মনোযোগ কাকে বলে | মনোযোগের বৈশিষ্ট্য | What is Attention

মনোযোগ হল মনকে একান্ত ভাবে কোনো বিষয়ের প্রতি নিবিষ্ট করা। মনোযোগ ব্যতীত কোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা কখনোই সম্ভবপর নয়। তাই মনোযোগ কাকে বলে (What is Attention) -এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।

মনোবিদগণ বলেন আমাদের দৈনন্দিন চলার পথে মনোযোগ শব্দটি বিভিন্নভাবে শুনতে পাই। যেমন – মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর বা ট্রেন আসার জন্য আগাম ঘোষণা ইত্যাদি। তাছাড়া আমরা বাস্তব জীবনে চলার পথে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি মনোযোগ হই। যেমন – রাস্তা চলাচল করার ক্ষেত্রে বা রেল লাইন পারাপারের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে ও মনোযোগী হয়ে সেই কাজটি সম্পন্ন করি। এখানে মনোযোগ কাকে বলে ? মনোযোগের বৈশিষ্ট্য কি ? সেগুলি সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল।

মনোযোগ কাকে বলে | What is Attention

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি কোনো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন, তাকে বলে মনোযোগ। আচরণবাদী মনোবিগন বলেন – মনোযোগ হল কেন্দ্রীভূত চেতনার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ চেতন মনের নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া হল মনোযোগ।

বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মনোযোগ কাকে বলে তা ব্যাখ্যা করেছেন। মনোবিদদের দেওয়া মনোযোগের সংজ্ঞা গুলি হল নিম্নলিখিত –

1. মনোবিদ রস (Ross) বলেছেন – মনোযোগ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা চিন্তার বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে মনের সামনে উপস্থিত করে।

2. মনোবিদ উডওয়ার্থ (Woodworth) বলেছেন – মনোযোগ হল অনেকগুলো উদ্দীপকের মধ্যে থেকে কোনো একটি বিশেষ উদ্দীপকে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া।

3. বিশিষ্ট মনোবিদ ম্যাকডুগাল (McDougall) বলেছেন – যে মানসিক সক্রিয়তা জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়াকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে, তাকে মনোযোগ বলে।

4. মনোবিদ আর. এন. শর্মা (Sharma) বলেছেন – মনোযোগ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে তার আগ্রহ ও মনোভাব অনুযায়ী পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন উদ্দীপকের মধ্যে একটি বিশেষ উদ্দীপকে নির্বাচন করতে সহায়তা করে

তাই মনোযোগ হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেটির মাধ্যমে ব্যক্তি পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বেছে নেন এবং বিষয়টির প্রতি মনোযোগী হন।

মনোযোগের বৈশিষ্ট্য

মনোযোগ হল কোনো বিষয়ের প্রতি মনকে একান্ত ভাবে নিবিষ্ট করা। মনোযোগকে বিশ্লেষণ করলে এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। মনোযোগের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

1. নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া

মনোযোগ হল নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া। অর্থাৎ মনোযোগের ক্ষেত্রে নির্বাচিত বস্তুর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আমাদের চারপাশে অসংখ্য বস্তু বা বিষয় রয়েছে। কিন্তু আমরা সব কিছুতেই মনোযোগী হই না। আমাদের যেটা প্রয়োজন বা যে বিষয়টি আমাদের মনকে আকর্ষণ করে সেই বিষয়কে আমরা গুরুত্ব আরোপ করি। তাই মনোবিদগণ মনোযোগকে নির্বাচনধর্মী বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করেছেন।

2. কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া

মনোযোগ হল কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া। যখন কোনো বস্তু বা বিষয় ব্যক্তির মনের কেন্দ্রে অনুভূতি জাগ্রত করে তখন সেই বস্তু বা বিষয়ের প্রতি ব্যক্তি মনোযোগী হয়। মনোবিদ টিচেনার বলেছেন – বস্তু যখন কেন্দ্রীয় চেতনা স্তরে অবস্থান করে তখন বস্তু সম্পর্কে আমরা সচেতন হই বা মনোযোগী হই।

