Share on WhatsApp Share on Telegram

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর | Nature and Scope of Sociology

Join Our Channels

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে সমাজের মধ্যেই তার জীবনধারা সংঘটিত হয়ে থাকে। মানুষের জীবনধারার পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়ন করার জন্য সমাজবিজ্ঞান নামক একটি নতুন শাখার জন্ম হয়েছে। মূলত সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি (Nature and Scope of Sociology) ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যেখানে সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য হল ব্যক্তি কিভাবে সমাজ জীবনের সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে সেটিকে সম্পূর্ণভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনা করা। তাই বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ সামনার (Sumner) সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের বিজ্ঞানী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি কোন কোন দিক থেকে বিস্তৃত তা আলোচনা করা হল।

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি | Nature and Scope of Sociology

বিশিষ্ট সমাজবিদ মরিস জিন্সবার্গ বলেছেন – সমাজবিজ্ঞান হল মানুষের মিথস্ক্রিয়া এবং পারস্পরিক সম্পর্কিত বিষয় এবং তাদের ফলাফলের অধ্যয়ন।

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি বিষয়টি বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। মূলত সমাজকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি নির্ধারিত হয়ে থাকে। এখানে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি

সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক বিজ্ঞান। তাই ম্যাক্স ওয়েবার সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান

সমাজ বিজ্ঞান হল একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এখানে সমাজের যাবতীয় বিষয় সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তাই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি হল এটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

2. সমাজের বিজ্ঞান

সমাজবিজ্ঞান সম্পূর্ণ সামাজিক প্রকৃতির। অর্থাৎ সমাজের সমস্ত কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়ে থাকে। সমাজকে কেন্দ্র করে এই বিজ্ঞান গঠিত হয়। ব্যক্তির থেকে সমাজের গুরুত্ব অধিক ভাবে আরোপিত করা হয়। তাই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি হল এটি সমাজের বিজ্ঞান।

3. বিজ্ঞানসম্মত বা পদ্ধতিগত বিজ্ঞান

সমাজবিজ্ঞানে যে সমস্ত বিষয় আলোচনা করা হয় সেগুলি সবকিছুই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে উল্লেখ করা থাকে। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু বিজ্ঞানসম্মত বা পদ্ধতিগতভাবে উল্লেখিত হয়। তাই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি হল এটি বিজ্ঞানসম্মত বা পদ্ধতিগত বিজ্ঞান।

4. স্বতন্ত্র বিজ্ঞান

সমাজবিজ্ঞান সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রকৃতির। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে স্বতন্ত্রতা পরিলক্ষিত হয়। তাই সমাজবিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে স্বতন্ত্র প্রকৃতির হয়ে থাকে।

5. তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রকৃতির

সমাজবিজ্ঞান একদিকে যেমন বিভিন্ন তত্ত্বের উল্লেখ করে থাকে অপরদিকে তেমনি সেগুলির বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে। তাই সমাজবিজ্ঞান একদিকে যেমন তাত্ত্বিক প্রকৃতির অন্যদিকে তেমনি ভাবে ব্যবহারিক প্রকৃতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ সমাজের মধ্যে ব্যক্তির অবস্থান কি হবে এবং ব্যক্তি কিভাবে জীবন ধারণ করবে বা সমাজের মধ্যে টিকে থাকবে সেগুলি সবই সমাজবিজ্ঞান আলোকপাত করে থাকে।

6. সর্বজনীন বিষয়

সমাজবিজ্ঞান সর্বজনীন প্রকৃতির। অর্থাৎ সমাজের সকল মানুষের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে সমাজের সৃষ্টি হয়। তাই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে সমাজের যাবতীয় বিষয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। সমাজ কল্যাণ সাধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি কল্যাণ সম্ভব করা হয়। তাই যে সমাজ যত বেশি উন্নত সেই সমাজের ব্যক্তিবর্গের জীবনযাত্রার মান তত বেশি উন্নত।

