বিভিন্ন কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা বঞ্চিত অবহেলিত হয়ে থাকে। নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বাধাসমূহ বা সমস্যাসমূহ (Constraints of Women Education) ভারতবর্ষের একটি অন্যতম দিক।
যুগ যুগ ধরে ভারতীয় সমাজে নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিকার ছিল ক্ষীন। শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থেকে নারীরা বঞ্চিত ও অবহেলিত থাকতো। সরকারি প্রচেষ্টা ছাড়াও রাজা রামমোহন রায় থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর প্রমূখ শিক্ষাবিদগণ নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
নারী শিক্ষা ভূমিকা (Women Education)
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) বলেছিলেন – একটি ডানার সাহায্যে পাখি যেমন আকাশে উড়তে পারে না, তেমনি শুধুমাত্র পুরুষজাতি শিক্ষিত হলে সামাজিক সুস্থতা বজায় থাকে না।
তাই নারীদের শিক্ষার মধ্য দিয়ে আগে তুলতে হবে। তবেই সমাজের কল্যাণ সাধন সম্ভবপর হবে।
গ্রীক যোদ্ধা Napoleon বলেছেন – “Give me a few educated mothers; I shall give you a heroic race.” অর্থাৎ “আমাকে কয়েকটা শিক্ষিত মা দাও; আমি তোমাকে বীরের জাতি দেব।”
নারী শিক্ষা বিস্তারে বাধা বা সমস্যা (Constraints of Women Education)
প্রাচীনকাল থেকে সমাজে নারীরা ছিল অবহেলিত, শোষিত ও বঞ্চিত। স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে শিক্ষার হার বিশেষত নারী শিক্ষার (Women Education) ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয় না।
নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ প্রমুখ শিক্ষাবিদদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধানে নারীদের শিক্ষার প্রসারে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজের বিভিন্ন সময়ে নারীরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে গঠিত হলেও নারী শিক্ষার অগ্রগতি সন্তোষজনক হয়নি। নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে সমস্ত বাধা বা সমস্যা পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. নারী শিক্ষার সামাজিক বাধা (Social Constraints of Women Education)
নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হল সামাজিক বাধা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী শিক্ষা বিশেষভাবে অবহেলিত হয়। কুসংস্কার যুক্ত সমাজে নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন সহজে সম্ভবপর হয় না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা গৃহের মধ্যে বন্দী থাকতো। ফলে তাদের জন্য যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হতো না।
নারী শিক্ষার যে সমস্ত সামাজিক বাধাগুলি নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলে সেগুলি হল –
- পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্য।
- সমাজের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব।
- অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার যুক্ত মানসিকতা।
- বাল্যবিবাহ।
- অন্ধধর্ম বিশ্বাস বা ধর্মীয় বিভাজন করা প্রভৃতি।
2. নারী শিক্ষার মনস্তাত্ত্বিক বাধা (Psychological Constraints of Women Education)
নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হল ব্যক্তিদের মানসিকতা বা মনস্তাত্ত্বিক বাধা। সমাজে নারীদের নিয়ে নানা মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। যেগুলি কুসংস্কার যুক্ত ও আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নয়। সেই কারণে মেয়েদেরকে গৃহে বন্দী থাকতে হয় বা পর্দা প্রথার আড়ালে থাকতে হয়।
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত মনস্তাত্ত্বিক বাধাগুলি রয়েছে, সেগুলি হল –
- অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কার যুক্ত মানসিকতা।
- মেয়েদের শিক্ষার প্রতি পিতা মাতার উদাসীনতা।
- মহিলা শিক্ষকের অভাব। কারণ অনেক অভিভাবক মেয়েদেরকে ছেলেদের স্কুলে পড়াতে চায় না।
- লিঙ্গ বৈষম্য। অর্থাৎ নারী পুরুষ বিভেদ করা প্রভৃতি।
3. নারী শিক্ষার অর্থনৈতিক বাধা (Economical Constraints of Women Education)
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হল অর্থনৈতিক বাধা। ভারতবর্ষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম দেশ। সেক্ষেত্রে মহিলাদের শিক্ষার জন্য অভিভাবকরা অর্থনৈতিক সংস্থান করে উঠতে পারে না। তাই অর্থনৈতিক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বাধা।
নারী শিক্ষা অর্থনৈতিক যে সমস্ত বাধাগুলি পরিলক্ষিত হয়, তা হল –
- পিতা-মাতার দারিদ্রতা।
