স্বাধীন ভারতে নারী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ও প্রথম কমিটি হল দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটি (Durgabai Deshmukh Committee)।
স্বাধীন ভারতে শিক্ষার হার বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার সন্তোষজনক ছিল না। তাই স্বাধীনতার পর নারী শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন কমিশন কমিটি গঠিত হয়। রাধাকৃষ্ণন কমিশন (1948-1949 সাল), কোঠারি কমিশন (1962-1964 সাল), মুদালিয়ার কমিশন (1952 সাল) প্রভৃতি কমিশন নারী শিক্ষার বিস্তারে বিশেষ সুপারিশ করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনে বিভিন্ন বাধা পরিলক্ষিত হয়। আর এই সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে স্বাধীন ভারতের সর্বপ্রথম নারী শিক্ষা কমিটি গঠিত হয়। যেটি দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির (Durgabai Deshmukh Committee) নামে পরিচিত।
দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটি (Durgabai Deshmukh Committee)
1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর নারী শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়ন সম্পর্কে পরামর্শ দানের জন্য দেশের মধ্যে প্রথম 1958 সালে 19শে মে ভারত সরকার নারী শিক্ষার জাতীয় কমিটি বা NCWE (National Committee on Women’s Education) নামে দূর্গাবাঈ দেশমুখের কমিটি নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। নারীশিক্ষার ইতিহাসে সেটি দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটি নামে খ্যাত। 1959 সালের জানুয়ারি মাসে কমিটি তার রিপোর্টটি প্রেস করেন।
নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির উদ্দেশ্য (Objectives of Durgabai Deshmukh Committee on Women Education)
নারী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির (Durgabai Deshmukh Committee) যে সমস্ত উদ্দেশ্যগুলি বর্তমান, সেগুলি হল –
- নারী শিক্ষার প্রসার ও উন্নতি সাধন।
- শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান।
- নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীদের স্বাধীনতা প্রদান।
- মহিলাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলা।
- শিক্ষার মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণ।
- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষা প্রসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now
নারী শিক্ষা সংক্রান্ত দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ (Recommendations of Durgabai Deshmukh Committee on Women Education)
গ্রামাঞ্চলে নারী শিক্ষার ও বিস্তার সাধনে 1958 সালে গঠিত দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির (Durgabai Deshmukh Committee) ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। নারী শিক্ষার বিস্তারসাধনের ক্ষেত্রে দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল –
1. নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ
কমিটির অন্যতম সুপারিশ হল সমাজের মধ্যে নারী পুরুষের মধ্যে শিক্ষার মানের যে পার্থক্য রয়েছে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূরীকরণ করা। এর জন্য বিদ্যালয় গুলিতে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করার সুপারিশ করেন।
2. পাঠক্রমের সংস্কার
নারী শিক্ষার জন্য পাঠক্রমকে বিজ্ঞানসম্মত করার কথা বলেছেন। প্রাথমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের পাঠক্রম একই হবে ও পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে ভাষা, সাহিত্য, সংগীত সেলাই প্রভৃতি। তবে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে পাঠক্রম মধ্যে বৈচিত্র থাকবে।
3. বৃত্তিগত ও পেশাগত শিক্ষার ব্যবস্থা
বৃত্তি ও পেশাগত শিক্ষার ব্যাপারে কমিটি বিশেষ সুপারিশ করেছেন। কমিটি বলেছেন বাণিজ্য, হস্তশিল্প, কৃষি, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি পেশায় যাতে মহিলারা বেশি সংখ্যায় আসতে পারে তার জন্য বিশেষ স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বৃত্তিশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
4. ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠা
মহিলাদের শিক্ষকতার কাজে দক্ষ ও উপযুক্ত করে তোলার জন্য মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়। অর্থাৎ মহিলারা যাতে শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারে তার জন্য তাদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়।
5. উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ
নারী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল – মহিলাদের শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধা প্রদান, মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ, বাড়ির কাছাকাছি নিয়োগ, দুর্গম পার্বত্য এলাকার মহিলাদের বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা, হোস্টেলের সুযোগ সুবিধা প্রভৃতি।
নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা | নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা |
নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ | নারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ |
সর্বোপরি বলা যায়, উপরের সুপারিশগুলি ছাড়াও নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনে দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির (Durgabai Deshmukh Committee) অন্যান্য সুপারিশগুলি হল –
- ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদেরকে সার্বজনীন ভর্তি সুনিশ্চিত পালন করা।
- নারী শিক্ষার উন্নয়নে CABE বা কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন।
- মিড ডে মিল এর ব্যবস্থা করা।
- হোস্টেল ও স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করা।
- বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে নিযুক্ত আছে সেই সমস্ত মহিলাদের আংশিক সময়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
- গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই ও অন্যান্য উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- যে সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকা নেই সেখানে গুরুমা নিয়োগ করা
- মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন. তবে যে সমস্ত অঞ্চলে বিদ্যালয়ে স্থাপন করা সমস্যা সেক্ষেত্রে সহশিক্ষার (Co-education) ব্যবস্থা করা।
তথ্যসূত্র – Click Here
প্রশ্ন – দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটি কবে কেন গঠিত হয়?
উত্তর – নারী শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে 1958 সালে 19শে মে ভারত সরকার নারী শিক্ষার জাতীয় কমিটি বা NCWE (National Committee on Women’s Education) নামে দূর্গাবাঈ দেশমুখের কমিটি নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়।
প্রশ্ন – NCWE পুরো নাম কি?
উত্তর – NCWE -এর পুরো নাম হল – National Committee on Women’s Education. অর্থাৎ নারী শিক্ষার জাতীয় কমিটি। এটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয়।
প্রশ্ন – দূর্গাবাই দেশমুখ কমিটির দুটি সুপারিশ লেখো।
উত্তর – দুর্গাবাই দেশমুখ কমিটির দুটি সুপারিশ হল –
১. নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন,
২. নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন।
প্রশ্ন – CABE -এর পুরো নাম কি?
উত্তর – CABE -এর পুরো নাম হল Central Advisory Board of Education বা কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ।
আরোও পড়ুন
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)
- Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ
- Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ
- নারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান : Missionaries’ Contribution to Women Education
- নারী শিক্ষা ভূমিকা | নারী শিক্ষা বিস্তারের বাধাসমূহ (4 Main Constraints of Women Education)
- নারী শিক্ষা বিষয়ে ভারতীয় শিক্ষাবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি ভূমিকা (Indian Female Educationist)
- ভারতে নারী শিক্ষার ইতিহাস | History of Women’s Education
1 thought on “Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ”