শিক্ষা ক্ষেত্রে বা শিখনের ক্ষেত্রে মনোযোগের গুরুত্বপূর্ণ মানসিক প্রক্রিয়া। মনোযোগ ছাড়া শিখন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হতে পারে। তাই ব্যক্তির ক্ষেত্রে মনোযোগের নির্ধারক (Determination of Attention) বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
মনোযোগের নির্ধারক গুলি ব্যক্তিকে কোনো কাজে বা শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয় শিখতে সহায়তা করে। ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী কিভাবে মনোযোগী হবে তা নির্ভর করে মনোযোগের নির্ধারক গুলির উপর। মনোযোগের নির্ধারক একটি দৈনন্দিন জীবনে কোনো বিষয়ে মনোযোগী হতে সহায়তা করে থাকে।
মনোযোগের নির্ধারক | Determination of Attention
মনোযোগ হল এমন একটি কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে বা গুরুত্ব আরোপ করতে পারে। এটি একটি মানসিক ও বিশেষ ক্ষমতা। ফলে ব্যক্তিভেদে মনোযোগের তফাৎ পরিলক্ষিত হয়।
মনোযোগ একটি নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া। তাই মনোযোগের নির্ধারক বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। অনেক মনোবিদগণ মনোযোগের নির্ধারককে মনোযোগের উপাদান হিসেবেও গণ্য করেন।
মনোযোগের নির্ধারককে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা –
- বস্তুগত নির্ধারক
- ব্যক্তিগত নির্ধারক
মনোযোগের বস্তুগত নির্ধারক
মনোযোগের বস্তুগত নির্ধারকগুলি কোনো বস্তুকে বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এটি মনোযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনোযোগের বস্তুগত নির্ধারক গুলি নিম্নলিখিত –
1. বস্তুর আকৃতি
বস্তুর আকৃতি মনোযোগকে আকৃষ্ট করে। বস্তুর আকৃতি যদি ছোট আকারের হয় তবে সেটি সহজে ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না। কিন্তু অপরদিকে বস্তুর আকৃতি যদি বৃহৎ হয় তাহলে সহজে সেটি ব্যক্তির মনোযোগকে আকর্ষণ করে। তাই বস্তুর আকৃতিগত দিক মনোযোগের অন্যতম নির্ধারক।
2. বস্তুর রং
মনোযোগের অন্যতম নির্ধারণ হল রং। অর্থাৎ বস্তুর রং সহজে কোনো ব্যক্তিকে মনোযোগী করে তোলে। , উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – লাল রং ব্যক্তির মনোযোগকে সহজে আকর্ষণ করে। কোনো বইয়ের কালার যুক্ত লেখা শিক্ষার্থীদের মনোযোগকে সহজে আকর্ষণ করে
3. অভিনবত্ব
মনোযোগের অন্যতম নির্ধারক হল অভিনবত্ব। অর্থাৎ বস্তুর অভিনবত্ব বা নতুনত্ব আমাদের মনকে সহজে আকৃষ্ট করে ও সেই নতুনত্ব বস্তুর প্রতি মনোযোগী হতে সহায়তা করে। যেমন – ক্লাসে যদি কোনো শিক্ষার্থী নতুন ধরনের পোশাক পড়ে আসে বা নতুন কোনো ব্যাগ নিয়ে আসে তাহলে আমরা সেই দিকে সহজে মনোযোগী হই।
4. তীব্রতা
তীব্রতা মনোযোগের একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারণ। কারণ তীব্রতা মনোযোগ কে সহজে আকর্ষিত করে। যেমন – পূজার সময় আলোর তীব্রতা, শব্দের তীব্রতা বা প্রচন্ড জোড়ে শব্দ, গাড় রং প্রভৃতি।
5. গতিশীলতা
গতিশীলতা মনোযোগকে সহজে আকর্ষণ করে। কারণ স্থির বস্তুর থেকে গতিশীল বস্তুর দিকে আমাদের মন সহজে আকর্ষিত হয়। যেমন – চলমান বিজ্ঞাপন, গতিশীল আলো প্রভৃতি।
6. দীর্ঘ সময়
দীর্ঘ সময় কোনো বস্তুর প্রতি মনোযোগী হতে ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে। অর্থাৎ কোনো বস্তু বা বিষয় যদি দীর্ঘ সময় ব্যক্তির সামনে থাকে তাহলে ব্যক্তি সেই বিষয়কে এড়িয়ে যেতে পারে না।
মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারক
মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারক সম্পূর্ণ ব্যক্তি ভিত্তিক। অর্থাৎ ব্যক্তি কিভাবে কোনো বস্তুর প্রতি বা কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হবে তা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির উপর। মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারক গুলির মধ্যে অন্যতম নির্ধারকগুলি হল নিম্নলিখিত –
7. অভ্যাস
অভ্যাস হল মনোযোগের একটি ব্যক্তিগত নির্ধারক। কারণ অভ্যাস সহজে মনোযোগকে আকর্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – ঘুম থেকে ওঠার পর অভ্যাসবশত আমরা মুখ ধোয়ার জন্য জলের প্রতি মনোযোগী হই।
