সকলের জন্য শিক্ষা বা সকল শিশুর শিক্ষা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষার অধিকার আইন 2009 (Right to Education Act) বা সংক্ষেপে RTE Act 2009)।
শিক্ষার অধিকার আইন কী | Right to Education Act 2009
2002 সালের 86তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের 21(A) নং ধারা সংযুক্ত হয়েছে। এই ধারায় শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে রাষ্ট্র 6 থেকে 14 বছর বয়সি প্রতিটি শিশুর জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
শিক্ষার অধিকার সংযুক্ত হওয়ার ফলে এটি মৌলিক অধিকারের পরিণত হয়েছে তাছাড়া সংবিধান সংশোধন হওয়ার আগেও সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায় ৪৫ নম্বর ধারায় শিশুদের বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার কথা উল্লেখ আছে।
অর্থাৎ 45 নম্বর ধারা অনুযায়ী – সংবিধান কার্যকর হয় ১০ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রকে ৬ থেকে 14 বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু এটি নির্দেশমূলক নীতির অধীনে থাকায় আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য ছিল না। ২০০২ সালে এটি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার ফলে সরকার এই ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
সংবিধানের 21(A) নং ধারার উপর গুরুত্ব আরোপ করে ২০০৯ সালের ৪ আগস্ট ভারত সরকার শিক্ষার অধিকার আইন প্রণয়ন করেন।
২০১০ সালের ১ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনটি কার্যকর করেন। জম্মু-কাশ্মীর বাদে ভারতবর্ষের সকল প্রদেশে বা রাজ্যে শিক্ষার অধিকার আইনটি কার্যকর হয়।
এই আইন অনুযায়ী – রাষ্ট্র ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার প্রদান করবে।
শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এর উদ্দেশ্য
শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এর উদ্দেশ্য গুলি হল –
i) ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সফল শিশুর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
ii) বিদ্যালয় ছুট বা ড্রপ আউটের সংখ্যা কমানো।
iii) সকলের জন্য শিক্ষার নীতি বাস্তবায়ন করা।
iv) সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করা।
v) বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
vi) জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সমান সুযোগ তৈরি করা বা সমসুযোগ দান করা।
vii) শিক্ষার গুণগতমানের উন্নয়ন সাধন করা। অর্থাৎ যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং শিশুদের শিক্ষা সুনিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন করা শিক্ষার অধিকার আইনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
viii) দারিদ্র এবং প্রান্তিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
ix) শিশু শিক্ষার মাধ্যমে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমানো অর্থাৎ প্রতিটা শিশুর শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তাদের শৈশব কালকে উজ্জ্বল করে তোলা এই আইনের উদ্দেশ্য।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে ভারতে শিশুদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অর্থাৎ স্বাধীনতার কয়েক দশক পর ভারতবর্ষে সকল শিশুর শিক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ (Right to Education Act) একটি কার্যকরী পদক্ষেপ এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
তথ্যসূত্র (References)
- Kar. Chintamani, Exceptional Children Their Psychology and Education. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi.
- Kirk, S. A. Educating Exceptional Children. Oxford IBH. New Delhi.
- Mangal, S. K. Educating Exceptional Children: An Introduction to Special Education. PHI Learning Pvt. Ltd. New Delhi.
- Panda, K. C. Education of Exceptional Children. Vikas Publishing House Pvt. Ltd. New Delhi.
- Right to Education Act | RTE Act 2009
- Internet sources
প্রশ্ন – শিক্ষার অধিকার আইন কবে কার্যকর হয়
উত্তর – শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হয় ১লা এপ্রিল ২০১০ সাল থেকে। তবে এক্ষেত্রে ভারতবর্ষের জম্মু কাশ্মীর ব্যতীত সমস্ত জায়গায় এটি কার্যকরী হয়।
প্রশ্ন – শিক্ষার অধিকার আইন কবে পাস হয়
উত্তর – শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ সালের ৪ঠা আগস্ট পাস হয়।
আরোও পড়ুন
- অন্তর্ভুক্তিকরণের বাধা সমূহ | Barriers to Inclusion
- তপশিলি জাতি ও উপজাতি কাকে বলে | Concept of Scheduled Castes and Tribes
- বহু কৃষ্টি মূলক সমাজের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for a Multicultural Society
- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষার ভূমিকা | Role of Education for Peaceful Coexistence
- বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সমাজের ভূমিকা | Role of Society in Creating Barrier Free Environment
- বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of School in Creating a Barrier Free Environment
শিক্ষার অধিকার আইন 2009| Right to Education Act | RTE Act 2009 সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।