Secondary Group: মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্য

মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী (Secondary Group) নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়। তাই যে গোষ্ঠির সদস্যদের মধ্যে মুখোমুখি বা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না বরং নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়, তাকে মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী বলে।

মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী বা Madhyamik Gosthi সমাজের মধ্যে একটি অন্যতম গোষ্ঠী। অর্থাৎ সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে মাধ্যমিক গোষ্ঠী হল বিশেষ প্রকার গোষ্ঠী। প্রাথমিক গোষ্ঠীর পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে মাধ্যমিক গোষ্ঠী গঠিত হয়।

গৌণ গোষ্ঠী কি (Concept of Secondary Group)

সাধারণভাবে কোনো উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বা পরোক্ষ সম্পর্কের ভিত্তিতে সমাজে কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন স্থাপিত হয়, তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। এই প্রকার গোষ্ঠী নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয়। তাই এই প্রকার গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

মাধ্যমিক গোষ্ঠী বা গৌণ গোষ্ঠীর উদাহরণ (Example of Secondary Group) –

সমাজে মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর অন্যতম উদাহরণগুলি হল –

  • শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
  • ক্রেতা ও বিক্রেতা
  • ভোটদাতা ও ভোটপ্রার্থী
  • উকিল ও মক্কেল
  • বিদ্যালয়
  • ধর্মীয় গোষ্ঠী

গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে (Definition of Secondary Group)

Concept and Definition of Secondary Group
Concept and Definition of Secondary Group

বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মাধ্যমিক গোষ্ঠী বা গৌণ গোষ্ঠীকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সমাজতাত্ত্বিকদের দেওয়া সংজ্ঞাগুলি নিম্নলিখিত –

বিশিষ্ট সমাজবিদ C. H. Cooley বলেছেন – “Secondary groups are those in which primary and  semi-primary characteristics are absent.” অর্থাৎ যে গোষ্ঠীতে প্রাথমিক এবং আধা-প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যগুলি অনুপস্থিত, তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে।

সমাজবিদ্‌ ওগবার্ন (Ogburn) বলেন – “The group which provide experience lacking in intimacy are called secondary groups.” অর্থাৎ যে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অন্তরঙ্গতা কম, সেই অনুযায়ী অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়, তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে।

আবার, Danis বলেছেন – “Secondary groups can be broadly defined as opposite to primary groups.” অর্থাৎ মাধ্যমিক গোষ্ঠীগুলিকে প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির বিপরীত হিসাবে বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Secondary Group)

মাধ্যমিক গোষ্ঠীকে বিশ্লেষণ করলে এর যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য পরিল ।ক্ষিত হয়, সেগুলি নিম্নলিখিত –

1. আকৃতিতে বৃহৎ

মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর আকৃতি বৃহৎ প্রকৃতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ অনেক সংখ্যক মানুষের নিয়ে এই গোষ্ঠী গঠিত হয়। তাই মাধ্যমিক গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে না।

2. উদ্দেশ্য নির্ভর

মাধ্যমিক গোষ্ঠী নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয়। মানুষের প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে সদস্যদের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপিত হয়। তাই মাধ্যমিক গোষ্ঠীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উদ্দেশ্য নির্ভরতা।

3. সদস্যপদ

মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর সদস্য পদ ঐচ্ছিক প্রকৃতির। অর্থাৎ এই গোষ্ঠীতে সদস্যপদ বাধ্যতামূলক নয়। যখন খুশি এই গোষ্ঠীতে যুক্ত হওয়া যায় আবার যখন খুশি এই গোষ্ঠী থেকে বের হওয়া যায়। তাই এই গোষ্ঠীর সদস্যপদ ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে থাকে।

4. পরোক্ষ সম্পর্ক

প্রাথমিক গোষ্ঠী মতো এই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গঠিত হয় না। অর্থাৎ মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক পরোক্ষ প্রকৃতির। এখানে সদস্যদের মধ্যে কোন ব্যক্তিগত পরিচয় বিশেষভাবে থাকে না।

5. অস্থায়ী প্রকৃতির

মাধ্যমিক গোষ্ঠী বা গৌণ গোষ্ঠী নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়, তাই এটি অস্থায়ী প্রকৃতির।

6. পরোক্ষ সহযোগিতামূলক

এই গোষ্ঠীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পরোক্ষ সহযোগিতামূলক। অর্থাৎ গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা পরোক্ষ প্রকৃতির হয়ে থাকে।

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্যসামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকাশিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational Significance of Secondary Group)

প্রাথমিক গোষ্ঠীর মতো মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী সমাজের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী। মাধ্যমিক গোষ্ঠীর যে সমস্ত শিক্ষাগত তাৎপর্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

  • মাধ্যমিক গোষ্ঠী ব্যক্তিদের সামাজিক গুনাবলির বিকাশ সাধন করে থাকে।
  • মাধ্যমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশ লাভ সম্ভব করা হয়।
  • এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যক্তি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে। বা ব্যক্তিকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।
  • জাতীয় সংহতের বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক গোষ্ঠীর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
  • গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে মাধ্যমিক গোষ্ঠী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, মাধ্যমিক গোষ্ঠী বা গৌণ গোষ্ঠী সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে গোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে। কারিগরি, শিল্প, প্রযুক্তি, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে গৌণ গোষ্ঠীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই সমাজের গৌণ গোষ্ঠী অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করে থাকে। ফলে সমাজব্যবস্থা গঠন সম্ভবপর হয়। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে সমাজের মানুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভবপর হয় ও আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সহজসাধ্য হয়।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.

প্রশ্ন – মাধ্যমিক গোষ্ঠীর ধারণা কি? (what is secondary group?)

উত্তর – মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী হল প্রাথমিক গোষ্ঠীর বিপরীতধর্মী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের মধ্যে দৈহিক নৈকট্য পরিলক্ষিত হয় না।

প্রশ্ন – মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর – মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠীর দুটি উদাহরণ হল –
১. শিক্ষক ও শিক্ষার্থী,
২. ক্রেতা ও বিক্রেতা।

প্রশ্ন – মাধ্যমিক গোষ্ঠীর কাজ কি? (What role do secondary groups play in society?)

উত্তর – মাধ্যমিক গোষ্ঠীর অন্যতম কাজ হল গোষ্ঠীর সদস্যদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিকরণ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান, অভিযোজনে সহায়তা করা, ব্যক্তিত্বের সুষম বিকাশ সাধন প্রভৃতি।

প্রশ্ন – মাধ্যমিক গোষ্ঠীর শিক্ষাগত তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তর – মাধ্যমিক গোষ্ঠীর শিক্ষাগত তাৎপর্য হল – জাতীয় সংহতি রক্ষা করা, অন্ধবিশ্বাস সংস্কার দূরীকরণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি করন প্রভৃতি।

প্রশ্ন – গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে

উত্তর – যে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অন্তরঙ্গতা কম, সেই অনুযায়ী অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়, তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। তাই যে গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি, সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা অন্তরঙ্গতা কম হয়ে থাকে ও যে গোষ্ঠী নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে।

আরোও পড়ুন

1 thought on “Secondary Group: মাধ্যমিক বা গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্য”

  1. অস্থায়ী গোষ্ঠীর উদাহরণ দাও
    উত্তর – বাসে, ট্রামে, ট্রেনে ও দুর্ঘটনাস্থানে বা জনসভায় তাৎক্ষণিক সময়ের জন্য যে গোষ্ঠী সৃষ্টি হয় তাকে অস্থায়ী গোষ্ঠী বলে। যেমন – জনসভা, দুর্ঘটনা জনিত স্থান, বাসে যাতায়াতের সময় আলাপ পরিচয় প্রভৃতি।

    Reply

Leave a Comment

close