নারী শিক্ষার সংজ্ঞা | নারী শিক্ষার গুরুত্ব | Importance of Women Education

নারীরা সমাজের একটি অন্যতম অংশ। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই নারী শিক্ষার গুরুত্ব (Importance of Women Education) আধুনিক সামাজিক বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য।

যে সমাজে শিক্ষার হার নিম্নমুখী বা নারী শিক্ষার হার নিম্নমুখী সেই সমাজের অগ্রগতিও নিম্নমুখী। কারণ শুধুমাত্র পুরুষ জাতি শিক্ষিত হলে সমাজের অগ্রগতি সম্ভবপর নয়। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষার আবশ্যিকতা বিভিন্ন মনীষী থেকে শুরু করে সরকারিভাবে স্বীকার করা হয়েছে। অর্থাৎ সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য।

নারী শিক্ষার সংজ্ঞা

নারী শিক্ষাকে নারীদের আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রদত্ত এক ধরনের জ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হয়। এই জ্ঞান আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার আকারে হতে পারে।

অর্থাৎ নারী শিক্ষা হল নারীদেরকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা।

তাই যে শিক্ষার মাধ্যমে নারীদেরকে শিক্ষিত করা ও তাদেরকে জীবন বিকাশের সহায়তা করা হয়, তাকে বলা হয় নারী শিক্ষা।

নারী শিক্ষার সংজ্ঞায় Bhasin (1992) বলেছেন – নারী শিক্ষা হল নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও স্বাধীন করে গড়ে তোলা। (Women’s education is for making women to become economically independent and self-reliant.)

আবার, Osuata (1987) বলেছেন – Women as mothers, are educators within their families, what they learn, they pass on to their children and their future generations.

নারী ছাড়া সমাজকে কল্পনা করা যায় না। তাই শিশুর উপযুক্ত জীবন বিকাশে শিক্ষক এবং সমাজের থেকে নারীদের অবদান সব থেকে বেশি।

এই কারণে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জর্জ হাবার্ট বলেছিলেন – একজন শিক্ষিত মা ১০০ জন শিক্ষকের সমান। তাই নারী শিক্ষার আবশ্যিকতা বা গুরুত্ব বিশেষভাবে বর্তমান।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব | Importance of Women Education

প্রাচীনকালে নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ না করা হলেও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও প্রগতিশীল সমাজে নারী শিক্ষার আবশ্যিকতাকে স্বীকার করা হয়েছে। অর্থাৎ নারী শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতি সম্ভব তা বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়।

তাই পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের শিক্ষিত করে তুললে সমাজের অগ্রগতি দ্রুত সম্ভব। নারী শিক্ষার গুরুত্ব যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি

নারী শিক্ষার মাধ্যমে নারী শিক্ষার হার দূরীকরণ করা বা নারী শিক্ষা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

2. জাতির অগ্রগতি

নারী শিক্ষা মাধ্যমে জাতির অগ্রগতি সম্ভব হয়। তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন – একটি ডানার সাহায্যে যেমন পাখি আকাশে উড়তে পারে না। তেমনি কেবলমাত্র পুরুষ জাতি শিক্ষিত হলে কোনো সমাজ চলতে পারে না।

তাই জাতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার আবশ্যিকতা রয়েছে। অর্থাৎ নারী শিক্ষা যত বৃদ্ধি পাবে জাতির অগ্রগতি তত বেশি করে সম্পন্ন হবে।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে গ্রীক যোদ্ধা Napoleon বলেছেন – “Give me a few educated mothers; I shall give you a heroic race.” অর্থাৎ “আমাকে কয়েকটা শিক্ষিত মা দাও; আমি তোমাকে বীরের জাতি দেব।”

3. নারীর ক্ষমতায়ন

নারী শিক্ষার গুরুত্ব হল নারীর ক্ষমতায়ন। কারণ নারীরা সুশিক্ষিত না হলে নারীর ক্ষমতায়ন কোনদিন সম্ভব নয়। তাই সমাজের সর্বস্তরের নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায় না আবশ্যিক। অর্থাৎ নারী শিক্ষার গুরুত্ব হল নারীর ক্ষমতায়ন মাধ্যমে সমাজের উন্নতিকরন।

4. আর্থিক স্বচ্ছলতা

নারীদেরকে উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ নারী শিক্ষার মধ্য দিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন করা সম্ভব করা হয়। কারণ আর্থিকভাবে নারীরা যত বেশি এগিয়ে থাকবে সমাজের উন্নতি তত বেশি সাধিত হবে। তাই আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

