প্রাচীনকালে সমাজে নারীদের ক্ষমতায়নের কোনো উদ্যোগ ছিল না। কিন্তু আধুনিক সমাজে নারী শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন (Women Empowerment) বিষয়টির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।
নারী ক্ষমতায়ন হল উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে মেয়েদের বা নারীদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়-দায়িত্ব পালনে অংশগ্রহণ করানো। এর মধ্য দিয়ে সমাজ উন্নতি সম্ভব। অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারী ক্ষমতায়ন বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এখানে নারী ক্ষমতায়ন কি ? নারী ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য আলোচনা করা হল।
নারীর ক্ষমতায়ন | Meaning of Women Empowerment
নারীর ক্ষমতায়ন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল – নারীদের বা মেয়েদেরকে উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সব রকম দায়-দায়িত্ব বা সমাজ গঠনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সরকারি প্রচেষ্টা, বেসরকারি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রচেষ্টায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অধিকারকে অনেকখানি সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রাচীন কুসংস্কার যুক্ত সমাজে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার ছিল না। কিন্তু বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, ভগিনী নিবেদিতা, বেগম রোকেয়া প্রমুখগণের চেষ্টায় নারী শিক্ষার অগ্রগতি সাধন হয়েছিল।
তাই নারীর ক্ষমতায়ন হল শিক্ষার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ জীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপে নারীকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে নারীরা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং বিভিন্ন বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।
তাই সামাজিক বৈষম্য, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা প্রভৃতি থেকে মুক্তি দেয়া ও নারীদের যথাযথভাবে শিক্ষার মাধ্যমে তাদের সার্বিক উন্নতি সাধন করা হল, নারী ক্ষমতায়ন।
নারীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য
সমাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ক্ষমতা বিশেষ প্রয়োজন। কারণ নারী ক্ষমতায়ন ছাড়া এককভাবে পুরুষদের সাহায্যের সমাজ সুষ্ঠুভাবে সংঘটিত হতে পারে না। তাই নারী ক্ষমতায়নের আবশ্যিকতা পরিলক্ষিত হয়। নারী ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য যে সমস্ত দিক থেকে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ
নারী ক্ষমতায়নে অন্যতম উদ্দেশ্য হল লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ। কারণ সমাজে যতদিন লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে ততদিন নারী ক্ষমতায়ন সম্ভবপর নয়। তাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারী ক্ষমতায়ন করতে হলে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ বা নারী পুরুষ বিভেদ আগে দূর করতে হবে।
👉 আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now
2. গার্হস্থ হিংসা দূরীকরণ
নারী ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গার্হস্থ হিংসা দূরীকরণ করা সম্ভবপর হয়। অধিকাংশ পরিবারে পুরুষদের দ্বারা মহিলারা অত্যাচারিত হয়। তাই গার্হস্থ হিংসা দূরীকরণ করার জন্য শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বিশেষভাবে প্রয়োজন।
3. নারীদের সুরক্ষা প্রদান
আধুনিক সমাজে এখনো পর্যন্ত নারীদের সুরক্ষা নেই। অর্থাৎ বিভিন্ন সমাজে নারীরা সুরক্ষিত নয়। তাই নারী ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য হল নারীদের সুরক্ষা প্রদান করা। যাতে ঘরে বাইরে তারা সুরক্ষিত থাকে ও তাদের জীবন বিকাশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা হয়।
4. অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ
নারী ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ সম্ভবপর হয়। আর নারীরা শিক্ষিত হলে বিভিন্ন কাজের মধ্যে বা চাকুরীর মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। তাই অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য।
5. বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান
নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ তাদেরকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাই নায়েক ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য হল বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান করা।
6. সামাজিক ও পারিবারিক দায় দায়িত্ব পালন
নারী ক্ষমতায়ন হলে নারীরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে দায় দায়িত্ব পালন করতে পারবে। কারণ বর্তমানে বহু পরিবার রয়েছে যেখানে নারীরা সামাজিক দায় দায়িত্ব বা সংসারে যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন করা দরকার।
7. সৃজনশীলতার বিকাশ
প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু সৃজনশীলতা বর্তমান। তাই সৃজনশীলতার বিকাশ করার জন্য নারী ক্ষমতায়ান আবশ্যিক। তারা নারীদের যদি পিছিয়ে রাখা হয় তাহলে সৃজনশীলতার বিকাশ সম্ভব নয়। বর্তমানে মেয়েরা বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মধ্যে সংযুক্ত।
তাই নারী ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য হল নারীদের বা মেয়েদের মধ্যে যে সুপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে বা সৃজনশীলতা রয়েছে তা যথাযথভাবে বিকশিত করা।
8. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন
বর্তমানে নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নারী ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, নারী ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত সমাজে নারীরা পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। অর্থাৎ নারী ক্ষমতায়নে বিভিন্ন বাধা পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে দারিদ্র, বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব প্রভৃতি উল্লেখ করা যায়।
তাই নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে শুধু সরকারি প্রচেষ্টা নয় পাশাপাশি সমাজের মানুষকে কুসংস্কার মুক্ত করে এগিয়ে আসতে হবে। তবে নারীদের অগ্রগতি সম্ভব।
তথ্যসূত্র (References)
- Basabi Chakrabarti, Women’s Studies: Various Aspects. Urbi Prakashani 2014
- Betty Friedan. The Feminine Mystique. New York: Norton, 1963
- Geraldine Forbes, Women in Modern India Cambridge University Press, 1996.
- Mary E. John. “Women’s Studies in India: A reader” Penguin Books. 2008
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
- Internet Sources
প্রশ্ন – নারীর ক্ষমতায়নের দুটি উদ্দেশ্য লেখো
উত্তর – নারীর ক্ষমতায়নের দুটি উদ্দেশ্য হল – নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা এবং নারীদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা
আরোও পড়ুন
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)
- Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ
- Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ
- নারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান : Missionaries’ Contribution to Women Education
I love this. Thank you so much
Welcome