Share on WhatsApp Share on Telegram

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (8 Role of Teacher in Socialization Process)

Join Our Channels

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া এমন যেটি শিশুর জন্মমুহূর্ত থেকে শুরু হয় এবং সারা জীবন পর্যন্ত চলতে থাকে। শিক্ষক হলেন জাতির মেরুদন্ড স্বরূপ। শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process) বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক যেমন – সামাজিক রীতিনীতি, নিয়ম-শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ, প্রভৃতি বিষয় সহজে আয়ত্ত করার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে। এখানে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process) বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

সামাজিকীকরণ কী (Socialization)

সামাজিকীকরণ হল শিশুকে সতত পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে অভিযোজনে বিশেষভাবে সহায়তা করা। শিশু জন্ম মুহূর্তে সামাজিক হয়ে জন্মগ্রহণ করে না।

শিশু যে পরিবেশে বা যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সেই পরিবেশ ও পরিবার শিশুকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলে।

সামাজিকীকরণের সংজ্ঞায় পিটার ওরস্‌লে (Peter Worsley) বলেছেন – সামাজিকীকরণ হল সংস্কৃতির আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিশুরা সামাজিক গোষ্ঠীর নিয়ম-কানুন এবং অনুশীলনগুলি আয়ত্ত করে।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process)

সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিশুকে বিশেষভাবে সাহায্য করে পরিবার (Family), বিদ্যালয় (School), শিক্ষক (Teacher) প্রভৃতি। শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অর্থাৎ শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের একটি অন্যতম উপাদান হলো শিক্ষক। তাই সামাজিকীকরণে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process) যে সমস্ত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি আলোচনা করা হল –

1. বিদ্যালয় পরিবেশে অভিযোজন

শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process) পালন করে থাকে। শিশুরা যখন বাড়ির পরিবেশ থেকে বিদ্যালয়ের পরিবেশে পদার্পন করেন তখন এক নতুন পরিবেশ শিশুরা উপলব্ধি করতে থাকে। আর শিক্ষক মহাশয় পরিবারের মত শিশুকে এই নতুন পরিবেশে সহজে শিশুকে মানিয়ে নিতে বা সামাজিকীকরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

2. ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশসাধন

শিক্ষক শিশুকে সার্থক সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর চারিত্রিক, নৈতিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতির বিকাশ সাধন করে থাকে। ফলে শিশুরা সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে সহজে মিলেমিশে থাকতে পারে বা সামাজিকীকরণ করতে পারে।

3. সামাজিক ঐতিহ্যের সংরক্ষন ও সঞ্চালন

শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process) হল সামাজিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও সঞ্চালন করা। এর ফলে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলি সহজে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হয়।

4. বৃত্তিমুখী নির্দেশনাদান

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher in Socialization Process) হল শিশুকে বৃত্তিমুখী নির্দেশনা দান করা। এর ফলে শিশুরা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জীবনের কোন বৃত্তি বা পেশা গ্রহণের মধ্য দিয়ে জীবিকা অর্জন করবে তা সহজে শিক্ষক মহাশয় শিশুকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

5. অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন

শিক্ষক মহাশয় শিশুকে সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন করতে সহায়তা করে। ফলে শিশু আধুনিক যুক্তি নির্ভর, বিজ্ঞান চেতনাসম্পন্ন সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। তাই শিক্ষক মহাশয় শিশুকে যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জনের মধ্য দিয়ে সামাজিকীকরণে (Role of Teacher in Socialization Process) বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

6. গণতান্ত্রিক চেতনার সঞ্চার

শিক্ষক মহাশয় শিশুকে গণতান্ত্রিক চেতনার সঞ্চার ঘটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। গণতন্ত্র হল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। তাই গণতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চারের মধ্য দিয়ে শিক্ষক মহাশয় শিশুকে সামাজিকীকরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

7. আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন

সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষক মহাশয় শিশুকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে সহায়তা করে। অর্থাৎ শিক্ষক মহাশয় পরিবারের গণ্ডি থেকে বের করে নিয়ে এসে শিশুকে মুক্ত সমাজের মধ্যে বিশেষ করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সেতু হিসাবে কাজ করে।

8. বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি

শিক্ষক মহাশয় বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে ও শিশুকে সেই পরিবেশের মধ্যে সহজে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা হল বন্ধু, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শক (Friend, Philosopher and Guider)-এর। তাই শিক্ষক মহাশয় বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রচনার মধ্য দিয়ে শিশুর সামাজিকীকরণে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে কথা বলা যায়, শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা অনবদ্য। তাই শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পথপ্রদর্শক, দার্শনিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার মধ্য দিয়ে শিশুকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। তাই এদিক থেকে বিদ্যালয় এর প্রধান উপাদান হিসাবে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ শিক্ষক মহাশয় ছাড়া বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
  • Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
  • Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
  • Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
    Publications
  • Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,

প্রশ্ন – সামাজিকীকরণের মাধ্যম সমূহ

উত্তর – সামাজিকীকরণের মাধ্যম সমূহ এর মধ্যে অন্যতম হল – পরিবার (Family), বিদ্যালয় (School), শিক্ষক (Teacher), বন্ধু দল (Peer Group) প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close