- শিশুশ্রম। অর্থাৎ অর্থনৈতিক বাধার ফলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে। সেই জন্য তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়।
- অর্থনৈতিক বৈষম্য। যেটি সমাজের ক্ষেত্রে জ্বলন্ত সমস্যা।
4. নারী শিক্ষার রাজনৈতিক বাধা (Political Constraints of Women Education)
নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা একটি অন্যতম বাধা। রাজনৈতিক ক্ষমতা নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা স্বরূপ। কারণ মেয়েদের রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের অনিচ্ছা।
নারী শিক্ষার সমস্ত রাজনৈতিক বাধা গুলি পরিলক্ষিত হয়, তা হল –
- রাজনীতির শিকার বা রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়।
- মহিলাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অনীহা বা রাজনৈতিক ভীতি।
- দুর্নীতি, স্বজন পোষণ ফলে নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা থেকে নারীরা বঞ্চিত হয়।
👉 আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now
👉 নারী শিক্ষা প্রজেক্ট (Women Education Project) – নারী শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের বা টপিকের প্রজেক্ট করার জন্য এই লিংকে https://edutiips.com/category/women-education/ ভিজিট কর।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায় নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আজকের নারীরা সমাজের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ বর্তমান যুগে নারী ক্ষমতায়নের (women empowerment) হচ্ছে। সেই কারণে আজকের নারীদের বিভিন্ন শীর্ষপদে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে।
তাছাড়া নারীরা আজকের দেশের মুখ্যমন্ত্রীর স্থানও আলো করে রয়েছে। এদিক থেকে বিচার করে বলা যায়, নারী শিক্ষার ধীর অগ্রগতি হলেও নারী শিক্ষার বিশ্বাস সাধন বর্তমানে সম্ভবপর হচ্ছে।
তথ্যসূত্র (References)
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
- Internet Sources
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি কি কি?
উত্তর – নারী শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য গুলি হল –
১. নারীদের শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিকে প্রতিষ্ঠিত করা।
২. অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা।
৩. বৃত্তি শিক্ষা বা বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দান।
৪. সমাজ গঠনের উপযুক্ত সদস্য হিসেবে যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা।
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার প্রধান বাধাগুলি কি কি?
উত্তর – নারী শিক্ষার প্রধান বাধাগুলি হল – বাল্যবিবাহ, দারিদ্রতা, কুসংস্কার যুক্ততা, শিশুশ্রম, সরকারি উদাসীনতা প্রভৃতি।
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার সমস্যা সমাধান কিভাবে সম্ভব?
উত্তর – নারী শিক্ষার বিস্তারে সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য যে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত তা হল –
১. বাল্যবিবাহ ও পণ প্রথা দূর করতে সচেষ্ট হওয়া।
২. সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩. দারিদ্র দূরীকরণ।
৪. লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি।
প্রশ্ন – নারী শিক্ষা প্রজেক্ট
উত্তর – নারী শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের বা টপিকের প্রজেক্ট করার জন্য এই লিংকে https://edutiips.com/category/women-education/ ভিজিট কর।
প্রশ্ন – বিশ্ব নারী দিবস কবে পালিত হয়?
উত্তর – বিশ্ব নারী দিবস ৮ই মার্চ পালিত হয়।
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার সামাজিক বাধা গুলি কি কি?
উত্তর – নারী শিক্ষার সামাজিক বাধা গুলি হল – পণপ্রথা, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার প্রভৃতি।
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার মনস্তাত্ত্বিক বাধা গুলি কি কি?
উত্তর – নারী শিক্ষার মনস্তাত্ত্বিক বাধা গুলি হল –
১. অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কার যুক্ত মানসিকতা।
২. মেয়েদের শিক্ষার প্রতি পিতা মাতার উদাসীনতা।
৩. মহিলা শিক্ষকের অভাব। কারণ অনেক অভিভাবক মেয়েদেরকে ছেলেদের স্কুলে পড়াতে চায় না।
আরোও পড়ুন
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)
- Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ
- Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ
- নারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান : Missionaries’ Contribution to Women Education