আধুনিক যুগ প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি ছাড়া সমাজ এক মুহূর্ত চলতে পারে না। শিক্ষাও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই শিক্ষার প্রতিটি স্তরে প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বর্তমানে প্রযুক্তি এবং শিক্ষা একে অপরের পরিপূরক (Important of Technology in Education) হিসাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এর ফলে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া এখন সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠছে। ফলে অতি অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সহজে শিক্ষাদান করা সম্ভবপর হয়। প্রযুক্তি একদিকে যেমন সমাজকে পরিবর্তনশীল করে তুলছে। আবার অপরদিকে শিক্ষার উন্নতি সাধন করতে সচেষ্ট হচ্ছে। এখানে প্রযুক্তি কি ? এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান কোন কোন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি আলোচনা করা হল –
প্রযুক্তি কি
ইংরেজি Technology শব্দটি গ্রীক শব্দ ‘Tekhnologia’ থেকে এসেছে, যার অর্থ পদ্ধতিগত বর্ণনা বা নৈপুণ্যের বিজ্ঞান। সুতরাং প্রযুক্তি হল উন্নত বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নের সেই শাখা, যা অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং পরিশীলিত।
বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদগণ প্রযুক্তিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ও সংজ্ঞায়িত করেছেন। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল –
1. বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ টেপস্ট্রা এবং ডেভিড (Tepstra and David – 1985) বলেছেন – “Technology as a cultural system concerned with the relationships between humans and their environment.” অর্থাৎ প্রযুক্তি মানুষের এবং তাদের পরিবেশের মধ্যে সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত একটি সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা।
2. প্রযুক্তিবিদ জন কেনেথ গ্যালব্রেথ (John Kenneth Galbraith) বলেছেন – “Technology means the systematic application of scientific or other organized knowledge to practical tasks.” অর্থাৎ প্রযুক্তি বলতে ব্যবহারিক কাজে বৈজ্ঞানিক বা অন্যান্য সংগঠিত জ্ঞানের পদ্ধতিগত প্রয়োগ।
তাই প্রযুক্তি হল সেই জ্ঞান এবং যন্ত্রগুলিকে বোঝায়, যা মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে ব্যবহার করে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান | Important of Technology in Education
প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য থেকে শুরু করে, শিক্ষায় পাঠক্রম, শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রভৃতি নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি নিম্নলিখিত –
1. শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ ও প্রযুক্তি
আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া আধুনিক শিক্ষা প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার ফলে শিক্ষার লক্ষ্যও প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – আধুনিক বিশ্বে কম্পিউটার একটি অন্যতম আবিষ্কার। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটারের জ্ঞান অর্জন করা আধুনিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এদিক থেকে বলা যায় প্রযুক্তি শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
2. শিক্ষার পাঠক্রম নির্ধারণ ও প্রযুক্তি
বর্তমান যুগ প্রযুক্তি নির্ভর। তাই শিক্ষার লক্ষ্যও প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হচ্ছে। সমাজ সহ শিক্ষার সর্বত্র ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অসামান্য অবদান পরিলক্ষিত হয়। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য অনুযায়ী পাঠক্রম নির্ধারণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিশেষ ভূমিকা বর্তমান।
3. শিক্ষাদান পদ্ধতি ও প্রযুক্তিবিদ্যা
শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আরোও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হয়। তাই শিক্ষাকে আরো বেশি শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান বর্তমান।
4. প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যবহার
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণ যথাযথ ব্যবহার করতে হলে প্রযুক্তির সাহায্য অবশ্যই প্রয়োজন। তাই শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহজে মনোযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
5. প্রোগ্রাম শিখনের মাধ্যমে শিক্ষা
প্রোগ্রাম শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দ্রুত শিখনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রোগ্রাম শিখনকে কার্যকরী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান বর্তমান।
6. শিক্ষণ মডেল ও প্রযুক্তিবিদ্যা
বর্তমানে শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আরও আকর্ষণীয় ও শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক করার জন্য বিভিন্ন মডেল ভিত্তিক শিক্ষা বা শিক্ষণ মডেলের উদ্ভাবন হয়েছে। এই মডেল গুলি প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। যেমন – প্রোগ্রাম শিখন (Programme Learning), তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শিক্ষণ মডেল (Information Processing Teaching Model) প্রভৃতি।
আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now |
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষার উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়। তাই আধুনিক শ্রেণিকক্ষ প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার ফলে ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ হিসাবে গড়ে উঠেছে। তাই যে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থাকে সহজে কার্যকরী করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অসামান্য অবদান পরিলক্ষিত হয়। এদিক থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্য | সামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ |
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা | শিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা |
তথ্যসূত্র (Reference)
- Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
- Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
- Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
- Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
Publications - Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,
প্রশ্ন – শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার
উত্তর – শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার গুলি হল – i) প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যকে সহজে সম্পন্ন করা যায়, ii) প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কোন বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে সহজে উপস্থাপন করা যায়, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে জ্ঞান লাভ করতে পারে।
আরোও পড়ুন
- যোগাযোগ কাকে বলে | যোগাযোগ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য | What is Definition of Communication
- যোগাযোগ প্রক্রিয়ার উপাদান | 8 Essential Components of Communication
- শিক্ষার সমাজতত্ত্বের পরিধি | Scope of Sociology of Education
- সামাজিক স্তরবিন্যাস কি | সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন | Types of Social Stratification
- Social Mobility: সামাজিক সচলতা কাকে বলে | সামাজিক সচলতার বৈশিষ্ট্য
- Types of Social Mobility: সামাজিক সচলতার প্রকারভেদ
ধন্যবাদ, প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরো সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে।