Share on WhatsApp Share on Telegram

মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন | Mahatma Gandhi Philosophy of Education

Join Our Channels

ভারতীয় শিক্ষাবিদ হিসেবে মহাত্মা গান্ধী বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাই মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন (Mahatma Gandhi Philosophy of Education) শিক্ষা ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করেছে।

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন রাজকোটের দেওয়ান করমচাঁদ গান্ধী এবং মাতা পুতলিবাই গান্ধী। মহাত্মা গান্ধী ধর্মপ্রাণ এবং সত্যের পূজারী ছিলেন। তিনি অহিংসা নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এই নীতির উপর ভিত্তি করে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে গিয়েছিলেন। তিনি অহিংসার নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল, সেটি অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন নামে পরিচিত ছিল। মানব কল্যাণ ছিল গান্ধীজীর জীবনের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা চিন্তা শিক্ষা ক্ষেত্রকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।

মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা চিন্তা | Mahatma Gandhi Philosophy of Education

গান্ধীজীর বলিষ্ঠ শিক্ষা দর্শন তার জীবন দর্শন দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা চিন্তা তার জীবন দর্শনের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন প্রধানত তিনটি নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। যথা –

i) ভাববাদী শিক্ষা দর্শন হিসেবে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে

ii) প্রকৃতিবাদী শিক্ষা দর্শন হিসেবে শিক্ষার গঠন নির্ধারিত হয়েছে এবং

iii) প্রয়োগবাদী শিক্ষা দর্শন হিসেবে তার শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়েছে।

মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা চিন্তার যে সমস্ত দিক থেকে প্রভাবিত করেছে, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

শিক্ষার লক্ষ্য

গান্ধীজীর মতে শিক্ষার লক্ষ্য হল দুটি, যথা –

i) শিক্ষা চরম লক্ষ্য – গান্ধীজীর মত অনুযায়ী শিক্ষার চরম লক্ষ্য হলো ব্যক্তির আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধন। তাই তিনি বলেছেন – শিক্ষার লক্ষ্য হল শিশুর দেহ, মন, আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা।

ii) শিক্ষার তাৎক্ষণিক বা আপাত লক্ষ্য – শিক্ষার তাৎক্ষণিক বা আপাত লক্ষ্য সম্পর্কে বলেছেন এই লক্ষ্য হলো বহুবিধ এবং এগুলি জীবনের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার আপাত লক্ষ্যের মধ্যে যে সমস্ত লক্ষ্য গুলি বর্তমান ও সম্পর্কযুক্ত, সেগুলি হল –

  • ব্যক্তির চারিত্রিক বিকাশ সাধন,
  • বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান বা স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা,
  • কৃষ্টিমূলক বা সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন,
  • শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তি কেন্দ্রিক এবং সমাজ কেন্দ্রিক। অর্থাৎ এর মাধ্যমে ব্যক্তির উন্নতির সাথে সাথে ব্যক্তিকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

শিক্ষার পাঠক্রম

শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে গান্ধীজি বাস্তবমুখী বা ব্যবহারিক পাঠক্রমের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বলেন – পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীদের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীদের সমাজ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে তিনি তার বুনিয়াদি শিক্ষা চিন্তায় হস্তশিল্পের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

এছাড়া শিক্ষার পাঠক্রম হিসেবে গান্ধীজি যে সমস্ত বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন, সেগুলি হল –

সাধারণ শিক্ষার পাঠক্রম হিসেবে –

  • ভাষা শিক্ষা,
  • গণিত,
  • সমাজবিজ্ঞান (ইতিহাস, ভূগোল, পৌর বিজ্ঞান, অর্থনীতি),
  • সাধারণ বিজ্ঞান (প্রকৃতি পাঠ, জীববিদ্যা, শারীর বিদ্যা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান),
  • সংগীত,
  • চারুশিল্প,
  • শরীর চর্চা এবং

গান্ধীজীর বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনায় ব্যবহারিক শিক্ষা বা বৃত্তিশিক্ষার পাঠক্রম হিসেবে – সুতো কাটা, তাঁত বোনা, কৃষি কাজ, কাঠের কাজ, কাগজের কাজ প্রভৃতি ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

শিক্ষণ পদ্ধতি বা শিক্ষাদান পদ্ধতি

শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে গান্ধীজি নতুন এক শিক্ষা পরিকল্পনার কথা বলেন। যেটি বুনিয়াদি শিক্ষা নামে পরিচিত। ১৯৩৭ সালে তিনি বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি এই শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষাদান করার কথা বলেন। অর্থাৎ তিনি কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ভাবনার বাস্তব উপযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে শিশুদের শিক্ষার জন্য কর্মকেন্দ্রিক ও শিল্প কেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা কথা বলেন।

শিক্ষকের ভূমিকা

গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শনের শিক্ষকের ভূমিকা হবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। অর্থাৎ শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাছাড়া শিক্ষকের ভূমিকা হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ সাধন করা।

তাই শিক্ষকের ভূমিকা সম্পর্কে গান্ধীজী আরো বলেন – শিক্ষক হবেন আদর্শ, অনন্ত জ্ঞানের আধার এবং ত্যাগের মধ্যে দীক্ষিত। তাই শিক্ষকের আদর্শ চরিত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের বিকাশ, ভক্তি ও ঈশ্বরের প্রতি কর্তব্যবোধ জাগ্রত হবে।

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন এর মধ্যে অন্যতম দিক হল বুনিয়াদি শিক্ষা। যেটি শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Education in India-Past-Present-Future, Vol. I and II, J. P. Banerjee
  • Landmarks in the History of Modern Indian Education, J. C. Aggarwal
  • Internet Sources

প্রশ্ন – মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন কি ছিল?

উত্তর – মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দর্শন তিনটি প্রধান দার্শনিক মতবাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল। যথা – শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ভাববাদ, প্রকৃতিবাদ এবং শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে প্রয়োগবাদ শিক্ষা দর্শন।

প্রশ্ন – মহাত্মা গান্ধী কোথায় তাঁর শিক্ষা দর্শন এর ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য আশ্রম তৈরি করেন?

উত্তর – মহাত্মা গান্ধী সবরমতী নদীর তীরে (আহমেদাবাদ) তাঁর শিক্ষা দর্শন এর ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য আশ্রম তৈরি করেন। এই আশ্রমটি সবরমতী আশ্রম নামে পরিচিত।

প্রশ্ন – ভারতের জাতির জনক কে?

উত্তর – ভারতের জাতির জনক গান্ধীজিকে বলা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন – গান্ধীজির পুরো নাম কি?

উত্তর – গান্ধীজীর পুরো নাম হল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

Mr. Debkumar – Author and Founder of Edutiips.com

A dedicated educator with 10+ years of teaching experience, UGC NET Qualified, and holder of MA, B.Ed, and M.Phil in Education (University of Calcutta).

He has authored several books published by Aheli Publication, such as Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

He is also an active contributor on Quora, where he shares expert insights on education, history, and social issues.

Leave a Comment

close