Share on WhatsApp Share on Telegram

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা | Merits and Demerits of kindergarten Method

Join Our Channels

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন শিক্ষণ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেলের কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি। এই পদ্ধতি শিক্ষায় বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা (Merits and Demerits of kindergarten Method) বিভিন্ন দিকে বর্তমান।

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার প্রতি বা শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান মূলক কাজ সম্পাদনার মাধ্যমে এবং প্রকৃতি পরিচয় করণের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি

কিন্ডারগার্টেন (Kindergarten) শব্দটি জার্মান শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ হল শিশু উদ্যান বা শিশুদের জন্য বাগান। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুদের শিক্ষার যে বিশেষ পদ্ধতি অনুসৃত হয়, তাকে, কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি বলে।

১৮৩৭ সালে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ব্ল্যাকেনবুর্গ গ্রামে কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশুরা স্বাধীনভাবে আত্ম-সক্রিয়তার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করবে।

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা | Merits and Demerits of kindergarten Method

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি একটি মনোবিজ্ঞান সম্মত আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি। এই শিক্ষা পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধা বর্তমান। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. উপহার ও বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষা

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা হল এখানে শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে উপহার ও বৃত্তির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে শিশুকে উপহার বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়। তাহলে শিশুরা সক্রিয়ভাবে বা সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।

2. আনন্দপুর্ণ পরিবেশের শিক্ষাদান

কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় আনন্দপুর্ন পরিবেশ রচনা করে থাকে। যেখানে শিশুরা আনন্দের সাথে শিক্ষা লাভ করে। তাই আনন্দপূর্ণ পরিবেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার একটা অন্যতম সুবিধা।

3. সামাজিক গুনাবলীর বিকাশ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিভিন্ন গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়।

অর্থাৎ এখানে বিভিন্ন দলগত কাজের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব, একত্রে বসবাসের মনোভাব, সহানুভূতি প্রকৃতি সামাজিক গুনাবলির বিকাশ সাধন সম্ভব হয়। এদিক থেকে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা বর্তমান।

4. শিশু কেন্দ্রিকতা

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি একটি অন্যতম সুবিধা হল এখানে শিশু কেন্দ্রিকতার নীতি অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিশুদের বা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা, সামর্থ্য প্রভৃতি অনুযায়ী কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির পরিচালনা করা হয়।

5. সৃজনশীলতার বিকাশ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশের বিশেষভাবে সহায়ক। অর্থাৎ শিশুর মধ্যে সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশ সাধন করার ক্ষেত্রে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা বর্তমান।

6. প্রাকৃতিক শিক্ষা

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুর প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই শিক্ষাদান পদ্ধতি গতানুগতিক বিদ্যালয় চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিশুরা প্রকৃতি পরিচয় এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে থাকে। ফলে শিশুর মধ্যে প্রকৃতি পরিচয় সহজে করানো যায়।

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির অসুবিধা

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু অসুবিধা বর্তমান। সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির অসুবিধা গুলির মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাবে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বাস্তব রূপদান সম্ভব নাও হতে পারে।

2. উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব

উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করা অসুবিধাজনক। কারণ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে খেলার ছলে এবং বিভিন্ন উপহার ও বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছে। তাই উপযুক্ত পরিকাঠামো অভাবে এই শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যর্থ হতে পারে।

3. ব্যয়বহুল শিক্ষা উপকরণ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত শিক্ষা সহায়ক উপকরণ গুলি অধিক ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। তাই এই পদ্ধতি সহজে ব্যবহার করা যায় না।

4. বিমূর্ত ধারণা গঠনে বাধা

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতিতে ফ্রয়েবেল আত্ম সচেতনতার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার জন্য শিশুদের বিভিন্ন প্রতিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যেটি শিশুদের বিমুর্ত ধারণা গঠনে সহায়ক নয়। তাই এটি কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির বিশেষ অসুবিধা।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা (Merits and Demerits of kindergarten Method) থাকলেও আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। এর মাধ্যমে শিশুদের সার্বিক বিকাশ সাধন করা জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়। তাই আধুনিক বিশ্বে প্রায় সর্বত্র কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • Internet Sources

প্রশ্ন – কিন্ডারগার্টেন শব্দের অর্থ কী

উত্তর – কিন্ডারগার্টেন শব্দটির অর্থ হল – শিশু উদ্যান বা শিশুদের জন্য বাগান। শিশুদের স্বাধীনভাবে খেলাধুলা করার জন্য এবং স্বাধীনভাবে খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন – কিন্ডারগার্টেন কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়

উত্তর – ১৮৩৭ সালে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ব্ল্যাকেনবুর্গ গ্রামে কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন – কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তক কে

উত্তর – কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেল।

প্রশ্ন – কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা কে শুরু করেন

উত্তর – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা শুরু করেন।

আরোও পড়ুন

4.3/5 - (18 votes)

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close