স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব | Two Factor Theory of Intelligence

বুদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মনোবিদদের বিভিন্ন তত্ত্ব পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে জনপ্রিয় তত্ত্ব হল স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব (Two Factor Theory of Intelligence) বা স্পিয়ারম্যানের বুদ্ধির দ্বি উপাদান তত্ত্ব।

স্পিয়ারম্যান ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতার উপর দীর্ঘদিন গবেষণা করেন। গবেষণার মাধ্যমে তিনি ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে দুটি উপাদান নির্ণয় করতে সক্ষম হন। তাঁর এই বৌদ্ধিক বিকাশ সংক্রান্ত তত্ত্বটি দ্বি উপাদান তত্ত্ব নামে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখানে স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব | Two Factor Theory of Intelligence

১৯০৪ সালে বিশিষ্ট মনোবিদ চার্লস স্পিয়ারম্যান ব্যক্তির বৌদ্ধের ক্ষমতা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রসূত একটি মতবাদ প্রকাশ করেন। সেটি মানসিক ক্ষমতা বা বুদ্ধির দ্বি উপাদান তত্ত্ব বা স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব নামে পরিচিত।

স্পিয়ারম্যান তাঁর তত্ত্বটি আমেরিকান জার্নাল অফ সাইকোলজি (American Journal of Psychology) -তে জেনারেল ইন্টেলিজেন্স অবজেক্টিভলি এন্ড মেজারড্‌ (General Intelligence Objectively and Measured) এই শিরোনামে একটি প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করেন।

স্পিয়ারম্যান তার তত্ত্বে বলেন – বুদ্ধি দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত বা ব্যক্তির বুদ্ধির দুটি উপাদান বর্তমান। এই দুটি উপাদান হল – G ও S উপাদান।

G উপাদান (G factor)

স্পিয়ারম্যানের মতে – সব রকম বৌদ্ধিক কাজের জন্য যে উপাদান প্রয়োজন হয়, তাকে বলে সাধারণ উপাদান বা G উপাদান। এই উপাদানের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্তমান, সেগুলি হল –

i) এটি সার্বজনীন এবং বংশগত প্রকৃতির,

ii) ব্যক্তিভেদে এটির পার্থক্য দেখা দেয়,

iii) এটি ব্যক্তির সব রকম কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করে,

iv) এটি ধ্রুবক অবস্থায় থাকে এবং এই উপাদানের পরিমাণ যত বেশি ব্যক্তির সাফল্য লাভের সম্ভাবনা তত বেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়।

S উপাদান (S factor)

স্পিয়ারম্যান বলেন – ব্যক্তির যে উপাদানটি কোনো বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, তাকে বলা হয় S উপাদান। এই উপাদানের বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

i) এটি অর্জিত প্রকৃতির,

ii) বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য বর্তমান,

iii) একই ব্যক্তির মধ্যে একাধিক পরিমাণে বিশেষ শক্তি থাকতে পারে,

iv) এটি পরিমাণগতভাবে ভিন্নধর্মী হতে পারে।

Two Factor Theory of Intelligence Diagram

স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্বের ব্যাখ্যা

স্পিয়ারম্যানের মতে ব্যক্তির প্রতিটি বৌদ্ধিক কাজে সাধারণ শক্তি (G) ও বিশেষ শক্তি (S) -র প্রয়োজন হয়। এই শক্তি কিভাবে কাজ করে তার নিচে দেখানো হল –

W1   = W1 ——- G1 + S1

W2 = W2 ——- G2 + S2

W3   = W3 ——- G3 + S3

W4 = W4 ——- G4 + S4

ধরা যাক, W1  W2 W3  W4 এই চারটি কাজ। এই এই চারটি কাজ সমীকরণের সাহায্যে দেখানো হল –

এখানে G1  G2 G3  G4 যথাক্রমে W1  W2 W3  W4 কাজে প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ হল S1  S2 S3  S4 যথাক্রমে W1  W2 W3  W4 কাজের প্রয়োজনীয় বিশেষ শক্তি।

যেখানে G1  G2 G3  G4 গুণগতভাবে এক কিন্তু পরিমাণগতভাবে ভিন্ন ও S1  S2 S3  S4 সম্পূর্ণভাবে পৃথক।