8. আগ্রহ
আগ্রহ হল মনোযোগের একটি ব্যক্তিগত নির্ধারক। আগ্রহ ছাড়া কোনো বিষয় বা বস্তুর প্রতি মনোযোগী হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই ম্যাকডুগাল বলেছেন – আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ এবং মনোযোগ হল সক্রিয় অনুরাগ।
9. মনোঃপ্রকৃতি
মনোঃপ্রকৃতি মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারকের মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন ব্যক্তির মনোঃপ্রকৃতি বা মানসিকতা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ফলে ব্যক্তি সেই দিকে মনোযোগী হয়। যেমন – যারা ইতিবাচক প্রকৃতির তারা ভালো দিকটি দেখেন। আবার যে সমস্ত ব্যক্তি নেতিবাচক প্রকৃতির তারা কোনো বিষয়ের ভুল খোঁজার চেষ্টা করেন।
10. প্রবৃত্তি
মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারকের মধ্যে প্রবৃত্তি একটি অন্যতম নির্ধারক। অর্থাৎ প্রবৃত্তি মনোযোগের অন্যতম শর্ত। যেমন – খাদ্যের চাহিদা বা ঘুমের চাহিদা (মানুষের জৈবিক প্রবৃত্তি) ফলে ব্যক্তি সেই দিকে মনোযোগী হয়।
11. শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা
শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা মনোযোগের অন্যতম ব্যক্তিগত নির্ধারক। অর্থাৎ পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মনোযোগকে বারবার আকৃষ্ট করে। যেমন – কোনো ব্যক্তি পুরনো দিনের গান শুনতে ভালোবাসে। তবে কোথাও পুরোনো দিনের গান চললে ব্যক্তি মনোযোগ সেই দিকে আকৃষ্ট হয়।
12. প্রেষণা
মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারক। কোনো কিছু তাড়নায় ব্যক্তি কোনো বিষয় বা বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয়। যেমন – খাদ্যের জন্য টাকার প্রতি মনোযোগী হওয়া।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, মনোযোগ একটি মানসিক প্রক্রিয়া। তাই এটি বিভিন্ন কারণে সংঘটিত। কোথাও জোরে শব্দ হলে আমরা যেমন মনোযোগী হই, আবার চোখে আলো পড়লে সে আলোর প্রতি দৃষ্টি চলে যায় ও আমরা মনোযোগী হই। তাই মনোযোগের নির্ধারক একদিকে যেমন বস্তুগত দিককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আবার অপরদিকে ব্যক্তির আগ্রহ, প্রেষণা প্রভৃতি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়ার উপর মনোযোগ অনেক অংশে নির্ভর করে।
তথ্যসূত্র (Reference)
- A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
- J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
- J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
- S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
- S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
- S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
- E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
- L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
- Internet Sources
প্রশ্ন – মনোযোগের একটি বাহ্যিক নির্ধারক হল (a) অভ্যাস (b) তীব্রতা (c) আগ্রহ (d) মেজাজ ।
উত্তর – (b) তীব্রতা
প্রশ্ন – আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ কে বলেছেন
উত্তর – আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ বলেছেন – মনোবিদ ম্যাকডুগাল।
আরোও পড়ুন
- শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ | বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য | 10 Difference Between Growth and Development
- বৃদ্ধি কাকে বলে | বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য | 4 Definition of Growth
- বৃদ্ধি ও বিকাশের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Growth and Development
- জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তর গুলি আলোচনা কর | 4 Stages of Human Development
- শিখন কাকে বলে | শিখনের বৈশিষ্ট্য | 5 Definition and Characteristics of Learning
- ব্যক্তিত্ব কাকে বলে | ভালো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য (5 Definition and Characteristics of Personality)