Share on WhatsApp Share on Telegram

দর্শনের শাখা কয়টি ও কি কি | Branches of Philosophy

Join Our Channels

দর্শন হল জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। তাই দর্শনের ধারণার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দার্শনিকগণ দর্শনকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই উদ্দেশ্যে দর্শনের শাখা (Branches of Philosophy) -র সৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণভাবে দর্শনে স্বরূপ আলোচনা করতে গিয়ে বা দর্শনের বিষয়বস্তু এবং সমস্যার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে দর্শনের বিভিন্ন শাখার জন্ম হয়েছে। প্রতিটি শাখার বিষয়বস্তু এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনা বা মতাদর্শ ভিন্ন ধর্মী। এই শাখা গুলি থেকে দর্শনের স্বরূপ ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। এখানে দর্শনের শাখা কয়টি ও কি কি তা আলোচনা করা হল।

দর্শনের শাখা | Branches of Philosophy

বিভিন্ন দার্শনিকদের বিভিন্ন প্রকার মতাদর্শের ফলে দর্শনের বিভিন্ন শাখার জন্ম হয়েছে। অর্থাৎ দর্শনের শাখা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়।

দর্শনের প্রত্যেকটি শাখায় নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এবং নির্দিষ্ট সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। আবার দর্শনের প্রত্যেকটি শাখা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। দর্শনের শাখা কয়টি ও কি কি সেগুলি এখানে, উল্লেখ করা হল –

1. অধিবিদ্যা

অধিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Metaphysics’। আক্ষরিক অর্থে যে বিদ্যা পদার্থবিদ্যার পরে আসে তাকে অধিবিদ্যা বলে। পদার্থবিদ্যায় ইন্দ্রিয়গত বস্তুর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু অধিবিদ্যা ইন্দ্রিয়াতীত বা অতীন্দ্রীয় বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

অধিবিদ্যা হল দর্শন একটি অন্যতম শাখা। অধিবিদ্যা অনুসারে বস্তুর ইন্দ্রিয়কার্য রূপের অন্তরালে যে অতীন্দ্রীয় রূপ বা স্বরূপ বর্তমান তা জানার চেষ্টা করা হয়। তাই অধিবিদ্যা অনুযায়ী আত্মা, ঈশ্বর, দ্রব্য প্রভৃতি অতীন্দ্রীয় বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

প্লেটো, অ্যারিস্টটল, হেগেল প্রমুখ দার্শনিকগণ দর্শন এবং অধিবিদ্যাকে অভিন্ন বলে মনে করেন। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দার্শনিক আলোচনাযই হল অধিবিদ্যার আলোচনা।

তাই বিশিষ্ট দার্শনিক প্লেটো অধিবিদ্যা সম্পর্কে বলেছেন – এই দৃশ্যমান জগতের সব বস্তুই সামান্যের প্রতিলিপি (Copy)।

2. জ্ঞানতত্ত্ব

জ্ঞানতত্ত্বের ইংরেজি হল ‘Epistemology’. এটি দুটি গ্রিক শব্দ যথাক্রমে ‘Episteme’ যার অর্থ হল জ্ঞান এবং ‘Logos’ শব্দের অর্থ হল বিদ্যা। অর্থাৎ জ্ঞানতত্ত্ব বা জ্ঞানবিদ্যা। তাই জ্ঞান সম্পর্কে বা জ্ঞানের যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হল জ্ঞানতত্ত্ব বা জ্ঞানবিদ্যা।

এটি দর্শনের অন্যতম শাখা এবং ভিত্তি। জ্ঞান ছাড়া দর্শন কখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই দর্শন জীবন ও জগত সম্পর্কে একটি সুসংবদ্ধ জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

বিশিষ্ট দার্শনিক দেকার্ত সর্বপ্রথম জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞানের উৎস, বৈধতা এবং সীমানা নির্ধারণ করা। তিনি বলেন – বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা যথার্থ জ্ঞান লাভের একমাত্র উৎস।

আবার জার্মান দার্শনিক কান্ট জ্ঞানতত্ত্বকে দর্শনের অপরিহার্য অঙ্গ বলে মনে করেন। তিনি বলেন – ইন্দ্রিয় অনুভব এবং বুদ্ধি – এই দুটি সাহায্যে জ্ঞান লাভ হয়।

তাই দর্শনে আলোচনার ক্ষেত্রে জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনাকে বাদ দেওয়া সম্ভবপর নয়। সেই জন্য দার্শনিক ফিকটে (Ficthe) দর্শনকে জ্ঞানের বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন।

3. যুক্তিবিদ্যা

যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Logic’। এটি গ্রিক শব্দ ‘Logike’ থেকে এসেছে যার অর্থ হল চিন্তা (Thought)।

যুক্তিবিদ্যায় মানুষের চিন্তার পরিনাম নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ ভাষায় প্রকাশিত বিষয় হল বচন এবং যুক্তি হল বিচারের ভাষায় প্রকাশিত রূপ। এই বিষয়গুলি যুক্তিবিদ্যায় সুশৃংখলভাবে আলোচনা করা হয় বলে যুক্তিবিদ্যা হলো চিন্তার বিজ্ঞান।