এই দ্বি উপাদান তত্ত্ব অনুযায়ী প্রতিটি কাজে G বা সাধারণ উপাদানের প্রয়োজন। তবে কাজের ১৩ তম অনুযায়ী সাধারণ উপাদান পরিমানে ভিন্ন হয়ে থাকে আর এক্ষেত্রে S1  S2 S3  S4 গুণগতভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুটি কাজের মধ্যে যত বেশি পরিমাণে G উপাদান থাকবে, ততই কাজ দুটির মধ্যে সহগতির (r) মান বেশি হবে।

স্পিয়ারম্যান তার তত্ত্বকে গাণিতিক রূপ দেওয়ার জন্য একটি সমীকরণ ব্যাখ্যা করেন। যেটি টেট্রাড সমীকরণ নামে পরিচিত। এখানে টেট্রাড সমীকরণটি হল –

rap  × rbp – raq  × rbp = 0

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য

স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যক্তির সাধারণ কাজ এবং বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। এই তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য গুলি হল –

i) শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্ষমতা নির্ণয় করা যায়। ফলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ও কতটা শিখতে পারবে তা বোঝা সম্ভব হয়।

ii) শিক্ষার্থীদের শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

iii) এই তত্ত্বের মাধ্যমে দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহজে চিহ্নিতকরণ করা যায় ও সেই অনুযায়ী শিক্ষাদান কর্মসূচি সহজে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।

iv) এই তত্ত্বের মাধ্যমে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী নির্বাচন করা সহজ হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কি ধরনের পারদর্শিতা বা সক্ষমতা রয়েছে তা জানা ও বোঝার ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব বিশেষভাবে সাহায্য করে।

v) উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতি নির্বাচন করা। এই তথ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি বৈষম্যের দিকটি বিবেচনা করে উপযুক্ত শিক্ষাদান পদ্ধতি সহজে নির্ণয় করা যায়। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে এই স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, স্পিয়ারম্যান তার বুদ্ধি দি উপাদান তত্ত্বে বুদ্ধির বা মানসিক ক্ষমতার দুই প্রকার উপাদানের কথা বলেছেন। এর মধ্যে একটি হলো সাধারণ মানসিক ক্ষমতা যেটি সমস্ত রকম বৌদ্ধিক কাজে কম বেশি প্রয়োজন এবং অপরটি হল বিশেষ মানুষের ক্ষমতা যা বিশেষ বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। স্পিয়ারম্যানের এই তত্ত্বটি ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতার দিকে ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হয়।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – দ্বি উপাদান তত্ত্বের প্রবক্তা কে?

উত্তর – দ্বি উপাদান তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন স্পিয়ারম্যান।

প্রশ্ন – স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্বের g উপাদান বলতে কী বোঝায়?

উত্তর – স্পিয়ারম্যানের দ্বি উপাদান তত্ত্বের g উপাদান হল সাধারণ উপাদান। যেটি ব্যক্তির সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানটি প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে।

প্রশ্ন – বুদ্ধির দ্বি উপাদান তত্ত্বের প্রবক্তা কে

উত্তর – বুদ্ধির দ্বি উপাদান তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন স্পিয়ারম্যান।

প্রশ্ন – স্পিয়ারম্যানের পুরো নাম কি?

উত্তর – স্পিয়ারম্যানের পুরো নাম হল চার্লস স্পিয়ারম্যান (Charles Spearman)। তিনি ১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন – স্পিয়ারম্যানের দ্বি ফ্যাক্টর উপাদান কি?

উত্তর – স্পিয়ারম্যানের দ্বি ফ্যাক্টর উপাদান হল দুটি। একটি হল সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বা G উপাদান এবং অন্যটি হল বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বা S উপাদান।

প্রশ্ন – সাধারণ মানসিক ক্ষমতা কাকে বলে

উত্তর – স্পিয়ারম্যান বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে উপাদান বিশ্লেষণ করে বলেন যে সমস্ত রকমের বৌদ্ধিক কাজে কম-বেশি একটি ক্ষমতার প্রয়োজন হয়। এই ক্ষমতাটিকে বলা হয় সাধারণ মানসিক ক্ষমতা।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close