শিখন অক্ষমতা কাকে বলে | শিখন অক্ষমতার কারণ | Learning Disability

শিশুদের বিভিন্ন ধরনের অক্ষমতার মধ্যে শিখন অক্ষমতা (Learning Disability) একটি গুরুত্বপূর্ণ অক্ষমতা। এই শিখন অক্ষমতা শিক্ষার্থীদের শিখনের ক্ষেত্রে প্রধান বাধাস্বরুপ।

শিক্ষাজগতে শিশুদের শিখন অক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ এর ফলে শিশুরা সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। অর্থাৎ শিশুরা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো শিক্ষাগত পারদর্শিতায় পিছিয়ে থাকে। এখানে শিখন অক্ষমতা কাকে বলে ও শিখন অক্ষমতার কারণগুলি কি কি তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শিখন অক্ষমতা | Learning Disability

শিখন অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধকতা শিশুদেরকে শিখনের ক্ষেত্রে বাধাকে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মত শিখতে সক্ষম না হলে তখন তাকে শিখন অক্ষমতা বলা হয়ে থাকে।

National Centre for Learning Disabilities অনুযায়ী – “শিখন অক্ষমতা একটি স্নায়বিক অসুখ যেটি মস্তিষ্কের তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

তাই বলা যায়, শিখন অক্ষমতা হল শিশুদের শিশুদের পড়া, লেখা, গাণিতিক সমস্যার সমাধান বা অংক করার অক্ষমতাকে বোঝানো হয়ে থাকে। এই শিখন অক্ষমতা প্রধানত তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যথা –

i) পঠনগত অক্ষমতা বা Dyslexia,

ii) লিখন অক্ষমতা বা Dysgraphia,

iii) গাণিতিক অক্ষমতা বা Dyscalculia

শিখন অক্ষমতার কারণ

শিখন অক্ষমতা বিভিন্ন কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে শিখন অক্ষমতার কারণ যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

i) বংশগত কারণ

বংশগত কারণে শিখন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ বাবা-মার জিনের ত্রুটি এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ২০ শতাংশ শিখন অক্ষমতা পিতামাতার থেকে আসে।

ii) পরিবেশগত কারণ

শিখন অক্ষমতার ক্ষেত্রে পরিবেশগত বিভিন্ন কারণ দায়ী। পরিবেশ পরিবর্তন বা জন্মকালীন সময়ে বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে শিখন অক্ষমতা দেখা দেয়।

তাছাড়া পরিবেশের অন্যতম উপাদান হলো পরিবার এবং সেখানের সংস্কৃতি বা পারিবারিক শিক্ষা শিশুর শিখনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।

iii) জন্মকালীন মস্তিষ্কে আঘাত

জন্মকালীন মস্তিষ্কে আঘাত বা জন্মকালীন বিভিন্ন সমস্যার ফলে শিশুর মধ্যে শিখন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া জন্মকালীন সময়ে তাড়াহুড়ো করা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রসব হলে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সহ শিখন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

iv) জন্মের সময় মস্তিষ্কে উপযুক্ত অক্সিজেন সরবরাহের অভাব

শিশুর জন্মের সময় বা জন্ম পরবর্তী সময় শিশুর মস্তিষ্কে উপযুক্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ না হলে শিশুরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাদের মধ্যে একটি হল শিখন অক্ষমতা।

তাছাড়া শিশুর জন্মের পাঁচ মিনিটের মধ্যে শিশু যদি না কাঁদে সে ক্ষেত্রে শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায় বা সেই শিশুর মধ্যে বিভিন্ন মানসিক অক্ষমতা সহ শিখন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

v) প্রসবকালীন বিভিন্ন অসুবিধা

মায়েদের প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা বা অসুবিধা শিশুদের মধ্যে শিখন অক্ষমতা দেখা দেয়। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে প্রসব না হওয়া বা প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা রক্তশূন্যতা প্রভৃতি কারণে শিশুদের মধ্যে শিখন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

vi) মা ও শিশুর অপুষ্টি

মা ও শিশুর অপুষ্টি শিখন অক্ষমতার অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ উপযুক্ত পুষ্টির অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় ফলে শিশুদের মধ্যে চিকন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

এগুলি ছাড়াও আর যে সমস্ত বিষয় শিখন অক্ষমতার কারণের জন্য দায়ী করা হয়, সেগুলি হল –

i) গর্ভবতী মায়েদের জরায়ু অতিরিক্ত ছোট হলে বা পূর্বে গর্ভপাতের লক্ষণ থাকলে,

ii) মায়ের বয়স অতিরিক্ত কম বা অতিরিক্ত বেশি হলে,

iii) গর্ভবতী হওয়ার পর মা যদি উপযুক্ত চিকিৎসা না পায় বা মা যদি অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে,

iv) মা যদি অ্যালকোহল বা নেশাকর দব্য সেবন করে,

vi) গর্ভবতী মায়ের যদি কোনো কঠিন রোগ থাকে। মায়ের যদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রুবেলা সংক্রমণ, মানসিক প্রবলেম প্রভৃতি শিশুর ক্ষেত্রে কুপ্রভাব বিস্তার করে থাকে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীনকালে শিক্ষায় শিখন অক্ষমতা (Learning Disability) সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে শিখন অক্ষমতার যুক্ত শিশুদের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। এবং সেই অনুযায়ী তাদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অর্থাৎ শিখন অক্ষমতা যুক্ত শিশুদের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাদান পদ্ধতির জন্ম হয়েছে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
  • Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিখন অক্ষমতা হলে কি হয়?

উত্তর – শিখন অক্ষমতা হলে একজন শিশু সঠিকভাবে পড়াশোনা বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না। অর্থাৎ একজন শিশুর শিখন অক্ষমতা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল – ভাষা বিকাশে অক্ষমতা, গাণিতিক অক্ষমতা, পঠনগত অক্ষমতা, লিখন অক্ষমতা, উচ্চারণগত ত্রুটি প্রভৃতি।

প্রশ্ন – শিখন অক্ষমতা কি স্নায়বিক?

উত্তর – হ্যাঁ শিখন ক্ষমতা একটি স্নায়বিক ব্যধি বা রোগ। কারণ এর ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শিখতে পারেনা। অর্থাৎ এটি মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রশ্ন – শিখন অক্ষমতা কি আইকিউ প্রভাবিত করে?

উত্তর – শিখন অক্ষমতা আইকিউ কে প্রভাবিত করে না। অর্থাৎ শিখন অক্ষমতা যুক্ত শিশুদের আইকিউ স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় কিছুটা কম থাকে। ফলে শিখন অক্ষমতা যুক্ত শিক্ষার্থীদের শিখনের ক্ষেত্রে এটি প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

প্রশ্ন – শিখন অক্ষমতার তিনটি কারণ?

উত্তর – শিখন অক্ষমতার তিনটি কারণ হল – বংশগত কারণ, পরিবেশগত কারণ এবং জন্মকালীন আঘাত বিশেষত মস্তিষ্কে।

আরোও পড়ুন

2 thoughts on “শিখন অক্ষমতা কাকে বলে | শিখন অক্ষমতার কারণ | Learning Disability”

Leave a Comment

close