স্বাধীনতার পর বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন নারী শিক্ষার জন্য গঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হল নতুন শিক্ষা নীতি বা জাতীয় শিক্ষা নীতি। নারী শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ (National Education Policy 1986 on Women Education) গুলি নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে বিশেষ সহায়তা করে।
নারী শিক্ষার জন্য গঠিত রাধাকৃষ্ণন কমিশন, মুদালিয়র কমিশন, কোঠারি কমিশন, দূর্গাবাই দেশমুখ কমিটি কমিটি উল্লেখযোগ্য। আর এদের মধ্যে অন্যতম হল ১৯৮৬ সালে গঠিত জাতীয় শিক্ষা নীতি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী দেশ ও জাতির শিক্ষার জন্য একটি নতুন শিক্ষানীতির সূচনা করেন। এটি জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP – National Policy on Education) নামে পরিচিত। ১৯৮৬ সালের মে মাসে সংসদের উভয় পক্ষের জাতীয় শিক্ষানীতি বিলটি গৃহীত হয়।
নারী শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ | National Education Policy 1986 on Women Education
নতুন শিক্ষানীতি হিসেবে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ গুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় নারী জাতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
নারী শিক্ষার বিস্তারে ১৯৮৬ এর জাতীয় শিক্ষানীতির কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ
নারীদের স্বাক্ষর করে তোলার জন্য ও তাদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করে তোলার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ করতে হবে। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে দেশে নিরক্ষরতা দূরীকরণ করা সম্ভব হবে।
2. পাঠক্রমের পুনর্বিন্যাস
নারী শিক্ষার বিস্তারে জাতীয় শিক্ষানীতি পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পুনর্গঠন এবং পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই পাঠক্রমকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে নারী শিক্ষার বিস্তার সাধন করা সম্ভব বলে এই শিক্ষানীতি মনে করেন।
তাছাড়া পাঠক্রমের মধ্যে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, সংগীত, চারুকলা, রন্ধন বিদ্যা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার অগ্রগতি সাধন করতে হবে।
3. বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার
জাতীয় শিক্ষানীতি সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মেয়েদের জন্য বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার সাধনের সুপারিশ করেছেন। অর্থাৎ বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় মেয়েরা যাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় বা অংশগ্রহণ করতে পারে তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া পেশাগত ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ বা লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ করতে হবে।
4. সমসুযোগ প্রতিষ্ঠা
নারী শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ হল সমসুযোগ প্রতিষ্ঠা করা। কারণ শিক্ষায় সমসুযোগ প্রতিষ্ঠা ছাড়া শিক্ষার প্রসার বিশেষত নারী শিক্ষার প্রসার কখনোই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ করে শিক্ষায় সমসুযোগের মাধ্যমে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের শিক্ষা বিস্তার সাধন করতে হবে।
এগুলি ছাড়াও নারী শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ সুপারিশ গুলি হল –
i) নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
ii) নারী শিক্ষার বিস্তারে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি যারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত তাদের জন্য প্রথা-বহির্ভূত শিক্ষার সম্প্রসারণ করতে হবে।
iii) শিক্ষাগত বিভিন্ন বাধা দূর করতে হবে। অর্থাৎ নারী শিক্ষার প্রসারে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাধা গুলি অপসারণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
iv) তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।
v) মেয়েদের থাকার জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার (Conclusion)
সর্বোপরি বলা যায়, নারী শিক্ষার বিস্তারে জাতীয় শিক্ষানীতির ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জাতীয় শিক্ষানীতি নারী শিক্ষার বিস্তারে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাই নারীদের নিরক্ষরতা দূরীকরণের মাধ্যমে সাক্ষরতার প্রসার ঘটানো এবং নারীদের শিক্ষার প্রাথমিক সমস্যা গুলি দূরীকরণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ গুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
তথ্যসূত্র (References)
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
- Basabi Chakrabarti, Women’s Studies: Various Aspects. Urbi Prakashani 2014
- Betty Friedan. The Feminine Mystique. New York: Norton, 1963
- Geraldine Forbes, Women in Modern India Cambridge University Press, 1996.
- Mary E. John. “Women’s Studies in India: A reader” Penguin Books. 2008
- Internet Sources
প্রশ্ন – নারী শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতি 1986 এর সুপারিশ উল্লেখ করো
উত্তর – নারী শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতির ১৯৮৬ এর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গুলি হল – শিক্ষা সমাজসুযোগ প্রতিষ্ঠা করা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি।
আরোও পড়ুন
- নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা (Important Role of Rammohan Roy in Women Education)
- নারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান (Role of Vidyasagar in Women Education)
- নারী শিক্ষায় হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ (Hansraj Mehta Committee)
- Bhaktavatsalam Committee: নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ
- Durgabai Deshmukh Committee: নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশ
- নারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান : Missionaries’ Contribution to Women Education