প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার পার্থক্য (20 Differences Between Formal and Non-formal Education)

শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথাগত শিক্ষা ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা (Formal and Non-formal Education) হল অন্যতম।

শিক্ষার বিভিন্ন রূপের মধ্যে প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার রূপ। এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। প্রত্যেক শিক্ষাব্যবস্থার নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্তমান। এদিক থেকে এই দুই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার অঙ্গ হলেও এই দুই শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য বর্তমান। এখানে প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার পার্থক্য (Formal and Non-formal Education) আলোচনা করা হল।

প্রথাগত শিক্ষা (Formal Education)

যে শিক্ষার নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন পরিলক্ষিত হয় ও যে শিক্ষা বিদ্যালয়ের চার দেওয়াল মধ্যে সীমাবদ্ধ তাকে প্রথাগত শিক্ষা বলে। এই শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হল – বিদ্যালয়। অর্থাৎ বিদ্যালয় হল প্রথাগত শিক্ষা বা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার এমন একটি মাধ্যম যেখানে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শিক্ষাদান কার্য সুসম্পন্ন হয়।

তাই সমাজ দ্বারা নির্ধারিত ও নির্বাচিত যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কঠোর ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে, সুনির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুসরণ করে যে বিশেষ শিক্ষাদান সম্পন্ন করা হয়, তাকে প্রথাগত শিক্ষা বলে। এই শিক্ষার আবার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বা বিধিবদ্ধ শিক্ষা নামেও পরিচিত

প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা (Non-Formal Education)

যে শিক্ষা ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই, নির্দিষ্ট কোন শিক্ষক থাকে না এবং বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না হয়ে কোন নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক নিয়ন্ত্রণে থাকে ও শিক্ষাদান কার্য সম্পন্ন হয় তাকে প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা বলে।

প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার বিভিন্ন রূপ বর্তমান, সেগুলি হল – দূরাগত শিক্ষা, মুক্ত শিক্ষা প্রভৃতি।

আরোও পোস্ট পড়ুন – Click Here Now

প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার পার্থক্য (20 Differences Between Formal and Non-formal Education)

প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা (Formal and Non-formal Education)-র মধ্যে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বর্তমান, সেগুলি হল –

