Share on WhatsApp Share on Telegram

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি কি | প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য | Emotional Intelligence

Join Our Channels

সাধারণ বুদ্ধির মত প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি ব্যক্তির একটি মানসিক ক্ষমতা। প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি (Emotional Intelligence) ব্যক্তির প্রক্ষোভ বা আবেগের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

মানুষের সাধারণ প্রক্ষোভ গুলি হল রাগ, ভয়, ভালবাসা প্রভৃতি। ব্যক্তি যখন নিজের আবেগ বা প্রক্ষোভকে বুঝতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তখন প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি বিশেষভাবে সহায়তা করে। এখানে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি কি, এর বৈশিষ্ট্য ও উপাদান গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি কি | Emotional Intelligence

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির হল এমন বুদ্ধি যা ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রক্ষোভগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকার বুদ্ধিকে ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা দিয়েছেন। এগুলি হলো নিম্নলিখিত –

আমেরিকার মনোবিজ্ঞানী পিটার স্যালোভে এবং জন মায়ের বলেছেন – প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি হল এমন এক সক্ষমতা যা ব্যক্তিকে তার আবেগ সঠিকভাবে উপলব্ধি, মূল্যায়ন ও প্রকাশ করতে, চিন্তাপূর্ণ অনুভূতিগুলিকে সৃষ্টি ও প্রকাশ করতে, প্রক্ষোভ ও প্রাক্ষোভিক জ্ঞান উপলব্ধি করতে, প্রাক্ষোভিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য তার আবেগ বা প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল গোলম্যান বলেছেন – প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি হল ব্যক্তির নিজের এবং অন্যদের অনুভূতি গুলিকে অনুভব করার ক্ষমতা। যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেদের অনুপ্রাণিত করতে পারে এবং নিজেদের আবেগ ও সম্পর্কগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে।

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মধ্যে অন্যকে বোঝার ক্ষমতা ও নিজের প্রক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকে। তাই প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

i) অভিযোজনমূলক প্রক্রিয়া।

ii) আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাযুক্ত প্রক্রিয়া।

iii) অন্যের প্রক্ষোভকে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারা।

iv) নিজের প্রক্ষোভকে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে পারা।

v) শান্তিপ্রিয় মানসিকতা।

vi) উচ্চ মানসিক স্বাস্থ্য যুক্ত প্রক্রিয়া প্রভৃতি।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির উপাদান

ড্যানিয়েল গোলম্যান 1995 সালে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির পাঁচটি উপাদানের কথা তাঁর বিখ্যাত বই Emotional Intelligence এ প্রকাশ করেছেন, এগুলি হল –

i) আত্ম-সচেতনতা (Self-awareness)

আত্ম সচেতনতা হল প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির একটি অন্যতম উপাদান। এটি এমন একটি সক্ষমতা যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের আবেগ ও প্রক্ষোভগুলিকে উপলব্ধি করতে পারে এবং এ বিষয়ে সচেতন হতে পারে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি সমাজের অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কি আচরণ করবে বা কোনটা উচিত বা অনুচিত তার সম্পর্কে সচেতন থাকে।

ii) আত্ম নিয়ন্ত্রণ (Self-control)

আত্ম সচেতনতার পাশাপাশি প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির দ্বিতীয় অন্যতম উপাদান হল আত্ম নিয়ন্ত্রণ। এক্ষেত্রে ব্যক্তি তার নিজের প্রক্ষোভগুলিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ কোনো কারণে রাগের উৎপত্তি হলে ব্যক্তি সেই রাখকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হওয়াটাই হল আত্মনিয়ন্ত্রণ।

তাই এই ক্ষমতার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের আবেগ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং কোন নির্দিষ্ট আচরণ বা কর্ম সম্পাদনের পূর্বে তার করণীয় বিষয় সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।

iii) প্রেষণা (Motivation)

প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রেষণা। এটি হল এমন ক্ষমতা যা ব্যক্তিকে পরিবেশের সকল উদ্দীপক থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তিকে কর্ম সম্পাদনে জন্য অনুপ্রাণিত করে তোলে।

iv) সহমর্মিতা (Empathy)

সহমর্মিতা এমন একটি গুন যা ব্যক্তির অনুভূতি গুলির বাস্তবায়নের সাহায্য করে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সুখ দুঃখ অনুভব করতে পারে এবং নিজের সুখ দুঃখগুলিকেও অন্যজনের সাথে ভাগাভাগি করতে পারে। অর্থাৎ সংবেদনশীলতা, ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহনশীলতা প্রভৃতি এর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

v) সামাজিক দক্ষতা

সামাজিক দক্ষতা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির সর্বশেষ উপাদান। এটি ব্যক্তিকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলে। অর্থাৎ এই দক্ষতার ফলে ব্যক্তি অন্য সকল ব্যক্তির সঙ্গে ইতিবাচক, কার্যকরী যোগাযোগ, যৌথভাবে কর্ম সম্পাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠে। তাই এটি ব্যক্তির সামাজিকীকরণের পরিচায়ক।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির (Emotional Intelligence) মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজের অস্বাভাবিক আচরণ গুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। তাই ব্যক্তি জীবনে এই প্রকার বুদ্ধি ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করতে বা মানিয়ে নিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এর ফলে ব্যক্তি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও কার্যকরী চিন্তন প্রভৃতির দিক থেকে দক্ষ হয়ে ওঠে।

তথ্যসূত্র (Reference)

  • A. Woolfolk – Educational Psychology – Pearson Education
  • J. W. Santrock – Educational Psychology – Mc Gray Hill
  • J. C. Aggarwal – Essentials of Educational Psychology – Vikas publisher
  • S. K. Mangal – Essentials of Educational Psychology – PHI Ltd.
  • S. K. Mangal – Advanced Educational Psychology – PHI Ltd
  • S. S. Chauhan – Advanced Educational Psychology – Vikas publisher
  • E. B. Hurlock – Child Development – Anmol Publication Pvt. Ltd
  • L. E. Berk – Child Development – PHI Ltd
  • Internet Sources

প্রশ্ন – EQ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর – EQ বা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি হল এমন এক বুদ্ধি যার মাধ্যমে ব্যক্তি আত্মসচেতন হয়ে ওঠে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং অন্যের প্রক্ষোভগুলিকে বুঝতে পারে, ফলে ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক দক্ষতার বিকাশ ঘটে।

প্রশ্ন – Eq এর পূর্ণরূপ কি?

উত্তর – Eq এর পূর্ণরূপ হল Emotional Quotient or Emotional Intelligence বা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি।

প্রশ্ন – Eq ও iq মানে কি?

উত্তর – Eq মানে হল Emotional Quotient or Emotional Intelligence বা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি। আর অপরদিকে iq এর মানে হল Intelligence Quotient বা বুদ্ধাংক।

আরোও পড়ুন

5/5 - (1 vote)

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close