরণ্য নিধন হচ্ছে।

অর্থাৎ অতিরিক্ত ভাবে গাছ কাটা করছে। তাই পৃথিবীতে অরণ্যের শতাংশ কমে আসছে। যার ফলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছে অদূর ভবিষ্যতে অনাবৃষ্টি, অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত গাছ কাটা বা অরণ্যছেদন পরিবেশ দূষণের মনুষ্যসৃষ্ট অন্যতম কারণ।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বা হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে সমগ্র বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণ একটি ভয়ংকর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি পরিবেশের উপর মানুষের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ পরিবেশ দূষণকে ত্বরান্বিত করে তুলছে। তাই যদি সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হার কমানো না যায় তাহলে ভবিষ্যতে পরিবেশসহ মানুষের জীবন ও অন্যান্য প্রাণীকুলের জীবনযাত্রা এক সংকটের মুখে বা প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Essentials of Examinations System: Evaluation, Test and Measurement – J.C. Aggarwal – Vikash Publishing House Pvt. Ltd.
  • Statistics in Psychology and Education – S.K. Mangal – PHI Learning Pvt. Ltd.
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Causes of Environmental Pollution
  • Internet Sources

প্রশ্ন – পরিবেশ দূষণের কারণ কী কী?

উত্তর – পরিবেশ দূষণের কারণ বহুমুখী। যেমন – অগ্নুৎপাত, দাবানল, নগরায়ন, শিল্প ও কলকারখানা বৃদ্ধি প্রভৃতি।

প্রশ্ন – ভারতে দূষণের কারণ?

ভারতে দূষণের বিভিন্ন কারণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন – কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীতে মিশে যাওয়ার ফলে জল দূষণ, কলকারখানা ধোঁয়ার মাধ্যমে বায়ু দূষণ, নগরায়ন, শিল্পায়ন ও মানুষের সচেতনতার অভাব প্রভৃতি।

প্রশ্ন – চার ধরনের পরিবেশ দূষণ কী কী?

উত্তর – চার ধরনের পরিবেশ দূষণ হল জল দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ও মৃত্তিকা দূষণ।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close