নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | Kothari Commission on Women’s Education

স্বাধীনতার পর শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে গঠিত কমিশন গুলির মধ্যে অন্যতম হল কোঠারি কমিশন। । শিক্ষার বিভিন্ন দিকে উন্নতিকল্পে সুপারিশের পাশাপাশি নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ (Kothari Commission on Women’s Education) -গুলি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার পর ভারতে শিক্ষার বিশিষ্ট নারী শিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশন। কোঠারি কমিশন ১৯৬৪ ৬৪ সালে ডক্টর ডিএস কোঠারি নেতৃত্বে গঠিত হয়। এই কমিশন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেন। তাদের মধ্যে একটি অন্যতম সুপারিশ ছিল নারী শিক্ষা সম্পর্কিত। যেটি এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | Kothari Commission on Women’s Education

স্বাধীনতার পর গঠিত কোঠারি কমিশন নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুপারিশ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন। নারী শিক্ষা বিষয়ে কমিশন পূর্ববর্তী বিভিন্ন নারী শিক্ষা কমিটি ও কমিশনের সুপারিশগুলিকে কার্যকর করার কথা বলেছেন।

নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সুপারিশ গুলি হল নিম্নলিখিত –

1. লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ

নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে কোঠারি কমিশন লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলেছেন। তাই কমিশন বলেন – ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার ব্যবধান দূর করতে হবে এবং এ বিষয়ে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

2. বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান

নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য নারীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয়, হোস্টেল, স্কলারশিপ প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। তাই নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলির মধ্যে অন্যতম হল নারীদের শিক্ষার জন্য যাবতীয় বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।

3. মহিলা কলেজ স্থাপন

কোঠারি কমিশন নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য স্থানীয় প্রয়োজন অনুযায়ী মহিলা কলেজ স্থাপন করতে হবে। এই সমস্ত কলেজগুলিতে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের আগ্রহ ও প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠক্রমের বিন্যাস সাধন করতে হবে।

4. মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ

কোঠারি কমিশন বলেন – নারী শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় বা কলেজ গুলিতে শিক্ষকতার জন্য মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগের বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। অর্থাৎ স্কুল, কলেজ গুলিতে মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে।

5. গবেষণা একক প্রতিষ্ঠা

নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলির মধ্যে অন্যতম হল গবেষণার একক প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ নারী শিক্ষার বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একটি বা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা একক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

6. প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিকরণ

কমিশন বলেন – নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। কারণ এখান থেকেই অপচয় ও অনুন্নয়ন হয়ে থাকে। তাহলে নারী শিক্ষার আর ব্যাহত হয়। তাছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার অনুন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন।

এগুলি ছাড়াও নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ সুপারিশ গুলি হল –

i) নারী শিক্ষার প্রচার ও উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।

ii) মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার সাধন করতে হবে,

iii) নারী শিক্ষার সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বিশেষ কর্মসূচি বলে বিবেচিত হবে।

iv) মাধ্যমিক স্তরে আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষার অনুপাত 2:1 করতে হবে.,

v) নারী শিক্ষার অগ্রগতি প্রসাদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে বিশেষ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগ নারী শিক্ষার প্রসার সম্ভব।

vi) কোঠারি কমিশন নারী শিক্ষার পাঠক্রম হিসাবে বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছেন। যেমন – কলা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি।

নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকানারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ
নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি (Kothari Commission on Women’s Education) খুবই মূল্যবান। কমিশন বলেন যে – বর্তমান যুগে গৃহ ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও নারীদের ভূমিকা আরও বিস্তৃত। অর্থাৎ সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। তাই সামাজিক উন্নয়নে পুরুষ ও নারীদের দায়িত্ব সমান। কোনো অংশে নারীরা পুরুষের থেকে কম নয়।

তাছাড়া কোঠারি কমিশন নারী শিক্ষার জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন যেমন – রাধাকৃষ্ণন কমিশন, মুদালিয়র কমিশন, ভক্তবৎসলম কমিটি, দূর্গাবাই দেশমুখো কমিটি, হংসরাজ মেহেতা কমিটি প্রভৃতির সুপারিশ গুলিকে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Basabi Chakrabarti, Women’s Studies: Various Aspects. Urbi Prakashani 2014
  • Betty Friedan. The Feminine Mystique. New York: Norton, 1963
  • Geraldine Forbes, Women in Modern India Cambridge University Press, 1996.
  • Mary E. John. “Women’s Studies in India: A reader” Penguin Books. 2008
  • Internet Sources

প্রশ্ন – কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি কি কি?

উত্তর – শিক্ষার বিভিন্ন দিকে কোঠারি কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল – প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, বৃত্তি শিক্ষা, শিক্ষায় সমসুযোগ প্রভৃতি।

প্রশ্ন – নারী শিক্ষা সংক্রান্ত কোঠারি কমিশনের দুটি সুপারিশ লেখো।

উত্তর – নারী শিক্ষা সংক্রান্ত কোঠারি কমিশনের দুটি সুপারিশ হল – মেয়েদের শিক্ষার সম্প্রসারণ করা এবং শিক্ষার উন্নতিকল্পে মহিলা বিদ্যালয় তৈরি করা।

আরোও পড়ুন

1 thought on “নারী শিক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশ | Kothari Commission on Women’s Education”

Leave a Comment

close