1947 সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠন হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল ভক্তবৎসলম কমিটি (Bhaktavatsalam Committee)।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষে নারী শিক্ষার হার সন্তোষজনক ছিল না। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ সুবিধা প্রদান ও নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রকার কমিশন ও কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল ভক্তবৎসলম কমিটি। এখানে ভক্তবৎসলম কমিটির নারী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও নারী শিক্ষার প্রসারের সুপারিশগুলি আলোচনা করা হল –
ভক্তবৎসলম কমিটি (Bhaktavatsalam Committee)
1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর নারী শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়ন সম্পর্কে পরামর্শ দানের জন্য 1963 সালে নারী শিক্ষার জাতীয় পরিষদ বা NCWE (National Council for Women’s Education) নামে মাদ্রাজের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভক্তবৎসলমের নেতৃত্বে একটি সাব-কমিটি (Sub-Committee) গঠন করেন। নারীশিক্ষার ইতিহাসে সেটি ভক্তবৎসলম কমিটি নামে খ্যাত।
নারী শিক্ষায় ভক্তবৎসলম কমিটির উদ্দেশ্য (Objectives of Bhaktavatsalam Committee on Women Education)
নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে ভক্তবৎসলম কমিটির (Bhaktavatsalam Committee) যে সমস্ত উদ্দেশ্যগুলি বর্তমান, সেগুলি হল –
- গ্রামাঞ্চলে নারীদের দ্রুত শিক্ষার প্রসার ঘটানো.
- বিদ্যালয়ের উন্নতি সাধন বা সংস্কারসাধন।
- ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ।
- মেয়েদের শিক্ষার জন্য সেমিনার, আলোচনা সভা, পুস্তক প্রকাশ প্রভৃতির ব্যবস্থা করা।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now
নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ (Recommendations of Bhaktavatsalam Committee on Women Education)
হংসরাজ মেহেতা কমিটির নারী শিক্ষার সুপারিশগুলি বিশ্লেষণ ও গ্রামাঞ্চলে নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে ও বিস্তার সাধনে 1963 সালে গঠিত ভক্তবৎসলম কমিটির (Bhaktavatsalam Committee) ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে ভক্তবৎসলম কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল –
1. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা
নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে রাজ্যের উচিত বেশি সংখ্যায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, পাহাড়ি ও দূরবর্তী অঞ্চলে। তাছাড়া নারী শিক্ষার জন্য জনগণের সাহায্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সুপারিশ করা হয়
2. বৈচিত্রধর্মী পাঠক্রম
নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে ভক্তবৎসলম কমিটির অন্যতম সুপারিশ হল পাঠক্রম হবে বৈচিত্র ধর্মী ও জীবনমুখী। যাতে মেয়েরা শিক্ষার প্রতি অধিক আগ্রহী হতে পারে। বিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজকর্ম ও শিক্ষামূলক কার্যাবলী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেটি শিক্ষার্থীদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
3. মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে অধিক সংখ্যক মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে। এর ফলে অভিভাবকগণ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হবে এবং মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহী হবে। তাছাড়া শিক্ষিকা হবার জন্য মেয়েদেরকে উৎসাহিত করতে হবে এবং চাকুরীর অবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে।
4. হোস্টেলের ব্যবস্থা
দূরবর্তী ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য যথোপযুক্ত হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের শিক্ষিকাদের জন্য থাকার সুবন্দোবস্ত করতে হবে। অর্থাৎ যে সমস্ত মহিলা শিক্ষিকাগণ দূরবর্তী স্থানে চাকরি করবে সেখানে যাতে থেকে শিক্ষকতা করতে পারেন তার জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কমিটি মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়ির কাছাকাছি গ্রামের কাছাকাছি স্কুলগুলিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছেন।
5. ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার
কমিটি মেয়েদেরকে শিক্ষাক্ষেত্রে বা বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের নারীদেরকে শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন।
6. মহিলা পরিদর্শক নিয়োগ
নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে রক্তপাত সালাম কমিটি বিদ্যালয়গুলিতে মহিলা পরিদর্শক নিয়োগের সুপারিশ করেছেন। তাছাড়া শিক্ষিকাদের বিনা ভাড়ায় বিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন।
নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা | নারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ |
সর্বোপরি বলা যায়, উপরের সুপারিশগুলি ছাড়াও নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনে ভক্তবৎসলম কমিটির (Bhaktavatsalam Committee) অন্যান্য সুপারিশগুলি হল –
- দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রীদের জন্য স্কুল থেকে বিনামূল্যে পোশাক ও বই দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
- মহিলাদের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ করার জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
- সাংসারিক মহিলাদের জন্য গ্রামে আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষকতার সুযোগ দিতে হবে।
- মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের পরিবেশ উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।
- প্রাথমিক স্তরে সহ শিক্ষার প্রচলন এবং বেসরকারি উদ্যোগের সাহায্য নিয়ে নতুন বিদ্যালয় ভবন তৈরি করতে হবে।
তথ্যসূত্র – Gupta, N.L. (2003). Women’s Education Through Ages, Concept Publications Co, New Delhi.
প্রশ্ন – ভক্তবৎসলম কমিটি কবে কেন গঠিত হয়?
উত্তর – গ্রামাঞ্চলে নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে1963 সালে নারী শিক্ষার জাতীয় পরিষদ বা NCWE (National Council for Women’s Education) নামে মাদ্রাজের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভক্তবৎসলমের নেতৃত্বে ভক্তবৎসলাম কমিটি গঠিত হয়।
প্রশ্ন – NCWE পুরো নাম কি?
উত্তর – NCWE -এর পুরো নাম হল – National Council for Women’s Education.
প্রশ্ন – নারী শিক্ষার সমস্যা গুলো কি কি?
উত্তর – নারী শিক্ষার প্রধান সমস্যাগুলি হল – অর্থনৈতিক সমস্যা, বাল্যবিবাহ, মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, রাজনৈতিক সমস্যা প্রভৃতি
আরোও পড়ুন
- যোগাযোগ কাকে বলে | যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য | What is Definition of Communication
- যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান | 8 Essential Components of Communication
- শিক্ষার সমাজতত্ত্বের পরিধি | Scope of Sociology of Education
- সামাজিক স্তরবিন্যাস কি | সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন | Types of Social Stratification
- Social Mobility: সামাজিক সচলতা কাকে বলে | সামাজিক সচলতার বৈশিষ্ট্য
- Types of Social Mobility: সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- শিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা | Socialization Process
2 thoughts on “Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ”