গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্ব আলোচনা | Guilford Theory of Intelligence

বুদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্ন তত্ত্ব পরিলক্ষিত হয়। বুদ্ধির বিভিন্ন তত্ত্বের ক্ষেত্রে গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্ব (Guilford Theory of Intelligence) বা গিলফোর্ডের বুদ্ধির ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব অন্যতম।

গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্ব | গিলফোর্ড এর ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব | Guilford Theory of Intelligence

1966 সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মনস্তত্ত্বের পরীক্ষাগারে একাধিক অভীক্ষায় প্রাপ্ত ফলের উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে গিলফোর্ড ও তার সহযোগীরা বুদ্ধির এক যুগান্তকারী তত্ত্ব প্রকাশ করেন। সেটি গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্ব বা গিলফোর্ডের বুদ্ধির ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব নামে পরিচিত।

গিলফোর্ড বলেন – ব্যক্তির মন একমাত্রিক নয়, এটি ত্রিমাত্রিক প্রকৃতির। তাই তিনি বুদ্ধির তত্ত্বে বুদ্ধিকে তিনটি মাত্রায় বিবেচনা করেন। তার বুদ্ধির তত্ত্ব অনুযায়ী এই তিনটি মাত্রা হল –

i) প্রক্রিয়াগত মাত্রা (Operational Dimention),

ii) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimention) ও

iii) উৎপাদনগত মাত্রা (Product Dimention)

Guilford Theory of Intelligence Diagram

1. প্রক্রিয়াগত মাত্রা (Operational Dimention)

গিলফোর্ডের মতে প্রক্রিয়াগত মাত্রা হল ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়া। গিলফোর্ড বুদ্ধির প্রক্রিয়াগত মাত্রার পাঁচটি শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল –

i) প্রজ্ঞা (Cognition)

এটি হল শিখন প্রক্রিয়ার বা বুদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানগত বিষয়ে অনুধাবন হয়ে থাকে।

ii) স্মৃতি (Memory)

স্মৃতি হল প্রাথমিক মানসিক প্রক্রিয়া যার দ্বারা জ্ঞানের বিষয়কে সংরক্ষণ করা যায় ও পুনরুদ্ধার করা যায়।

iii) কেন্দ্রাপসারি চিন্তন (Divergent Thinking)

চিন্তার ব্যক্তি বা সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে এটি বিশেষ কার্যকরী। এই চিন্তনে ব্যক্তি বিভিন্নভাবে চিন্তা করে। যার ফলে চিন্তার নতুন অন্বেষণের প্রসার ঘটে।

iv) কেন্দ্রানুগ চিন্তন

জানা তথ্য থেকে সবচেয়ে উপনীত হওয়া হল কেন্দ্রানুগ চিন্তন। এখানে নতুন করে অন্বেষণ করার সুযোগ দেখা যায় না। তবে জানা তথ্য প্রতিক্রিয়াকে নির্দিষ্ট করে।

v) মূল্যায়ন (Evaluation)

কোনো কিছু জানা বা হরণ করা বা উৎপাদন করা, যথার্থতা বিচার করাই হলো মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। এটি বুদ্ধির প্রক্রিয়াগত মাত্রার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

2. বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimention)

জ্ঞানমূলক তথ্যকে বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে গিলফোর্ড চারটি ভাগে ভাগ করেছেন, সেগুলি হল –

i) মূর্ত বিষয়বস্তু (Figural Content)

ব্যক্তির পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুধাবনযোগ্য মুর্ত বস্তু হল মুর্ত বিষয়বস্তু। এখানে বস্তু ছাড়া অন্য কিছু বোঝায় না। যেমন – দৃষ্টিগ্রাহ্য (রং, বস্তুর আকার প্রভৃতি)।

ii) বিমুর্ত বিষয়বস্তু (Sementic Content)

বিমূর্ত বিষয়বস্তু হল ভাষাগত বা ভাবগত বিষয়। যেমন – প্রবাদ বাক্য (অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী) প্রভৃতি।

iii) প্রতিকরূপী বিষয়বস্তু (Symbolic Content)

বিষয়বস্তুগত মাত্রার এটি অন্যতম দিক। এটি হল অক্ষর, সংখ্যা এবং অন্যান্য প্রথাগত সংকেত যা বিন্যস্ত থাকে। যেমন – বর্ণমালা, সংখ্যা, শ্রেণী প্রভৃতি।

iv) আচরনমূলক বিষয়বস্তু (Behavioural Content)

এটি হল সামাজিক আচরণ যার সাহায্যে নিজেদের এবং অন্যদের বোঝার এবং মেলামেশার ক্ষমতাকে বোঝায়। যেমন – বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব।

3. উৎপাদনগত মাত্রা (Product Dimention)

গিলফোর্ড বলেছেন – যখন কোনো বিষয়বস্তুর উপর প্রক্রিয়া কার্যকরী হয়, তখন 6 ধরনের ফলশ্রুতি পরিলক্ষিত হয় তখন সেগুলিকে উৎপাদনগত বা ফলশ্রুতি গত মাত্রা বলে। এগুলি হল –

i) একক (Unit)

কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে দৃষ্টি, , শ্রুতি এবং প্রতীক সহ জ্ঞান অর্জন করার ক্ষমতা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

ii) শ্রেণী (Class)

কোনো শব্দ বা ভাবধারাকে শ্রেণীবদ্ধ করার ক্ষমতা। তাই বুদ্ধি এটি উৎপাদনগত মাত্রার মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ শ্রেণীর মাধ্যমে ব্যক্তি সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিভিন্ন বিষয়কে শ্রেণীকরণ করতে পারে।

iii) সম্পর্ক (Relation)

বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক বিধানের ক্ষমতা ও দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের ধারণা এই শ্রেণীর অন্তর্গত। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সাদৃশ্য, বই সাদৃশ্য ইত্যাদি নির্ণয় করতে পারে।

iv) ব্যবস্থাপনা (System)

এটি উৎপাদনগত মাত্রার একটি অন্যতম দিক। সংগঠন, সমাধানের জন্য সমস্যা সংগঠন, সিস্টেমের মধ্যে কোন একটি ধারণার বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা প্রভৃতি এর অন্তর্গত।

v) পরিবর্তনশীলতা (Transformations)

কোনো বস্তুর রুপান্তর করলে কি হয় বা বর্তমানে কোন ঘটনার পরিবর্তন হলে কি হবে তা এই অংশের মধ্যে অন্তর্গত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোনো তথ্যকে পরিবর্তন করতে পারে, নতুন ভাবে বিবৃতি গঠন করতে পারে।

vi) তাৎপর্য বিচার (Implications)

এটি উৎপাদনগত মাত্রার গুরুত্বপূর্ণ এবং শেষ মাত্রা। এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, ধারণা ইত্যাদি দিয়ে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রত্যাশামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

গিলফোর্ড বুদ্ধি তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য

গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্ব আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই তত্ত্বের মাধ্যমে –

i) দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণ,

ii) শিক্ষামূলক নির্দেশনা দান,

iii) বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দান

iv) পাঠক্রম নির্ধারণ এবং

v) অপসারী চিন্তনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান প্রভৃতি করা যায়।

তাই বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে এই তথ্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও এটি বুদ্ধের ত্রিমাত্রিক দিকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাবিত করেছে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্বে (Guilford Theory of Intelligence) প্রক্রিয়াগত মাত্রার পাঁচটি, বিষয়বস্তুগত মাত্রা চারটি ও উৎপাদনগত মাত্রা ছয়টি শ্রেণি নিয়ে মোট 5x4x6=120টি বুদ্ধির উপাদান আছে। বর্তমানে বিষয়বস্তুগত মাত্রার দুটি অতিরিক্ত শ্রেণি পাওয়া যায়। যথা – দৃষ্টি ও শ্রবণগত মাত্রা। ফলে গিলফোর্ডের বুদ্ধির তত্ত্বের বুদ্ধির মোট উপাদান হল 5x5x6=150 টি। তবে গিলফোর্ড উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে মোট ৯০ টি উপাদান আবিষ্কার করেছেন।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – গিলফোর্ডের তত্ত্ব কি নামে পরিচিত?

উত্তর – গিলফোর্ডের তত্ত্ব ত্রিমাত্রিক তত্ত্ব বা SOI Model নামে পরিচিত।

প্রশ্ন – Soi এর পূর্ণরূপ কি?

উত্তর – Soi এর পূর্ণরূপ হল – Structure of Intellect Model of Intelligence.

প্রশ্ন – গিলফোর্ডের তিনটি মাত্রা কি কি?

উত্তর – গিলফোর্ডের তিনটি মাত্রা হল –
i) প্রক্রিয়াগত মাত্রা (Operational Dimention),
ii) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimention) ও
iii) উৎপাদনগত মাত্রা (Product Dimention)

প্রশ্ন – ত্রিমাত্রিক তত্ত্বের প্রবক্তা কে?

উত্তর – ত্রিমাত্রিক তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট গবেষক মনোবিদ গিলফোর্ড।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close