বিষয়প্রথাগত শিক্ষা (Formal Education)প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা (Non-Formal Education)
সংজ্ঞাবিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জে.পি নায়েক বলেছেন – সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত হয়, তাকে নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষা বলে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জে. পি. নায়েক বলেছেন – প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা হল এমন এক সংগঠিত শিক্ষা প্রক্রিয়া যা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বাইরে সংঘটিত হয়। এই শিক্ষার উপাদানগুলি নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার থেকে কম নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উদ্দেশ্যপ্রথাগত শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি হল –
১. নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রদান করা,
২. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখা,
৩. নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা স্থাপন,
৪. নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতার পরিমাপ।
প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি হল –
১. বিদ্যালয় ছুট শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় সহায়তা প্রদান,
২. আর্থিক দিক থেকে অনুন্নত শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ,
৩. প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা,
৪. গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
নিয়ম কানুনএই শিক্ষার নিয়ম-কানুন কঠোর প্রকৃতির হয়ে থাকে।এই শিক্ষার নিয়ম কানুন নমনীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে।
বয়সএই শিক্ষা নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ।এই শিক্ষার নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমা নেই।
শিক্ষাদান পদ্ধতিএই শিক্ষায় শিক্ষাদান পদ্ধতি শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত হয়। অর্থাৎ এটি প্রত্যক্ষ নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতিএই শিক্ষায় শিক্ষাদান পদ্ধতি স্বয়ং শিখন প্রকৃতির। অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে নিজের চেষ্টায় জ্ঞান অর্জন করতে হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া এখানে পরিলক্ষিত হয় না।
শিক্ষার্থীর সংখ্যাএই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট থাকে। প্রথা বহির্ভূত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনির্দিষ্ট।
শিক্ষা কালএই শিক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই শিক্ষার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। অর্থাৎ এই শিক্ষা সারা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।
শিক্ষার ধরনএই শিক্ষা সংকীর্ণ প্রকৃতির বা এটি সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়।এই শিক্ষা ব্যাপক প্রকৃতির বা এটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
খরচএই শিক্ষা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এই শিক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
মূল্যায়নএই শিক্ষার নির্দিষ্ট সময় অন্তর মূল্যায়ন ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়।এই শিক্ষার কোন মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকে না।
ডিগ্রী প্রধানএই শিক্ষায় শিক্ষার শেষে শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট বা ডিগ্রী লাভ করে থাকে। এই শিক্ষায় শিক্ষা কেন্দ্রগুলি শিক্ষার শেষে সার্টিফিকেট প্রদান করে।
পাঠক্রমএই শিক্ষা পূর্বনির্ধারিত পাঠক্রম অনুসরণ করা হয়।এই শিক্ষায় পূর্বনির্ধারিত কোন পাঠক্রম থাকে না বা অনুসরণ করা হয় না।
শিক্ষার স্থানএই শিক্ষা সম্পন্ন হয় বিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যে বা নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে। এই শিক্ষার নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তবে বিভিন্ন স্টাডি সেন্টার বর্তমান।
শৃঙ্খলাএই শিক্ষায় শৃঙ্খলা কঠোর প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই শিক্ষায় শৃঙ্খলা অপেক্ষাকৃত নমনীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে।
শিক্ষা সংগঠনপ্রথাগত শিক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষা সংগঠন থাকে।এখানে সুনির্দিষ্ট শিক্ষা সংগঠন থাকে না।
পরিধিএই শিক্ষার পরিধি সংকীর্ণ প্রকৃতির। এই শিক্ষার পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
শিক্ষকএই শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষাদান কার্যসম্পন্ন হয়।এই শিক্ষায় শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সংঘটিত হয় না। ফলে শিক্ষকের প্রয়োজন নেই বললেই চলে।
প্রশাসনপ্রথাগত শিক্ষায় প্রশাসনিক জটিলতা বা কঠোর প্রশাসন ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়।প্রথা বহির্ভূত শিক্ষায় প্রশাসনিক জটিলতা থাকে না। কারণ এটি মুক্ত প্রকৃতির।
শিক্ষা পরিকল্পনাএই শিক্ষার জন্য পূর্ব পরিকল্পনার দরকার পড়ে। অর্থাৎ এই শিক্ষা পূর্ব পরিকল্পিত। এই শিক্ষার ক্ষেত্রে পূর্ব পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না।
সংস্থাপ্রথাগত শিক্ষার অন্যতম সংস্থা হল – বিদ্যালয়।প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার সংস্থা হল – মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও দূর শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।
নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ও অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Formal and Informal Education)

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা, 2 টি সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যব্যাপক অর্থে শিক্ষার ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাববাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাবপ্রয়োগবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
বাস্তববাদ বা বস্তুবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব প্রকৃতিবাদের ধারণা, সংজ্ঞা, মূলনীতি ও শিক্ষায় প্রভাব
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা : ধারণা, সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার চারটি স্তম্ভ
প্রথাগত বা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কি | নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য | প্রথাগত শিক্ষার সুবিধা ও অসুবিধাঅনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কি | অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা (Formal and Non-formal Education)-র মধ্যে পার্থক্য থাকলেও দুই শিক্ষাব্যবস্থা পরিপূরক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর শিক্ষার ক্ষেত্রে বা জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে প্রথাগত শিক্ষা ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা এই দুই ধরনের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্তমান। তাই প্রথাগত ও প্রথা বহির্ভূত শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছে দুই শিক্ষা ব্যবস্থা সমান গ্রহণযোগ্য।

তথ্যসূত্র (References)

  • V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
  • Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
  • Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
  • Internet sources

প্রশ্ন – প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা কাকে বলে?

উত্তর – যে শিক্ষা কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না বা বাইরের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা এবং শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে তাকে প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা বলে।

প্রশ্ন – প্রথাগত শিক্ষা কাকে বলে?

উত্তর – সমাজ দ্বারা নির্ধারিত যে সামাজিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুনির্দিষ্ট নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে, সুনির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুসরণ করে যে বিশেষ শিক্ষাদান সম্পন্ন করা হয়, তাকে প্রথাগত শিক্ষা বলে।

আরোও পড়ুন

Leave a Comment

close