তাছাড়া পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায় সমাজের অবস্থান রয়েছে। সমাজ ছাড়া ব্যক্তিকে এককভাবে কল্পনা করা কখনোই সম্ভবপর নয়। তাই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সর্বজনীন বিষয়ের মধ্য দিয়ে পরিলক্ষিত হয়।

সমাজবিজ্ঞানের পরিধি

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতির মতো সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানের পরিধি যে সমস্ত দিকে বিস্তৃত, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. সামাজিক সম্পর্কের অনুশীলন

সামাজিক সম্পর্কে অনুশীলন করাই হল সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্গত। অর্থাৎ সমাজে অবস্থিত বিভিন্ন মানুষের বা ব্যক্তির মধ্যে যে সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে তার যথাযথ অনুসন্ধান ও অনুশীলন করা সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্গত।

2. সমাজ হল প্রধান

সমাজবিজ্ঞানে সমাজ হল প্রধান এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। সমাজকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তির থেকে সমাজের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে।

3. সামাজিক গোষ্ঠী

সামাজিক গোষ্ঠী হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক। সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক গোষ্ঠী সংক্রান্ত বিষয়বস্তু আলোচনা করা হয়। তাই সামাজিক গোষ্ঠী সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্গত। সমাজে কিভাবে ব্যক্তির মধ্যে দল বা গোষ্ঠী সৃষ্টি হয় বা এগুলি কত প্রকার সে সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়।

4. সামাজিক সচলতা

সামাজিক সচলতা বা গতিশীলতা বলতে বোঝায় সমাজে অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের পদমর্যাগত পরিবর্তন। শিক্ষা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ফলে মানুষের যে পদমর্যাদাগত পরিবর্তন সাধিত হয় তা সামাজিক সচলতার অন্তর্গত। আর এই বিষয় সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনা করা হয় সমাজবিজ্ঞানে। তাই সামাজিক সচলতা সমাজবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে অন্তর্গত।

5. সামাজিক স্তরবিন্যাস

প্রতিটা ব্যক্তির একটি অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ অর্থনীতি, শিক্ষা, ধর্ম প্রভৃতির ভিত্তিতে ব্যক্তিকে স্তরবিন্যাস করা হয়। সাধারণভাবে এটি হল সামাজিক স্তরবিন্যাস। সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক স্তরবিন্যাসের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়ে থাকে।

এছাড়া এমিল ডুর্খহেইম সমাজবিজ্ঞানকে ‘ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান’ হিসেবে চিন্তা করন করেছেন। তিনি সমাজতত্ত্বকে বা সমাজবিজ্ঞানকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যার মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের পরিধিগত বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। সেই তিনটি বিষয় হল –

i) সামাজিক অঙ্গ সংস্থানগত বিদ্যা – এর মধ্যে অন্তর্গত বিষয়সমূহ হল সমাজের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সমাজের আকার আয়তন প্রভৃতি।

ii) সামাজিক শারীরবিদ্যা – ডুর্খহেইম বলেছেন – বিভিন্ন তত্ত্বের সাহায্যে সমাজ গড়ে ওঠে। যেমন – পরিবার, ধর্ম, নৈতিকতা প্রভৃতি। এগুলি সামাজিক শারীরবিদ্যার বিশেষ অন্তর্গত বিষয়।

iii) সাধারণ সমাজবিজ্ঞান – সমাজবিজ্ঞানের এই বিভাগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সামাজিক প্রক্রিয়াসমূহ এবং গোষ্ঠী সমূহর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। যেটি সমাজ জীবন তথা ব্যক্তিজীবনকে বিশেষভাবে ব্যবহৃত করে।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি এবং পরিধি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি সমাজের একটি বিস্তৃত ও ব্যাপক অংশ। এর মধ্যে সমাজের যাবতীয় বিষয় অন্তর্গত। অর্থাৎ শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়াটি যেভাবে সংঘটিত হয়, সমাজবিজ্ঞানে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ও গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করা হয়ে থাকে।

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্যসামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকাশিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
  • Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
  • Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
  • Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
    Publications
  • Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,

প্রশ্ন –

উত্তর

আরোও পড়ুন

5/5 - (1 vote)

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close