5. সমাজ গঠনে সহায়তা

কেবলমাত্র সুশিক্ষিত নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে পারে। যেমন – রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি। অর্থাৎ নারী শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ গঠনে সহায়তা করা সম্ভব হয়। তাই এদিক থেকে নারী শিক্ষার গুরুত্ব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

6. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি

নারী শিক্ষার গুরুত্ব হল শিক্ষার মধ্য দিয়ে নারীদেরকে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা। কারণ যত বেশি কর্মসংস্থান হবে মহিলারা ততো বেশি আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী হতে পারবে। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার আবশ্যিকতা রয়েছে।

7. সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ

সমাজের বিভিন্ন সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ সমাজে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস সমাজকে অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই উপযুক্ত নারী শিক্ষার মধ্য দিয়ে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা বা দুর্নীতি দূর করা সম্ভবপর হয়। এক্ষেত্রে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

8. নিরাক্ষরতা দূরীকরণ

নিরক্ষরতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। যতদিন নারীরা নিরক্ষর থাকবে ততদিন তারা নিজেদের উন্নতি করতে পারবে না। তাই নারী শিক্ষার মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণ করা সম্ভব হয়।

9. নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা বৃদ্ধি

নারী শিক্ষার মাধ্যমে নারীদেরকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব করা হয়। কারণ সুশিক্ষিত নারীরাই উপযুক্ত নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

10. লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ

বিভিন্ন সমাজে পুরুষ ও নারী ভেদাভেদ বা লিঙ্গবৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। তাই নারী শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমাজের মধ্যে এই লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ করা। আর এটি সম্ভবপর নারী শিক্ষার মাধ্যমে বা নারী সচেতনতার মাধ্যমে। তাই নারী শিক্ষার গুরুত্ব হল লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ করা।

11. বাল্যবিবাহ রোধ

সমাজের একটি প্রধান ব্যাধি হল বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের উন্নতি সম্ভবপর নয়। কারণ স্বামীর ঘরে তাদের সারা জীবন বদ্ধ জীবের মতো কাটাতে হয়।

তাই উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে এই সামাজিক ব্যাধি বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভবপর হয় এবং মেয়েদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা যায়। তাই নারী শিক্ষার গুরুত্ব হল বাল্যবিবাহ রোধ করা।

12. শিশু মৃত্যুর হার কমানো

বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে শিশু মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হল নিরক্ষরতা বা নারীদের নিরক্ষরতা। কারণ নারী শিক্ষা বৃদ্ধির ফলে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হয়। তাই শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীদের মাধ্যমে সমাজের অবগতির সম্ভবপর হয়। তাই নারী শিক্ষা সমাজকে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

নারী শিক্ষায় রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকানারী শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
নারী শিক্ষা বিষয়ে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষা সংক্রান্ত হংসরাজ মেহেতা কমিটির সুপারিশ
নারী শিক্ষায় দূর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটির সুপারিশনারী শিক্ষায় মিশনারীদের অবদান

উপসংহার (Conclusion)

সর্বোপরি বলা যায়, যে কোনো দেশের সার্বিক বিকাশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্তমান। অর্থাৎ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক এবং পরিবারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য।

সুতরাং নারী শিক্ষার মাধ্যমে নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। যেমন – শিল্প-বাণিজ্য, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি।

তাই বিবেকানন্দের ভাষায় বলতে হয় – ৫০০ পুরুষের সাহায্যে ভারতবর্ষ জয় করতে যতদিন না সময় লাগবে ৫০০ নারীর সাহায্যে তা কয়েকদিনের মধ্যেই সম্ভবপর হবে। তিনি আরো বলেন – পৃথিবীতে সব জাতি নারীদেরকে পূজা করেই বড় হয়েছে। তাই যে জাতি নারীদেরকে পূজা করেনি সে জাতির উন্নতি কখনোই সম্ভবপর হয়নি। সুতরাং বলা যায় নারী শিক্ষার উন্নতি ছাড়া সমাজে অগ্রগতি কখনোই সম্ভব নয়।

তথ্যসূত্র (References)

  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1
  • Basabi Chakrabarti, Women’s Studies: Various Aspects. Urbi Prakashani 2014
  • Betty Friedan. The Feminine Mystique. New York: Norton, 1963
  • Geraldine Forbes, Women in Modern India Cambridge University Press, 1996.
  • Mary E. John. “Women’s Studies in India: A reader” Penguin Books. 2008
  • Internet Sources

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close