Share on WhatsApp Share on Telegram

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে | প্রকৃতি | Definition of Educational Sociology

Join Our Channels

আধুনিক শিক্ষাকে সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। শিক্ষার সাথে সমাজের সম্পর্কের বিষয়ে উপর ভিত্তি করে সমাজবিজ্ঞানের যে শাখার সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান (Educational Sociology)।

ঊনবিংশ শতাব্দীর থেকে শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে চর্চা শুরু হয়। সমাজ এবং ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনাও শুরু হয়। ফলে শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের চর্চার জন্য শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান নামক শাখার জন্ম হয়। এখানে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে? শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান | Educational Sociology

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হল শিক্ষা ও সমাজের মধ্যে যে সুসম্পর্ক, বোঝাপড়া বা বিভিন্ন নিয়ম কানুন বর্তমান সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয় । অর্থাৎ শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীদের মতে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের যে সমস্ত সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. সমাজবিদ অধ্যাপক ব্রাউন (Brown) বলেছেন – “শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করে”।

2. সমাজবিজ্ঞানে পেইনি (Payne) বলেছেন – যে বিজ্ঞানে মানুষের অভিজ্ঞতা অর্জনের এবং অভিজ্ঞতা পুনর্বিন্যাসের সহায়ক সামাজিক সম্পর্কগুলির সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক গোষ্ঠী প্রভৃতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত আলোচনা করা হয়, তাকে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান বলে।

3. আবার সমাজবিদ কার্ল ম্যানহেইম (Manhaim) মনে করেন – শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ তাত্ত্বিক আলোচনার বিষয় বলে মনে করা হয় না। এখানে তথ্য সংগ্রহ যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি তথ্যের অনুসন্ধান করাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

তাই বলা যায়, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে সমাজবিজ্ঞানের একটি বিশেষ দিক যা সামাজিক ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রক্রিয়ার গঠনগত এবং পরিবর্তনশীল বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হল শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মিলিত রূপ। শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে পরিলক্ষিত হয় যে শিক্ষা ও সমাজতত্ত্বের বা সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে একে অপরের দ্বারা পরিপুষ্ট হয়ে গড়ে ওঠে।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি যে সমস্ত দিকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. সামাজিক মিথস্ক্রিয়ামূলক

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান প্রকৃতিগত দিক থেকে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ামূলক। এটি সমাজ জীবনে সামাজিক গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগ প্রভৃতির মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিকে সমাজ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলে।

2. উদ্দেশ্যমূলক বিজ্ঞান

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান হল একটি উদ্দেশ্যমূলক বিজ্ঞান। অর্থাৎ এখানে একটি নির্দিষ্ট মান অনুসারে সমাজ উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। যার জন্য যথোপযুক্ত ব্যক্তির সামাজিক অভিযোজন ও সংহতির হয়।

3. প্রয়োগমূলক প্রকৃতির

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান একটি প্রয়োগমূলক বিজ্ঞান। তাই সমাজবিদ Young বলেছেন – ” মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সংযোগমূলক দিক হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান”। তাই শিক্ষাবিজ্ঞান সমাজবিদ্যার প্রয়োগমূলক শাখা রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।

4. সামাজিক প্রকৃতির

শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার গঠনগত বিষয় এবং তার পশ্চাতে বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করে থাকে। এখানে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

5. বিজ্ঞানসম্মত প্রকৃতির

সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানসম্মত বা বিজ্ঞান চেতনার বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। এটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান তথা বিদ্যালয়, সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক পরিবর্তনশীলতা, সামাজিক অগ্রগতি, সামাজিক সচলতা ও স্তরবিন্যাস, সামাজিক প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিজ্ঞানসম্মতভাবে আলোকপাত করা হয়।

তাই বলা যায়, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি শিক্ষা ও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষা দান প্রক্রিয়ার গঠনগত বিষয় এবং তার পশ্চাতে দার্শনিক ভিত্তি ও তত্ত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়। সামাজিক ও ব্যক্তির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক এবং সমাজের সামগ্রিক বিষয় নিয়েও আলোকপাত করা হয়।

পরিশেষে শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান নিত্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা গঠিত বিষয়গুলিকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করার মাধ্যমে সেটিকে উন্নত করে গড়ে তোলে।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের উৎস হল শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজতাত্ত্বিক আগ্রহ থেকে। অর্থাৎ শিক্ষাবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান পারস্পরিক মিলিতভাবে তৈরি হয়েছে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান। তাই সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষা বিজ্ঞানের বিভিন্ন চিন্তাধারা সার্থক সমন্বয় হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান।

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্যসামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকাশিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
  • Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
  • Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
  • Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
    Publications
  • Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,

প্রশ্ন – শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ বিজ্ঞানের জনক কে?

উত্তর – শিক্ষাশ্রয়ী সমাজ বিজ্ঞানের জনক হল – অগাস্ট কোঁতে (Aught Comte)

আরোও পড়ুন

3.2/5 - (11 votes)

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

Leave a Comment

close