Share on WhatsApp Share on Telegram

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | Vidyasagar Contribution to Education and Social Reformer

Join Our Channels

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিক্ষা বিস্তারের ও সমাজ সংস্কারে যে সমস্ত মনীষী ও শিক্ষাবিদ তাদের অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বিদ্যাসাগর। তাই শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান (Vidyasagar Contribution to Education) ছিল অনস্বীকার্য।

১৮২০ সালে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ছিলেন ভগবতী দেবী। ছোটবেলা থেকে বিদ্যাসাগর অত্যন্ত মেধাবী প্রকৃতির ছিলেন। গ্রামের পড়াশোনা শেষ করে আরো শিক্ষার জন্য বাবার হাত ধরে তিনি কলকাতায় আসেন। কলিকাতাতে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেন, এবং এখানেই তার কর্ম জীবন শুরু হয়।

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | Vidyasagar Contribution to Education and Social Reformer

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের বিশেষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষভাবে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান

শিক্ষার বিভিন্ন দিকে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার

প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদান বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। ১৮৫৩ সালে বিদ্যাসাগর একটি প্রতিবেদনে গণশিক্ষাকে আবশ্যিক হিসেবে উল্লেখ করেন।

প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় বিদ্যালয়ে স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৮৫৪ সালে গভর্নর মিস্টার হ্যালিডের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যাসাগর কিছু সংখ্যক মডেল স্কুল স্থাপন এবং তার পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেন। হুগলি, বর্ধমান, নদীয়া ও মেননীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে এই বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

2. সংস্কৃত শিক্ষার প্রসার

বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কৃতিতে পন্ডিত। তাই তিনি সংস্কৃত শিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা ও উদ্যোগী হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর বিশ্বাস করতেন যে, সংস্কৃত শিক্ষার সংস্কারের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি সম্ভব।

সংস্কৃত শিক্ষাকে আরো সহজ করার জন্য তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তাই তিনি সংস্কৃত কলেজের পাঠ্যসূচিতে সংস্কৃত ব্যাকরণের পরিবর্তে বাংলা ব্যাকরণ পাঠের উপর গুরুত্ব দেন।

এছাড়া তিনি সংস্কৃত শিক্ষার প্রসারে কিছু পুস্তক রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা, ব্যাকরণ কৌমুদি প্রভৃতি।

3. নারী শিক্ষার বিস্তার

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান গুলির মধ্যে অন্যতম হল নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন করা। নারী শিক্ষা বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সেগুলি হল –

i) বিদ্যালয় প্রতিষ্টা – নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগর বেথুন সাহেবের সহায়তায় ১৮৪৯ সালে মেয়েদের জন্য অবৈতনিক স্কুল প্রতিষ্টা করেন। যেটি পরে বেথুন বালিকা বিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। ১৮৫০ সালে ডিসেম্বরে বিদ্যাসাগর বেথুন বালিকা বিদ্যালয়ে সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ii)  নারীশিক্ষা ভান্ডার গঠন – সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য পর্যাপ্ত না আসার ফলে বিদ্যাসাগর বিদ্যালয়গুলি সঠিকভাবে পরিচালনা ও পর্যাপ্ত পরিমানে অর্থযোগানের জন্য বেসরকারীভাবে ‘নারীশিক্ষা ভান্ডার’ নামক তহবিল গঠন করেন।

4. পাঠ্যপুস্তক রচনা

বিদ্যাসাগর মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন উপযুক্ত শিক্ষার জন্য চাই ভালো ভালো পাঠ্যপুস্তক যা শিক্ষার্থীদেরকে সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ করতে সাহায্য করবে।

তাই শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তকের অভাব পুরনে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, যেমন – বর্ণপরিচয় (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ – ১৮৫৫), বোধদয় (১৮৫১), কথামালা (১৮৫৬) প্রভৃতি।

6. বিদ্যালয় স্থাপন

শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যালয়ে স্থাপন করেছিলেন। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা এবং নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি শিক্ষার বিস্তারের জন্য মডেল স্কুল ও নর্মাল স্কুল তৈরির কথা বলেছিলেন।

সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান

শিক্ষা সংস্কারের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগর মননিবেশ করেন। তিনি লক্ষ্য করেন তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত। তাই তিনি কুসংস্কার দূরীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে বিভিন্ন অবদান রাখেন।

বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে অন্যতম হল –

i) বিধবা বিবাহ বা বিধবা বিবাহ আইন পাস,

ii) বহুবিবাহ নিবারণ,

iii) বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, শিক্ষা সংস্কার ও সমাজ সংস্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। তার এই শিক্ষা সংস্কার ও সমাজ সংস্কার ভারতবর্ষে নবজাগরণের সূচনা করেছিল।

তাই তৎকালীন সমাজে অসহায় নিপীড়িত, শোষিত, লাঞ্ছিত মানুষদের জন্য শিক্ষা বিস্তারে এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বিধবা বিবাহ আইন, বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তাই বিদ্যাসাগর আজও পর্যন্ত মানুষের অন্তরে সমান ভাবে বিদ্যমান।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • Internet Sources

প্রশ্ন – ব্যাকরণ কৌমুদী গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর – ব্যাকরণ কৌমুদী গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর সংস্কৃত শিক্ষার বিস্তারের জন্য ব্যাকরণ কৌমুদী গ্রন্থের রচনা করেন।

আরোও পড়ুন

4.5/5 - (4 votes)

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

5 thoughts on “শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান | Vidyasagar Contribution to Education and Social Reformer”

Leave a Comment

close