যোগাযোগ প্রক্রিয়া বিশেষ করে কথন দক্ষতার ক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাচনিক ও অবাাচনিক যোগাযোগ। এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাচনিক ও অবাচনিক যোগাযোগের পার্থক্য (Verbal and Non Verbal Communication Difference) বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়।
বাচনিক ও অবাচনিক যোগাযোগের পার্থক্য | Verbal and Non Verbal Communication Difference
যোগাযোগের একটি অন্যতম মাধ্যম হল কথন দক্ষতা। আর কথন দক্ষতা দুটি দিক বর্তমান। সেগুলি হল বাচনিক যোগাযোগ এবং অবাসনিক যোগাযোগ। তাই বাচনিক ও অবাচনিক যোগাযোগ হল ব্যক্তির যোগাযোগের দুটি প্রাথমিক রূপ। এই দুটি রূপের মাধ্যমে ব্যক্তি শ্রোতাদের কাছে বা প্রেরকের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়।
এই দুটি বিষয় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলেও বাচনিক ও অবাচনিক যোগাযোগের পার্থক্য (Verbal and Non Verbal Communication Difference) বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
প্রথমত – ধারণা
বাচনিক যোগাযোগ বলতে চিন্তা ভাবনা, ধারণা ও অনুভূতিগুলি প্রকাশ করার জন্য কথ্য বা লিখিত মাধ্যম বা ভাষার ব্যবহারকে বোঝায়।
আর অপরদিকে অবাচনিক যোগাযোগ বলতে কথ্য বা লিখিত ভাষার ব্যবহার না করে তথ্য বা বার্তা বা অনুভূতিগুলি বিনিময় করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।
দ্বিতীয়ত – ভাষার ব্যবহার
বাচনিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি তথ্য বা ভাবের আদান-প্রদানের জন্য শব্দের বা ভাষার ব্যবহার করে থাকে। আর অবাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য বা ভাবের আদান-প্রদানের জন্য ব্যক্তি ভাষা বা শব্দের ব্যবহার করে না।
তৃতীয়ত – আবশ্যিক শর্ত
বাচনিক যোগাযোগের আবশ্যিক শর্ত হল ভাষা। আর অবাচনিক যোগাযোগের আবশ্যিক শর্ত হল ভাষাবিহীন।
চতুর্থত – উদাহরণ
বাচনিক যোগাযোগের উদাহরণ হল – মুখোমুখি কথোপকথন বা কথা বলা, ফোনে কথা বলা, ভিডিও কলে কথা বলা, চিঠিপত্রের মাধ্যমে বার্তার আদান প্রদান প্রভৃতি।
আর অবাচনিক যোগাযোগের উদাহরণ হল – অঙ্গভঙ্গি বা শারীরিক ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি, স্পর্শ, চোখের যোগাযোগ বা মাথা নেড়ে সম্মতি বা অসম্মতি জানানো প্রভৃতি।
পঞ্চমত – উপাদান
বাচনিক যোগাযোগের বিভিন্ন উপাদান বর্তমান, সেগুলি হল – ভাষার দক্ষতা, গলার স্বর বা ভলিউম বা কণ্ঠস্বর, শব্দভাণ্ডার, যোগাযোগকারীদের মধ্যে কার্যকরী সম্পর্ক প্রভৃতি।
আর অপরদিকে অবাচনিক যোগাযোগের উপাদান হল – অঙ্গভঙ্গি প্রকাশের দক্ষতা, চোখের যোগাযোগের দক্ষতা, সাংকেতিক শব্দ, স্পর্শ প্রভৃতি।
ষষ্ঠত – গুরুত্ব বা সুবিধা
বাচনিক যোগাযোগ বিভিন্ন দিকে গুরুত্বপূর্ণ, যথা – ধারণা এবং চিন্তা প্রকাশ করা, যোগাযোগকারীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায়, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, কথন দক্ষতার বিকাশ প্রভৃতি।
আর অপরদিকে অবাচনিক যোগাযোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যথা – সহজে আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যোগাযোগে সাহায্য, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা, সময়ের অপচয় কমানো, নিরক্ষর ব্যক্তিদের যোগাযোগে সহায়তা প্রভৃতি।
সপ্তমত – অসুবিধা
বাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল – বক্তার বক্তব্যের স্বচ্ছতার অভাব, কোলাহল ও বিভ্রান্তি, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার বা ফিডব্যাক এর অভাব, অনুপযুক্ত মাধ্যম নির্বাচন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা প্রভৃতি।
আর অপরদিকে অবাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল – দীর্ঘক্ষন কথোপকথন বা যোগাযোগ সম্ভব নয়, অসামঞ্জস্যপূর্ণ বার্তা, দূরত্ব, সচেতনতার অভাব প্রভৃতি।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, বাচনিক এবং অবাচনিক যোগাযোগ উভয়ই যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বাচনিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে যোগাযোগ করা যায়। ঠিক তেমনি অবাচনিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক বা যোগাযোগ সম্ভব হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত ক্ষেত্রে বাচনিক যোগাযোগ সম্ভবপর হয় না সেক্ষেত্রে অবাচনিক যোগাযোগ বিশেষ কার্যকরী। তবে যাই হোক বাচনিক এবং অবাচনিক যোগাযোগ উভয়ের মাধ্যমে কার্যকরী যোগাযোগ প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র (References)
- Aggarwal, I. E.: Essentials of Educational Technology: Teaching Learning, Vikash Publishing House Pvt. Ltd. 2001, New Delhi.
- Bhatt
- Bhatt and Sharma S. R.: Educational Technology, Kanika Publishing House, New Delhi.
- Chauhan, S. S.: Innovations in Teaching Learning Process, Vikash Publication, 1990, New Delhi.
- Hornby, A.S. 1995. Oxford Advanced Learner Dictionary. New York: Oxford University Press
- Hughes, R. (2002). Teaching and researching speaking. Edinburgh: Pearson Education.
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
- What is the difference between verbal & non verbal communication
- Verbal and Non Verbal Communication Difference
- Internet sources
প্রশ্ন – বাচনিক যোগাযোগ কী?
উত্তর – যে যোগাযোগে তথ্য বা ভাবের আদান-প্রদানের জন্য কথ্য ভাষার ব্যবহার হয় বা শব্দের ব্যবহার হয় বা বচনের ব্যবহার হয়, তাকে আচনিক যোগাযোগ বলে। যেমন – মুখোমুখি কথোপকথন বা ফোনে কথোপকথন।
প্রশ্ন – অবাচনিক যোগাযোগ কী?
উত্তর – যে যোগাযোগে ভাবের বা তথ্যের আদান-প্রদানের জন্য ভাষার ব্যবহার হয় না, তাকে অবাচনিক যোগাযোগ বলে। যেমন – চোখের ইশারা বা আই কন্টাক, অঙ্গভঙ্গি বা মাথা নেড়ে সম্মতি জানানো প্রভৃতি।
আরোও পড়ুন
- Role of Television: গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের ভূমিকা
- অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কি | অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা (Advantages and Disadvantages of Informal Education)
- অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা (10 Role of the Family as a medium of Informal Education)
- একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী | 7 Qualities of a Good Teacher
- কথন দক্ষতা কাকে বলে | বৈশিষ্ট্য, প্রয়োজনীয়তা | Concept of Speaking Skills
- কার্যকরী যোগাযোগের বাধাসমূহ | 10 Barriers of Effective Communication
- কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি | কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য | 8 Characteristics of Kindergarten Method
- কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা | Merits and Demerits of kindergarten Method
- খেলা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য | Difference Between Play and Work