যুক্তিবিদ্যা হল দর্শনের একটি অন্যতম শাখা। এখানে যুক্তিসহকারে কোনো ঘটনার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ – কোথাও ধোঁয়া দেখে যুক্তির মাধ্যমে অনুমান করা হয় যে ওখানে নিশ্চিত আগুন আছে। এই অনুমানকে ভাষায় প্রকাশ করলে আমরা যুক্তি খুঁজে পাই। কিন্তু সব যুক্তি যে নির্ভুল হবে একথা বলা যায় না।

যুক্তি বৈধ এবং অবৈধ দুই প্রকার হয়ে থাকে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট দার্শনিক কপি (Copy) বলেছেন – বৈধ যুক্তিকে অবৈধ যুক্তি থেকে পৃথক করার পদ্ধতি ও সূত্র সম্পর্কে আলোচনাকে যুক্তিবিদ্যা বলে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

4. নীতিতত্ত্ব

নীতিতত্ত্ব বা নীতিবিদ্যা হল দর্শনের শাখা গুলির মধ্যে অন্যতম। নীতিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Ethics’ যেটি গ্রীক শব্দ ‘ethos’ থেকে এসেছে যার অর্থ হল – চরিত্র বা অভ্যাস বা আচার ব্যবহার।

দর্শনের শাখা হিসেবে নীতি তত্ত্ব বা নীতিবিদ্যা মানুষের আচার-আচরণের মূল্যায়ন করে থাকে। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে ভালো গুণগুলি কিভাবে বিকশিত হবে তা নীতিবিদ্যা বা নীতি তত্ত্বে আলোচনার বিষয়।

বিশিষ্ট দার্শনিক উইলিয়াম লিলি নীতিবিদ্যা সম্পর্কে বলেছেন – নীতিতত্ত্ব বা নীতিবিদ্যা হল সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণের আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

তাই নীতিতত্ত্বে মানুষের ন্যায়-অন্যায়, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ, সততা, ভালো-মন্দ প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করা হয়।

5. সমাজদর্শন

সমাজদর্শন দর্শনের শাখা গুলির মধ্যে অন্যতম। এখানে সামাজিক বিষয়ের বিভিন্ন আলোচনা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সমাজদর্শন, সমাজবিজ্ঞান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং এগুলির দার্শনিক মতবাদের ভিত্তিতে বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে।

তাই বিশিষ্ট দার্শনিক ও সমাজবিদ জিসবার্ট বলেছেন – সময় দর্শন হল সমাজবিজ্ঞান এবং দর্শনের মিলনস্থল।

মানুষের সামাজিক প্রকৃতি, ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক, সামাজিক গোষ্ঠী, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি কল্যাণ প্রভৃতি সমাজদর্শনের আলোচ্য বিষয়।

সমাজদর্শন মানুষের সামাজিক আচরণের বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। তাছাড়া অর্থনৈতিক সংগঠনগুলির প্রকৃতির উপর সমাস দর্শন আলোকপাত করে থাকে।

দার্শনিকগণ বলেন ধর্মের সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কেও সমাজদর্শনে আলোচনা হয়ে থাকে। ফলে ধর্ম কিভাবে সমাজের মধ্যে বিস্তার সাধন করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়।

সুতরাং দর্শন যেমন এই বিশ্বের মূল সত্তার স্বরূপ জানতে চায়, সেই রকম সমাজদর্শনে সমাজ নিহিত পরম তত্ত্বকে জানার চেষ্টা করা হয়।

তাই আধুনিককাল দর্শনের শাখা হিসেবে সমাজদর্শন একটি নতুন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য নিরূপণ করে থাকে।

6. রাষ্ট্রদর্শন

দর্শনের শাখার অন্যতম দিক হল রাষ্ট্রদর্শন। আধুনিককালে এটি রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে অধিক পরিচিত। সাধারণভাবে যে শাস্ত্রে রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয় এবং তাকে দর্শনসম্মত করে তোলা হয়, সেটি হলো রাষ্ট্রদর্শন।

রাষ্ট্রদর্শনে রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ করে যুক্তির আশ্রয় নিয়ে। তাই দর্শন শাস্ত্রের মধ্যে রাষ্ট্রদর্শন একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে।

বিশিষ্ট দার্শনিক র‍্যাফায়েল রাষ্ট্রদর্শনকে দর্শনের একটি অন্যতম শাখা রূপে গণ্য করেন। তাই দর্শনকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কোনো তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। তাই রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে দার্শনিক চিন্তাভাবনার গভীর ছাপ পরিলক্ষিত হয়।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, দর্শন কোনো একটি একক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ বিষয় নয়। এটি বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত। তাই দার্শনিকদের চিন্তাভাবনার ফলে বিভিন্ন দর্শন সম্প্রদায় বা শাখার জন্ম হয়েছে। যেগুলি বাস্তবসম্মত ভাবে মানুষের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বা বিভিন্ন সমস্যা সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক কে

উত্তর – আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক হল রেনে দেকার্ত।

আরোও পড়ুন

    4.4/5 - (5 votes)

    Author Photo

    Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

    A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

    1 thought on “দর্শনের শাখা কয়টি ও কি কি | Branches of Philosophy”

    Leave a Comment

    close