কার্যকরী যোগাযোগের বাধাসমূহ :10 Barriers of Effective Communication

যোগাযোগ ব্যবস্থা হল একে অপরের মধ্যে ভাব, মতবাদ প্রভৃতি আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া। কিন্তু যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ভাব, মতবাদ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলি কার্যকরী যোগাযোগের বাধাসমূহ (Barriers of Effective Communication) নামে পরিচিত।

যোগাযোগ (Communication) ব্যবস্থা একটি ধারাবাহিক ও গতিশীল প্রক্রিয়া। এই যোগাযোগ প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রেরক ও গ্রাহকের মধ্যে তথ্য বা ভাবের আদান প্রদান যদি সহজসাধ্য হয় তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজে সুসম্পন্ন হয়। কিন্তু তথ্য বা ভাবের আদান প্রদান সহজ সাধ্য না হলে তখন যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা বাধার সৃষ্টি হয়ে থাকে। যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।

যোগাযোগের ধারণা (Concept of Communication)

ইংরাজী Communication -এর বাংলা অর্থ হল – যোগাযোগ বা যোগাযোগ স্থাপন করা। অর্থাৎ যোগাযোগ হল পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রক্রিয়া, যতক্ষণ না উভয়ের অভিজ্ঞতা সমান হয়। এই যোগাযোগ ব্যক্তিগত (Personal) বা দলগত (Group) উভয় প্রকৃতির।

D. Berlo বলেছেন – “Communication is a process of interaction of ideas between the communicator and the receiver to arrive at a common understanding for mutual benefit.” অর্থাৎ যোগাযোগ স্থাপন হল প্রেরক ও গ্রাহকের অভিজ্ঞতার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে উভয়েই একটি সাধারণ ধারণায় উপনীত হয় এবং উভয়েই উপকৃত হয়।

কার্যকরী যোগাযোগের বাধাসমূহ (Barriers of Effective Communication)

যোগাযোগ (Communication) হল একজন ব্যক্তি থেকে অন্য একজন ব্যক্তির কাছে বার্তা আদান প্রদানের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ যোগাযোগ হল একটি সুশৃংখল, ধারাবাহিক এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া। এই যোগাযোগের বিভিন্ন উপাদান এবং মাধ্যম বর্তমান। কিন্তু অনেক সময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অর্থাৎ সঠিকভাবে যোগাযোগ করার জন্য প্রেরক ও গ্রাহকের মধ্যে যে বাধার সৃষ্টি হয় সেটি যোগাযোগের বাধা হিসেবে পরিগণিত।

সঠিকভাবে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কার্যকর যোগাযোগ অপরিহার্য। কার্যকরী যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বাধাসমূহ (Barriers of Effective Communication) সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. শারীরিক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা (Physical Barriers)

শারীরিক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সঠিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ বাধা প্রদান করে থাকেন। যেমন – প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে অন্যান্য ব্যক্তির সাথে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন না।

শারীরিক বাধার মধ্যে বিভিন্ন বাধা অন্তর্ভুক্ত। যেমন – দুর্বল স্বাস্থ্য, অন্ধত্ব, বধিরতা প্রভৃতি।

তাই শারীরিক দূরত্ব, পরিবেশগত শব্দ বা দুর্বল অডিও/ভিজ্যুয়াল গুণমান যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় বাধা দান করতে পারে। বিশেষ করে দূরবর্তী বা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে।

2. মানসিক প্রতিবন্ধকতা (Mental Retardation)

ব্যক্তির আবেগ, যেমন – রাগ, ভয় বা চাপ প্রভৃতি চিন্তাভাবনাগুলিকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা কঠিন করে কার্যকর যোগাযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

তাই মানসিক প্রতিবন্ধকতা যোগাযোগের (Communication) ক্ষেত্রে বিশেষ বাধার সৃষ্টি করে থাকে।

3. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা (Language Impairment)

যখন ব্যক্তিরা একটি সাধারণ ভাষা ব্যবহার করে না বা ব্যবহৃত ভাষায় দক্ষতার বিভিন্ন স্তর থাকে, তখন ভুল বোঝাবুঝি ঘটতে পারে।

অস্পষ্ট শব্দের ব্যবহার, দুর্বোধ্য সংকেত -এর ব্যবহার প্রভৃতি ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা কার্যকরী যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ বাধা (Barriers of Effective Communication) প্রদান করে থাকে।

4. সাংস্কৃতিক পার্থক্য (Cultural Differences)

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নিয়ম, মূল্যবোধ এবং যোগাযোগ শৈলী ভুল ব্যাখ্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক পার্থক্য সঠিকভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা (Barriers of Effective Communication) সৃষ্টি করে থাকে।

5. উপলব্ধিগত বাধা (Perceptual Barriers)

মানুষের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকে এবং ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব বা পূর্ব ধারণা বার্তাগুলিকে ব্যাখ্যা করার উপায়কে বিকৃত করতে পারে, যা ভুল বোঝাবুঝির দিকে পরিচালিত করে।

তাই প্রেরকের দ্বারা কোন তথ্য গ্রাহক যদি বিকৃত মানে করে বা ভুল বোঝে সে ক্ষেত্রে কার্যকরী যোগাযোগ সম্ভব হয় না। তাই গ্রাহকের উপলব্ধিগত বাধা যোগাযোগ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে।

6. মনোযোগের অভাব (Lack of Attention)

যে কোন যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির মনোযোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মনোযোগকে যোগাযোগের মূল উপাদান হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

তাই সঠিক মনোযোগের অভাব কোন ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

7. দুর্বল শোনার দক্ষতা (Poor Listening Skills)

সক্রিয়ভাবে শোনার পরিবর্তে কথা বলার উপর বেশি মনোযোগ দেয়, যা বার্তাটির ভুল ব্যাখ্যা এবং অসম্পূর্ণ বোঝার দিকে পরিচালিত করে।

অর্থাৎ কোন বিষয় মনোযোগ দিয়ে না শুনলে বা দুর্বল শ্রবণ দক্ষতা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা (Barriers of Effective Communication) সৃষ্টি করে থাকে।

8. প্রতিক্রিয়ার অভাব (Lack of response)

প্রতিক্রিয়া ছাড়া, যোগাযোগকারীরা জানতে পারে না যে তাদের বার্তা গৃহীত হয়েছে এবং সঠিকভাবে বোঝা গেছে। অর্থাৎ যোগাযোগের একটি অন্যতম মৌলিক উপাদান হল প্রতিক্রিয়া।

গ্রাহক কর্তৃক যে বার্তাটি প্রেরকের কাছে পৌঁছানো হয় প্রেরক যদি সেই বার্তাটির যথাযথ প্রতিক্রিয়া না দেয় বা দিতে সক্ষম না হন সে ক্ষেত্রে কার্যকরী যোগাযোগ সম্ভব হয় না।

9. স্বচ্ছতার অভাব (Lack of transparency)

অস্পষ্ট, অস্পষ্ট, বা সংগঠনের অভাবের বার্তাগুলি বিভ্রান্তি এবং ভুল ব্যাখ্যার কারণ হতে পারে। তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক।

যদি যোগাযোগকারীদের মধ্যে পারস্পরিক স্বচ্ছতা না থাকে তবে তা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশেষ প্রভাবিত করতে পারে।

10. প্রযুক্তিগত বাধা (Technical Barriers)

প্রযুক্তি যোগাযোগে সহায়তা করতে পারে। কারণ বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ সম্পন্ন করে থাকি। যদি প্রযুক্তিগত কোন ত্রুটি থাকে তবে তা যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – ফোন করার ক্ষেত্রে বারবার ফোন ডিসকানেক্ট হয়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে দুজন ব্যক্তির কাছে তথ্যের আদান-প্রদান দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে।

 শিক্ষায় যোগাযোগের অর্থ, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যযোগাযোগের প্রধান ৮টি উপাদান
যোগাযোগের শ্রেণিবিভাগযোগাযোগের প্রক্রিয়াসমূহ

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায় যে, যোগাযোগ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে যোগাযোগের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। অর্থাৎ যোগাযোগ কারি ও গ্রাহকের মধ্যে সঠিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। ফলে যোগাযোগের মাত্রা অন্যদিকে প্রভাবিত হতে পারে। যেটি সমাজ ও ব্যক্তির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

তাই যোগাযোগের বাধা গুলিকে যতটা সম্ভব কমানো উচিত, সে বিষয়ে প্রথম থেকে প্রেরক ও গ্রাহককে সতর্ক থাকা দরকার।

তথ্যসূত্র (References)

  • Aggarwal, I. E.: Essentials of Educational Technology: Teaching Learning, Vikash Publishing House Pvt. Ltd. 2001, New Delhi.
  • Bhatt and Sharma S. R.: Educational Technology, Kanika Publishing House, New Delhi.
  • Chauhan, S. S.: Innovations in Teaching Learning Process, Vikash Publication, 1990, New Delhi.
  • Hornby, A.S. 1995. Oxford Advanced Learner Dictionary. New York: Oxford University Press
  • Hughes, R. (2002). Teaching and researching speaking. Edinburgh: Pearson Education.
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – যোগাযোগের বাধা বলতে কি বুঝায়

উত্তর – যে সমস্ত বিষয়গুলি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বাধা সৃষ্টি করে থাকে, তাকে যোগাযোগের বাধা বলে। যোগাযোগের অন্যতম বাধাগুলি হল – শারীরিক বাধা, মানসিক বাধা, ভাষাগত বাধা, মনোযোগের অভাব প্রভৃতি।

প্রশ্ন – দৈনন্দিন যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় বাধার প্রভাব

উত্তর – দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বাধাগুলি ব্যক্তিজীবনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন – ভুল বোঝাবুঝি, তথ্যের বিকৃতি, পারস্পরিক মতবিনিময় করতে বাধা, সামাজিক বাধার সম্মুখীন, ভাষার বিকাশ না হওয়া প্রভৃতি।

প্রশ্ন – যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা সমূহ আলোচনা কর

উত্তর – যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এই কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল – শারীরিক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা, মানসিক বাধা, ভাষাগত বাধা, প্রযুক্তিগত বাধা, মনোযোগের অভাব, আগ্রহের অভাব, উপলব্ধিগত সমস্যা প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

6 thoughts on “কার্যকরী যোগাযোগের বাধাসমূহ :10 Barriers of Effective Communication”

  1. Thank you so much 🥰

    Reply

Leave a Comment

close