হার্বাট স্পেন্সারের শিক্ষা চিন্তা | Herbert Spencer Contribution to Education

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষাবিদের মধ্যে অন্যতম পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদ হলেন হার্বাট স্পেন্সার। হার্বাট স্পেন্সারের শিক্ষা চিন্তা (Herbert Spencer Contribution to Education) শিক্ষার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

হার্বাট স্পেন্সারের জন্ম ১৮২০ সালের ইংল্যান্ডের ডার্বি শহরে। ছোটবেলা থেকে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন পদার্থবিদ্যার একজন পন্ডিত শিক্ষক। হার্বাট স্পেন্সারের প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উপর এবং গণিত শাস্ত্রের উপর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি প্রথমে লন্ডনে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীকালে অর্থনীতিবিদ হিসেবে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯০৩ সালেএই মহান শিক্ষাবিদ তথা চিন্তাবিদ প্রয়াত হন।

হার্বাট স্পেন্সারের শিক্ষা চিন্তা | Herbert Spencer Contribution to Education

বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষাকে বিজ্ঞানভিত্তিক করার জন্য যার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন হার্বাট স্পেন্সার। তাই হার্বাট স্পেন্সারের শিক্ষা চিন্তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুক্তিবাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

হার্বাট স্পেন্সার ছিলেন বিশিষ্ট পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল, জন ডিউই এবং ভারতীয় শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরস্বামী বিবেকানন্দের সমসাময়িক।

হার্বাট স্পেন্সারের শিক্ষা চিন্তা বিশ্লেষণ করলে যে সমস্ত দিক বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

শিক্ষার লক্ষ্য

হার্বাট স্পেন্সার তৎকালীন সমাজের অবাস্তব এবং গতিহীন শিক্ষাব্যবস্থাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর মতে যে শিক্ষার ব্যবহারিক মূল্য নেই সেই শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়।

হার্বাট স্পেন্সার বলেছেন – শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা বা ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে বাঁচতে সহায়তা করা।

শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে যে সমস্ত দিকের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন, সেগুলি হল –

i) ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন বা পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রস্তুত করা,

ii) ব্যক্তিকে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা,

iii) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুনাগরিকের গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা প্রভৃতি।

শিক্ষার পাঠক্রম

শিক্ষার পাঠক্রম হিসেবে হার্বাট স্পেন্সার গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। তিনি শিক্ষার পাঠকের মধ্যে যে সমস্ত বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব করেছিলেন, সেগুলি হল – শারীরি বিদ্যা, স্বাস্থ্যবিদ্যা, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, জীববিদ্যা প্রভৃতি।

এ ছাড়া ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অবসর সময় কাটানোর জন্য এবং সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য সাহিত্য, অংকন, সঙ্গীত প্রভৃতি পাঠক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলেন।

শিক্ষাদান পদ্ধতি

হার্বাট স্পেন্সারের শিক্ষা চিন্তা মধ্যে অন্যতম দিক হল শিক্ষাদান পদ্ধতি। তিনি শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে বিজ্ঞানসম্মত এবং সক্রিয়তা ভিত্তিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে হার্বাট স্পেন্সার যে সমস্ত দিকের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন, সেগুলি হল –

i) শিক্ষাদান পদ্ধতি হবে বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক,

ii) শিক্ষাদানের সময় শিক্ষক সহজ থেকে কঠিন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করবেন।

iii) শিক্ষাদান পদ্ধতি হবে আনন্দদায়ক এবং আকর্ষণীয়। যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে সহজে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।

iv) বিভিন্ন অজানা বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহী করে তুলতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষকের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

নৈতিক শিক্ষা

হার্বাট স্পেন্সার শিশুদের নৈতিকতার শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন শিশুদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে মিসতে হবে। অর্থাৎ বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্ম নিয়ন্ত্রণ এবং উৎসাহ জাগবে। ফলে তাদের নৈতিকতার বিকাশ ঘটবে।

শারীর শিক্ষা

শারীর শিক্ষা সম্পর্কে হার্বাট স্পেন্সারের চিন্তাভাবনা ছিল বিজ্ঞানসম্মত প্রকৃতির। অর্থাৎ তিনি বিজ্ঞানসম্মতভাবে শারীর শিক্ষা দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন। এর জন্য পাঠক্রমে শারীর শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্তির করার কথা বলেন।

তিনি শিক্ষায় শারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে শারীর শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

শৃঙ্খলা

শৃঙ্খলা সম্পর্কে হার্বাট স্পেন্সার গুরুত্বপূর্ণ মতামত পোষণ করেন। তিনি শিক্ষায় শৃঙ্খলার কথা বললেও শিক্ষার্থীদের শাস্তিরদানের বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ তিনি শাস্তির মাধ্যমে শৃঙ্খলা আনয়নের পক্ষপাতি ছিলেন না।

তিনি মনে করতেন শিশুকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তিনি বলেন প্রাকৃতিক অনুশাসন শিশুর শৃঙ্খলা আনয়নের সহায়ক হবে।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, শিক্ষাকে বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক করার ক্ষেত্রে হার্বাট স্পেন্সারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষাকে বাস্তবমুখী এবং গতিধর্মী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হার্বাট স্পেন্সারের অসামান্য অবদান আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • Internet Sources

প্রশ্ন – হার্বার্ট স্পেন্সারের দুটি গ্রন্থের নাম

উত্তর – দুহার্বার্ট স্পেন্সারের দুটি গ্রন্থের হল – i) The Principles of Psychology (1855) ও ii) Education (1861)

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close