Share on WhatsApp Share on Telegram

শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা | Relationship Between Education and Culture

Join Our Channels

শিক্ষা হল অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। শিক্ষার মাধ্যমে এক প্রজন্মের সংস্কৃতি অন্য প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে থাকে। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক (Relationship Between Education and Culture) ঘনিষ্ঠ প্রকৃতির।

তাহলে এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি সাংস্কৃতিক ধারা বজায় রাখে। অর্থাৎ বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক।

শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক | Relationship Between Education and Culture

সংস্কৃতি বলতে বোঝায় জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, শ্রেণিবিন্যাস, ধর্ম, সময়ের ধারণা, স্থানিক সম্পর্ক।

সমাজবিদ্‌ বোগারডাস (Bogardus) বলেছেন – সংস্কৃতি মানব গোষ্ঠীর সমন্বিত রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং বর্তমান আচরণের নিদর্শনগুলির সমন্বয়ে গঠিত।

শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক বর্তমান। অর্থাৎ শিক্ষার সাথে সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে কোনো সমাজের শিক্ষাব্যবস্থা তার সংস্কৃতিতে স্পষ্ট প্রভাব ফেলে। শিক্ষার সাথে সংস্কৃতি যে সমস্থ দিক থেকে পারস্পরিক ভাবে সম্পর্কিত তা হল –

1. শিক্ষার লক্ষ্য ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতি শিক্ষার লক্ষ্য নির্ণয়ের সাহায্য করে। অর্থাৎ শিক্ষার লক্ষ্য কি হবে তা কোন এলাকার সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ ভূমিকা বর্তমান। এদিক থেকে শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরস্পর পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কিত।

2. শিক্ষার পাঠক্রম ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতি শিক্ষার পাঠক্রমকে প্রভাবিত করে। তাই শিক্ষা পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানুষের সংস্কৃতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। সুতরাং সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন প্রভৃতি শিক্ষার পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই সমাজের বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা, আদর্শ, প্রথা, মূল্যবোধ প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে পাঠক্রম গড়ে ওঠে।

3. শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতি শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থীরা থাকে। ফলে শিক্ষকের বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিতিকরনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন সূচিত হয়। তাই সংস্কৃতি শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে বিশেষভাবে তুলে ধরে।

4. শিক্ষার কাঠামো ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতি প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষার কাঠামো এবং সংস্কৃতির বন্ধনকে যুক্ত করে। দেশ কাল ভেদে প্রতিটি সংস্কৃতির বিভিন্ন ধরনের অনন্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। তাই শিক্ষার কাঠামো দেশীয় সংস্কৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে রচিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো শিক্ষার কাঠামো সংস্কৃতি দ্বারা অধিকাংশে নির্ধারণ হয়ে থাকে।

5. শিক্ষায় শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতি

শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সংস্কৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষায় মুক্ত শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতা নীতি গৃহীত হয়েছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির। তাই সংস্কৃতি শিক্ষায় শৃংখলার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক নীতি পরিলক্ষিত হয়।

এগুলি ছাড়াও শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক আরো সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

i) বিদ্যালয়ের কার্যাবলী বা বিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ সংস্কৃতি দ্বারা অধিকাংশ ভাবে প্রভাবিত হয়।

ii) শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষার মাধ্যমে সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন হয়ে থাকে। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের মধ্যে সম্পর্কিত।

iii) শিশু সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তেমনি সংস্কৃতি শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। অর্থাৎ শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে শিশুর সামাজিকীকরণের পথ সুগম হয়।

iv) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও সংস্কৃতি যৌথভাবে কাজ করে। অর্থাৎ শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করা। এক্ষেত্রে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে উচ্চ সংস্কৃতিবান বা সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ব্যক্তিত্ব বিকাশের সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক গভীর।

উপসংহার (Conclusion)

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ। অর্থাৎ শিক্ষা যাবতীয় নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সংস্কৃতির ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ঠ্য ও শিক্ষাগত তাৎপর্যসামাজিক গোষ্ঠীর ধারণা, সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকাশিশুর সামাজিকীকরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

তথ্যসূত্র (Reference)

  • Brown, F. J. (1954). Educational Sociology. New York: Prentice-Hall.
  • Bhattacharjee, Srinivas. (1996). Philosophical & Sociological Foundation of Education. Herald book service.
  • Das, P. (2007). Sociological Foundation of Education. New Delhi: Authorspress
  • Shukla, S & K Kumar. (1985). Sociological Perspective in Education. New Delhi, Chanakya
    Publications
  • Sodhi, T.S & Suri, Aruna. (1998). Philosophical & Sociological Foundations of Education, H.P Bhargav Book House, Agra,

প্রশ্ন – শিক্ষায় সংস্কৃতি ও এর গুরুত্ব?

উত্তর – শিক্ষায় সংস্কৃতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষার মাধ্যমে প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই শিক্ষা সংস্কৃতির গুরুত্ব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।

আরোও পড়ুন

Rate this post

Author Photo

Mr. Debkumar – Founder of Edutiips.com

A teacher and author of several books published by Aheli Publication, including Communication Skills, Aspect of Democratic Citizenship, Sociological Foundation of Education, Computer Applications, Fundamentals of Education, Educational Organization and Planning, and Educational Research.

Leave a Comment

close