3. পরিবর্তনশীল

মনোযোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এটি পরিবর্তনশীল। কারণ কোনো বিষয়ের প্রতি আমরা অধিক্ষন মনোযোগ দিতে পারি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – কোনো শিক্ষার্থী এক মনে পড়াশোনা করছে। কিন্তু হঠাৎ বাইরে প্রচন্ড শব্দ শোনা গেল। তখন মনোযোগ সেই শব্দের দিকে ধাবিত হয়। তাই মনোযোগ সর্বদা পরিবর্তনশীল বিষয়।

4. উদ্দীপক নির্ভর

মনোযোগ উদ্দীপক নির্ভর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ মনোযোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উদ্দীপক নির্ভরতা। কোনো উদ্দীপকের যত বেশি শক্তিশালী বা যত বেশি তীব্রতা থাকে সেই উদ্দীপকের প্রতি ব্যক্তির মনোযোগ তত বেশি গভীরতা লাভ করে।

5. সীমাবদ্ধ প্রকৃতির

মনোযোগ সীমাবদ্ধ প্রকৃতির। কারণ একই সময়ে কোনো ব্যক্তি অধিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারব না। যেমন – একসঙ্গে পড়া ও খাওয়া এই দুই কাজ সম্ভব নয়। কারণ এক্ষেত্রে খাওয়া ও পড়া দুটি আলাদা কাজ পড়ার জন্য যেমন মনোযোগ লাগে তেমনি খাওয়ার জন্য মনোযোগ লাগে। তাই এটি নির্দিষ্ট দিকে সীমাবদ্ধ। তবে অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। তবে সেই সংখ্যা খুবই কম।

6. প্রচেষ্টামূলক

মনোযোগ হল প্রচেষ্টা মূলক। অর্থাৎ ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ দেবে সেই প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে মনোযোগ সংগঠিত হয়। তাই মনোবিদ ম্যাকডুগাল বলেছেন – শিখনের প্রচেষ্টা হল মনোযোগ।

7. চঞ্চল প্রকৃতির

মনোযোগ চঞ্চল প্রকৃতির। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের প্রতি আমরা বহুক্ষণ ধরে মনোযোগী হতে পারি না। মনোযোগের এই চঞ্চলতা দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – মনোযোগের বিচলন ও মনোযোগের বিদলন।

মনোবিদগণ মনোযোগের চঞ্চলতা পরিমাপ করার জন্য ‘Madandise’ নামক যন্ত্রটি ব্যবহার করেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে – মনোযোগের চঞ্চলতা 8 থেকে 12 সেকেন্ড অন্তর ঘটে থাকে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

8. দৈহিক পরিবর্তনভিত্তিক

মনোযোগের সময় ব্যক্তির দৈহিক পরিবর্তন সূচিত হয়। অর্থাৎ আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয়। তাই এটি দৈহিক পরিবর্তনকে সূচিত করে। উদাহরণস্বর বলা যায় – পিছন থেকে কেউ ডাক দিলে বা কোনো শব্দ হলে সেদিকে মনোযোগ দেয়ার জন্য দৈহিক পরিবর্তন আবশ্যিক অর্থাৎ মাথা ঘুরিয়ে সেই শব্দের উত্সের দিকে মনোযোগী হতে হয়।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, মনোযোগ হল ব্যক্তি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ মনোযোগী ব্যক্তিরাই যে কোনো কাজ সহজে সম্পন্ন করতে পারে। যেটি জীবনে সাফল্য আনতে সহায়তা করে। তাই আধুনিককালে মনোবিদগণ মনোযোগ কথাটির পরিবর্তে মনোযোগদান কথাটি ব্যবহার করে থাকেন।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – মনোযোগের পরিসর মাপার যন্ত্রের নাম কি

উত্তর – মনোযোগের পরিসর মাপার যন্ত্রের নাম হল – ট্যাচিস্টোস্কোপ (Tachistoscope)। এটি ১৮৫৯ সালে হ্যামিলটন নামক মনোবিদ আবিষ্কার করেন।

প্রশ্ন – মনোযোগের চঞ্চলতা মাপার যন্ত্রের নাম কি

উত্তর – মনোযোগের চঞ্চলতা পরিমাপ করার জন্য ‘Madandise’ নামক যন্ত্রটি ব্যবহার করেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে – মনোযোগের চঞ্চলতা 8 থেকে 12 সেকেন্ড অন্তর ঘটে থাকে।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close