যোগাযোগ হল গ্রাহকের মধ্যে তথ্য বা ভাবের আদান প্রদান। এই তথ্য ভাবের আদান প্রদান সরাসরি সম্পন্ন হয় না। এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রক্রিয়া বা পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এই যোগাযোগের প্রক্রিয়া (Process of Communication) সুসম্পন্ন হয়ে থাকে।
ইংরাজী Communication -এর বাংলা অর্থ হল – যোগাযোগ বা যোগাযোগ স্থাপন করা। যোগাযোগ ব্যক্তিগত (Personal) বা দলগত (Group) উভয় প্রকৃতির। প্রেরক ও গ্রাহকের মধ্যে সুসম্পর্কের ফলে সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট ও নির্দিষ্ট নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
যোগাযোগ প্রক্রিয়ার ধারণা (Concept of Process of Communication)
যোগাযোগ হল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে তথ্য, চিন্তাভাবনা, ধারণা বা অনুভূতি বিনিময়ের প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রেরক ও গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগ সুসম্পন্ন হয়ে থাকে এর ফলে প্রেরক ও গ্রাহক উভয়েই উপকৃত হয়, তাকে যোগাযোগের প্রক্রিয়া বলে।
যোগাযোগ প্রক্রিয়া হল একটি নির্বাচিত চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরকের কাছ থেকে তথ্য বা বার্তা গ্রহকের কাছে প্রেরণ বা স্থানান্তরকে বোঝায়। তাই যোগাযোগ প্রক্রিয়া এমন একটি ধারাবাহিক ও গতিশীল প্রক্রিয়া যেখানে প্রেরকের কাছ থেকে তথ্য বা বার্তা গ্রাহকের কাছে সঞ্চালিত হয়ে থাকে এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রেরকের পাঠানো বার্তা গ্রাহক বুঝতে পারে ও পরে তার প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকে।
যোগাযোগের প্রক্রিয়াসমূহ (Process of Communication)
যোগাযোগ একটি জটিল, পদ্ধতিগত, ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেগুলিকে যোগাযোগের প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থার বা যোগাযোগের প্রক্রিয়াসমূহ (Process of Communication) নিম্নে উল্লেখ করা হল –
1. প্রেরক (Sender)
যোগাযোগের প্রক্রিয়ার অন্যতম দিক হল প্রেরক বা Sender. যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় প্রেরকের ভূমিকা হল কোন মতবাদ, তথ্যকে প্রেরণ করা বা সঞ্চালন করা। অর্থাৎ সম্পূর্ণ যোগাযোগ প্রক্রিয়া প্রেরক হল যোগাযোগের মূল উৎস। প্রেরক ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু করা যেমন সম্ভবপর নয় ঠিক তেমনি শেষ করাটাও সম্ভবপর হয় না।
উদাহরণ – শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষক হলেন প্রেরক বা উৎস।
2. সংকেত যুক্তকরন (Encoding)
সংকেত যুক্তকরণ যোগাযোগ প্রক্রিয়ার একটি প্রধান দিক। কারণ কোন তথ্যকে বা মতবাদকে পাঠাতে গেলে সেটিকে সংকেত আকারে পাঠাতে হয়। এই সংকেত যোগাযোগের বা যোগাযোগ প্রক্রিয়ার গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এই সংকেত যুক্তকরণ বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে হতে পারে।
3. গ্রাহক (Receiver)
যোগাযোগ প্রক্রিয়ার অন্যতম দিক হল গ্রাহক বা Rceiver. গ্রাহক ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে থাকে। তাই যার উদ্দেশ্যে কোন বার্তা বা মতামত প্রেরকের দ্বারাপাঠানো হয় বা প্রেরণ করা হয় সেটি হল গ্রাহক। সম্পূর্ণ যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণ – শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় গ্রাহক হল শিক্ষার্থী।
4. মাধ্যম (Channel)
যোগাযোগ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল চ্যানেল বা মাধ্যম। কারণ এটি হলো এমন একটি পথ যার মাধ্যমে প্রেরকের পাঠানো বার্তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়। এই মাধ্যম শ্রবনমূলক, দৃষ্টি মূলক, স্পর্শমূলক প্রভৃতি হতে পারে।
5. সংকেত মুক্তকরন (Decoding)
যোগাযোগ ব্যবস্থায় গ্রাহকের পাঠানো সংকেত, বার্তা বা মতবাদ সংকেত মুক্তকরনের মাধ্যমে তার যথার্থ অর্থ উপলব্ধি করতে হয়। অর্থাৎ সংকেত মুক্তকরণ ছাড়া গ্রাহক প্রেরকের দ্বারা পাঠানো তথ্য বুঝতে সক্ষম হয় না। এই প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রেরকের পাঠানো তথ্যকে গ্রাহক সংকেত মুক্তকরনের মাধ্যমে সহজেই বার্তার অর্থ অনুধাবন করতে পারে।
6. প্রতিক্রিয়া (Feedback)
সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনই সুসম্পন্ন হওয়া সম্ভব যখনই প্রেরকের পাঠানো তথ্যের অর্থ উপলব্ধির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম হন। অর্থাৎ উপযুক্ত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া প্রেরক ও গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরী ও গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তোলে।
