Share on WhatsApp Share on Telegram

নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান | Vivekananda on Women’s Education

Join Our Channels

যুগ যুগ ধরে যে সমস্ত মনীষী ও শিক্ষাবিদ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারী শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ অবদানের স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ। অর্থাৎ নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান (Vivekananda on Women’s Education) ছিল বিশেষ প্রশংসনীয়।

রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারকদের মতো বিবেকানন্দ ছিলেন ভারত গড়ার কারিগর। তিনি একদিকে যেমন নতুন ভারত গঠনের মন্ত্রে সবাইকে দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন তারই পাশাপাশি নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি বেলুড় মঠের সমান্তরালে নারীদের শিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান | Vivekananda on Women’s Education

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে দর্শন শাস্ত্র নিয়েগ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সান্নিধ্য অনুভব করেন এবং ভারতবর্ষের দুঃখ দুর্দশা মোচনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে তিনি ভারতীয় বেদান্তের মহিমা উপস্থাপন করেন এবং সেখান থেকে তিনি সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন।

নারী শিক্ষার আবশ্যিকতা

স্বামী বিবেকানন্দ নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। নারী শিক্ষার আবশ্যিকতা সম্পর্কে বিবেকানন্দ বলেছিলেন – একটি ডানার সাথে যেমন পাখি আকাশে উঠতে পারে না, তেমনি শুধুমাত্র পুরুষজাতি শিক্ষিত হলে সামাজিক সুস্থতা বজায় থাকে না।

তিনি আরোও বলেন – পাঁচশ পুরুষের সাহায্যে ভারতবর্ষ জয় করতে পঞ্চাশ বছর সময় লাগবে, কিন্তু পাঁচশ নারীর সাহায্যে কেবলমাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা সম্ভব হবে।

নারী শিক্ষায় অবদান

স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণদেবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েধর্ম প্রচারের পাশাপাশি শিক্ষার বিস্তারে ব্রতী হয়েছিলেন। বিশেষত নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান বা নারী শিক্ষার বিস্তারে তার ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।

নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের ভূমিকা বা নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের ভূমিকা যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. বিদ্যালয় স্থাপন

নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ মনে করেন যে গ্রামে গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হলে প্রথমে বিদ্যালয়ে স্থাপন করতে হবে। তাই নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান হল গ্রামে গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন।

2. নারী শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা

স্বামী বিবেকানন্দের নারী শিক্ষার ভিত্তি ছিল আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আদর্শ। তিনি প্রাচীন ভারতীয় নারী সিতা, সাবিত্রী, খনা, লীলাবতী, গার্গী প্রমূখ নারীদের আদর্শকে সামনে রেখে নারী শিক্ষার আবশ্যিকতাকে স্বীকার করেছিলেন।

নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ বলেন – আমাদের দেশের মেয়েরা বিদ্যাবুদ্ধি অর্জন করুক এ আমি খুবই চাই। কিন্তু পবিত্রতা বিসর্জন দিয়ে যদি তা করতে হয়, তবে তা নয়।

3. শিক্ষার পাঠক্রম

বিবেকানন্দ মনে করতেন নারীরা উপযুক্ত শিক্ষিত হলে সমাজ এগিয়ে চলবে। তাই তিনি নারী শিক্ষার পাঠক্রমের উপরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

নারী শিক্ষার পাঠক্রম বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী উপাদানগুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। বিবেকানন্দ নারী শিক্ষা পাঠকের মধ্যে যে সমস্ত বিষয় অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ভাষা, সাহিত্য, ব্যাকরণ, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ধর্ম, দর্শন প্রভৃতি।

এছাড়া বৃত্তি শিক্ষার পাঠক্রম হিসেবে সেলাই, রন্ধন, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন

4. বিদ্যালয় স্থাপন

বিবেকানন্দ নারী শিক্ষার বিস্তার সাধনের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ বেলুড় মঠের সমান্তরাল মেয়েদের মঠের পরিকল্পনা করেছিলেন। তারই বাস্তবায়ন হল – সারদামঠ। এই সারদামঠে মেয়েরা ইচ্ছা করলে সারা জীবন ব্রহ্মচর্য বোধ পালন করতে পারবে। তাছাড়া এই মঠে সেবামূলক বিভিন্ন কাজ, অধ্যাপনা প্রভৃতিতে মেয়েরা তাদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারবে।

তাছাড়া স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারী শিক্ষার বিস্তারে ভগিনী নিবেদিতা বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। নিবেদিতার আত্মত্যাগ হিসেবে ‘নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকানারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ
নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, রাজা রামমোহন রায় থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ পর্যন্ত সমস্ত মনীষীবৃন্দ জাতির উন্নয়নের পক্ষে আবশ্যিক শর্ত হিসেবে নারী শিক্ষার গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন – পুরুষ ও নারী উভয়কে শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত করে তুলতে হবে কারণ একজন ছাড়া অপরজন অসম্পূর্ণ। সুতরাং নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান বা ভূমিকা আধুনিক শিক্ষায় ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Basabi Chakrabarti, Women’s Studies: Various Aspects. Urbi Prakashani 2014
  • Betty Friedan. The Feminine Mystique. New York: Norton, 1963
  • Geraldine Forbes, Women in Modern India Cambridge University Press, 1996.
  • Mary E. John. “Women’s Studies in India: A reader” Penguin Books. 2008
  • Internet Sources

প্রশ্ন – নারী শিক্ষায় স্বামী বিবেকানন্দের দুটি অবদান লেখো

উত্তর – নারী শিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান হল – নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন, বিদ্যালয় স্থাপন ও পাঠক্রম সংস্কার।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close