Share on WhatsApp Share on Telegram

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য | Significance of Child Centered Education

Join Our Channels

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বলতে বোঝায়, শিশুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার ব্যবস্থা করাকে। আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বিভিন্ন তাৎপর্য (Significance of Child Centered Education) পরিলক্ষিত হয়।

প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত শিক্ষার ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যায় যে প্রাচীনকালে শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুদের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হতো না সেখানে শিক্ষা ছিল শিক্ষক কেন্দ্রিক। কিন্তু শিক্ষাবিদ রুশো এই ধারণার আমূল পরিবর্তন সাধন করে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাই বর্তমানকালের শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় পরিণত হয়েছে।

Table of Contents

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার ধারণা (Concept of Child Centered Education)

প্রাচীনকালের শিক্ষা ছিল গতানুগতিক ও শিক্ষক কেন্দ্রিক। অর্থাৎ প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল সংকীর্ণ প্রকৃতির শিক্ষা । সেখানে শিক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শিক্ষক। কিন্তু শিশুর উপর কোন গুরুত্ব আরোপ করা হতো না। ফলে শিক্ষা থেকে শিশুরা বঞ্চিত অবহেলিত থাকতো। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে বা আধুনিক যুগের সূচনা পর্বে শিক্ষার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। আর এই আধুনিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিশুকেন্দ্রিক (Child Centered Education) করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাচীন গতানুগতিক ও শিক্ষক কেন্দ্রিক শিক্ষার বিরোধিতা করে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার জন্ম হয়েছে।

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রবক্তা (Proponent of child-centered education)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার (Child Centered Education) প্রধান প্রবক্তা হলেন ফরাসি শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক রুশো (Jean Jacques Rousseau). তাই রুশোকে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার জনক বলা হয়ে থাকে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য (Significance of Child Centered Education)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা একটি শিক্ষামূলক পদ্ধতি যা শিশু বা শিক্ষার্থীকে শিখন প্রক্রিয়ার প্রধান কেন্দ্র। এই পদ্ধতিটি প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। তাই শিশুর চাহিদা, আগ্রহ, প্রবনতা এবং ক্ষমতা অনুসারে যে শিক্ষাব্যবস্থা তাকে, শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বলে।

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য (Significance of Child Centered Education) যে সমস্থ দিক থেকে বর্তমান, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. সামগ্রিক বিকাশ (Overall Development)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিশুর সামগ্রিক বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতি দিকের বিকাশ ঘটানো হয়। অর্থাৎ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

2. অন্তর্নিহিত প্রেষণা (Intrinsic motivation)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুর চাহিদা, প্রবণতা, আগ্রহ প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ফলে শিশুর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ শিশুর অন্তর্নিহিত প্রেষণার জাগরণ করার ক্ষেত্রে শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

3. স্বতন্ত্র শিখন (Individualized Learning)

প্রতিটি শিশুর একটি অনন্য শেখার ধরন এবং বোঝার স্তর রয়েছে। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষকদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাহিদা পূরণের জন্য তাদের শিক্ষার পদ্ধতিগুলিকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। যাতে কোনো শিক্ষার্থী পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করে। তাই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুর স্বতন্ত্র শিখনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। এদিক থেকে এটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

4. সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা-সমাধান (Critical Thinking and Problem-Solving)

শিশুকেন্দ্রিক শ্রেণীকক্ষে, শিক্ষার্থীদের প্রায়শই অন্বেষণ, অনুসন্ধান এবং বাস্তব-বিশ্বের সমস্যা সমাধানের সুযোগ থাকে। এটি সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে। তাই বলা যায় সমালোচনা মূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

5. বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা (Respect for diversity)

প্রতিটি শিশুই ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি সহ একটি অনন্য পরিবেশ থেকে আসে। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা এই বৈচিত্র্যকে মূল্য দেয় বা বৈচিত্র্যের প্রতি গুরু আরোপ করে থাকে। ফলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলে যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সংস্কৃতি এবং দৃষ্টিকোণ থেকে শেখে।

6. ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি (Preparing for the Future)

বিশ্ব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে ও সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাও সতত পরিবর্তিত হচ্ছে। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, যোগাযোগ, সহযোগিতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তার মতো দক্ষতার উপর জোর দেয়, যা আধুনিক কর্মশক্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুকে ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি তাৎপর্য রয়েছে।

7. মানসিক সুস্থতা (Mental Well-being)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা মানসিক সুস্থতার গুরুত্ব স্বীকার করে। এটি একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে যেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করে, যা তাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। তাই মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

8. জীবনব্যাপী শিক্ষা (Lifelong learning)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা জীবনব্যাপী শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি। তাই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা হল জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে শিশুরা সারা জীবনব্যাপী জ্ঞান অর্জন করবে বা শিক্ষা অর্জন করবে।

9. ইতিবাচক শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক (Positive Teacher-Student Relationship)

শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এই সম্পর্কটি যোগাযোগ, বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার উন্নতি ঘটায়। অর্থাৎ প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার মত শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষক কেন্দ্রিক নয়। বরং এই শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার ইতিবাচক ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক তৈরি হয়।

10. সৃজনশীলতার বিকাশ (Development of Creativity)

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের সহায়ক। তাই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ

এগুলি ছাড়াও শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য (Significance of Child Centered Education) আরোও যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল –

  • শিশুর চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ সাধন,
  • শিশুকে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের সুযোগ দান।
  • চারিত্রিক বিকাশ সাধন,
  • মূল্যবোধের বিকাশ সাধন।
  • স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলা স্থাপন করা সহজসাধ্য হয়।
  • গণতান্ত্রিকতাবাদের বিকাশ।
  • খেলাধুলা, ব্যায়াম প্রভৃতির মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ সাধন।

উপসংহার (Conclusion)

তাই বলা যায় শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুরা তাদের নিজস্ব শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশে সাহায্য করে না বরং সমাজে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে প্রস্তুত দায়িত্বশীল, কৌতূহলী এবং সক্ষম ব্যক্তিদের বিকাশকেও লালন করে থাকে।

তথ্যসূত্র (References)

  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব

উত্তর – শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব হল – শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন, সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন, মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা, অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশ সাধন, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান, ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা, জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রদান প্রভৃতি।

প্রশ্ন – শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার জনক কে?

উত্তর – রুশো (Jean Jacques Rousseau)-কে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার জনক বলা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন – শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রবর্তক কে?

উত্তর – শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রধান প্রবক্তা হলেন ফরাসি শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক রুশো (Jean Jacques Rousseau).

প্রশ্ন – শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখনের সুবিধা কি কি

উত্তর – শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখন এর সুবিধাগুলি হল – শিক্ষার্থীদের চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ সাধন, কোন বিষয়ে সমস্যার সমাধান মূলক চিন্তন, সৃজনশীলতার বিকাশ সাধন, সমালোচনামূলক চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ, স্বাধীনতা ও শৃঙ্খলা প্রদান প্রভৃতি।

আরোও পড়ুন

2.7/5 - (6 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

Leave a Comment

close