তাই প্রেরকের কাছ থেকে বার্তা যখন গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়, তখন গ্রাহক যদি প্রেরকের কাছে বার্তাকে পুনরায় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে থাকে, তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, যোগাযোগ একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। অর্থাৎ প্রেরক ও গ্রাহকের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া যোগাযোগ প্রক্রিয়া একক কোন উপাদান দ্বারা পরিচালিত হয় না। বরং কার্যকরী যোগাযোগ প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে সুসম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই উপরে উক্ত বিষয়গুলি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে একটি কার্যকরী যোগাযোগ প্রক্রিয়া পরিচালিত করা সহজ ও সার্থক হয়।
শিক্ষায় যোগাযোগের অর্থ, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য | যোগাযোগের প্রধান ৮টি উপাদান |
যোগাযোগের শ্রেণিবিভাগ | কার্যকরী যোগাযোগের বাধাসমূহ |
তথ্যসূত্র (References)
- Aggarwal, I. E.: Essentials of Educational Technology: Teaching Learning, Vikash Publishing House Pvt. Ltd. 2001, New Delhi.
- Bhatt and Sharma S. R.: Educational Technology, Kanika Publishing House, New Delhi.
- Chauhan, S. S.: Innovations in Teaching Learning Process, Vikash Publication, 1990, New Delhi.
- Hornby, A.S. 1995. Oxford Advanced Learner Dictionary. New York: Oxford University Press
- Hughes, R. (2002). Teaching and researching speaking. Edinburgh: Pearson Education.
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
- Internet sources
প্রশ্ন – যোগাযোগ প্রক্রিয়ার সংজ্ঞা উল্লেখ কর। (Definition of the communication process)
উত্তর – যোগাযোগ প্রক্রিয়া হল একটি নির্বাচিত চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরকের কাছ থেকে তথ্য বা বার্তা গ্রহকের কাছে প্রেরণ বা স্থানান্তরকে বোঝায়। তাই যোগাযোগ প্রক্রিয়া এমন একটি ধারাবাহিক ও গতিশীল প্রক্রিয়া যেখানে প্রেরকের কাছ থেকে তথ্য বা বার্তা গ্রাহকের কাছে সঞ্চালিত হয়ে থাকে এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রেরকের পাঠানো বার্তা গ্রাহক বুঝতে পারে ও পরে তার প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন – যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদানগুলির (Elements of communication process) নাম লেখো।
উত্তর – যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদানগুলি হল – গ্রাহক, সংকেত যুক্তকরন, চ্যানেল বা মাধ্যম, গ্রাহক, সংকেত মুক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়।
প্রশ্ন – যোগাযোগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলির (steps of the communication process) নাম লেখো।
উত্তর – যোগাযোগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলি হল – গ্রাহক, সংকেত যুক্তকরন, চ্যানেল বা মাধ্যম, গ্রাহক, সংকেত মুক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়।
আরোও পড়ুন
- শিক্ষার গণতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝো | Democratic Aim of Education
- কথন দক্ষতা কি | ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য | Concept of Speaking Skills
- শ্রবণ দক্ষতা কাকে বলে | শ্রবণ দক্ষতার মূলনীতি | Definition and Principles of Listening Skills
- পঠন কাকে বলে | পঠনের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো | Concept of Reading
- মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Montessori Education System
- শিক্ষায় মূল্যবোধের গুরুত্ব | Importance of Values in Education
- মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা | Montessori Education
- প্রকল্প পদ্ধতি কাকে বলে | এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য | Project Method
- কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি | কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য | 8 Characteristics of Kindergarten Method
Your writing skills are amazing! I really love it!