শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর | Relationship between Education and Psychology

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকলেও শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক (Relationship between Education and Psychology) বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও গভীর। ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানসিক ক্রিয়া, প্রকৃতি ও সূত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান যেমন সাহায্য করে। তেমনি অপরদিকে ব্যক্তির আচরণের প্রয়োগমূলক দিক হল শিক্ষা। অর্থাৎ মনোবিজ্ঞান হল তাত্ত্বিক দিক আর শিক্ষা হল প্রয়োগমূলক দিক।

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর | Relationship between Education and Psychology

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিখ্যাত দার্শনিক Kolensik বলেছেন – শিক্ষা প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা ও উন্নত করতে মনোবিজ্ঞানের যেসব তথ্য ও নীতি সহায়ক সেগুলি হল শিক্ষামনোবিজ্ঞান

প্রকৃতপক্ষে মনোবিজ্ঞান শিক্ষাবিজ্ঞানকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রভাবিত করে। তাই শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. শিক্ষার লক্ষ্য ও মনোবিজ্ঞান

শিক্ষার লক্ষ্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বিশেষভাবে অপরিহার্য। এক্ষেত্রে শিক্ষককে যেমন শিক্ষার লক্ষ্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মনোবিদ্যার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তেমনিভাবে যাকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে অর্থাৎ শিক্ষার্থীর সম্পর্কে জানা বিশেষ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীর শিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহ, প্রবণতা, মনোযোগ প্রভৃতি কেমন প্রকৃতির তা জানার জন্য মনোবিজ্ঞান বিশেষভাবে সাহায্য করে।

2. শিক্ষার পাঠক্রম ও মনোবিজ্ঞান

আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম মনোবিজ্ঞানের নীতির উপর ভিত্তি করে রচিত। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষা অনুযায়ী পাঠক্রমের ক্ষেত্রে মনোবৈজ্ঞানিক নীতি অনুসরণ করা হয়। তাই আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম হল মনোবিজ্ঞান সম্মত।

শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের জন্য এবং শিক্ষার্থীর কোন বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে বা প্রবণতা রয়েছে বা সামর্থ্য রয়েছে সেই অনুযায়ী পাঠক্রম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই শিক্ষা পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান বিশেষভাবে সহায়তা করে। এদিক থেকে বিচার করে বলা যায় শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় ও গভীর।

3. শিক্ষাদান পদ্ধতি ও মনোবিজ্ঞান

শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সঠিক শিক্ষা পদ্ধতির শিক্ষাদান পদ্ধতি বিশেষ প্রয়োজনীয়। মনোবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করে। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষাদান পদ্ধতির নির্বাচনে মনোবিজ্ঞান বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

4. মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও মনোবিজ্ঞান

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যায়ন ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। আর এই পরিবর্তন মনোবিজ্ঞানের প্রয়োগের ফলে সম্ভবপর হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষাদানের শেষে শিক্ষার্থীরা কতটুকু জ্ঞান অর্জন বা পারদর্শিতা অর্জন করতে পেরেছে তা জানতে মূল্যায়নের সাহায্য নেওয়া হয়। আর এক্ষেত্রে বর্তমানে বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন দ্রুত সম্ভবপর হচ্ছে।

তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন (Formative Evaluation) এবং অন্তিম মূল্যায়ন (Summative Evaluation) করার ক্ষেত্রে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। তাই শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

5. শিক্ষা প্রশাসন ও মনোবিজ্ঞান

বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বা শিক্ষার প্রশাসনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য মনোবৈজ্ঞানিক বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশ আরো বেশি শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।

6. শিক্ষায় শৃঙ্খলা ও মনোবিজ্ঞান

শিক্ষায় শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকালে শিক্ষায় শৃঙ্খলা ছিল কঠোর প্রকৃতির। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শৃঙ্খলা নমনীয় প্রকৃতি। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা নিজেই শৃঙ্খলিত হবে এবং স্বশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবে। আধুনিক শৃঙ্খলার এই ধারণা মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষায় শৃঙ্খলা ও মনোবিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক।

এগুলি ছাড়াও শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আরো যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, তা হল –

  • আধুনিক শিক্ষার তাৎপর্য ও মনোবিজ্ঞান
  • শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান।
  • শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা এবং গঠনমূলক ও কল্যাণমূলক কাজে মনোবিজ্ঞানের সহযোগিতা অপরিহার্য।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার মধ্যে যা কিছু রয়েছে ও যা কিছু আধুনিক তার সবকিছুতে মনোবিজ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই বিশিষ্ট দার্শনিক পেস্তালৎসি বলেছেন – “I wish to psychologize to Education.” অর্থাৎ আমি শিক্ষাকে মনোবিজ্ঞান সম্মত করতে চাই।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – মনোবিজ্ঞান কিভাবে শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত?

উত্তর – মনোবিজ্ঞানের কাজ হল শিক্ষার্থীদের মানসিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, চাহিদা, প্রবণতা, বুদ্ধি, প্রেষণা, মনোযোগ প্রভৃতি মনোবিজ্ঞানের শাখার অন্তর্গত।
আর সার্থক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এই সমস্ত বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করে বিষয় নির্বাচন বা পাঠক্রম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই মনোবিজ্ঞান শিক্ষার সাথে জড়িত বিভিন্ন কার্যকলাপকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করে ও শিক্ষা প্রক্রিয়াকেও যথাযথ করে তোলো।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close